ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি জোটকেই নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক-মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি জোটকেই নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক-মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ অব্যাহত হরতাল-অবরোধে পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরসহ চলমান নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। তবে এ ক্ষতিপূরণ সরকার নয়, হরতাল-অবরোধ আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলগুলোকেই দিতে হবে। এজন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির জন্য যারা দায়ী তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং অবহেলাজনিত দুর্ঘটনার কারণে কোন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করলে তিনি কত টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হবেন সে বিষয়ে একটি আইন করারও সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ ও তাগিদ দেয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি মুন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক, মোঃ ইসরাফিল আলম, আনোয়ারুল আবেদীন খান, ছবি বিশ্বাস, শিরীন আখতার, মোঃ রুহুল আমিন এবং রেজাউল হক চৌধুরী অংশ নেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইন শিপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল-অবরোধে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি, কিছু কারখানার শ্রমিকরা সময়মতো মজুরি না পাওয়ার বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দফতরগুলোর গৃহীত ব্যবস্থা এবং বাটা সু-কোম্পানির শ্রমিক ছাঁটাই বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় কমিটির সদস্যরা হরতাল-অবরোধে বিভিন্নস্থানে সংঘটিত নাশকতায় হতাহত শ্রমিকদের পরিবারের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, এসব শ্রমিকরা ছিলেন তাদের পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি। নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এসব পরিবার এখন চরম দুর্দশায় পতিত হয়েছে। সন্তান-সন্ততি নিয়ে অনেকের তিন বেলা খাবারই জুটছে না। সরকারের উচিত দুর্দশাগ্রস্ত এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। বেশ কয়েকজন সদস্য সঙ্গে সঙ্গেই এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য যারা দায়ী তাদেরই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকার কেন দেবে? তারা হরতাল-অবরোধকারীদের কাছ থেকে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারকে জোর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেন। এ বিষয়ে কমিটির সদস্য শিরীন আখতার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, যারা হরতাল-অবরোধে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করছে, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া ও পরিমাণের বিষয়টিও আইনে সুনির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছে। এদিকে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল-অবরোধে শ্রমিক পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯ জন শ্রমিককে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। মালিক পক্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম, পণ্য বিপণন ও পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ডরমেটরি নির্মাণের সুপারিশ করেছে কমিটি। একইসঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে প্রণয়ন করা আইনটিকে যথাযথ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
×