ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিষেকের অপেক্ষায় ছয় টাইগারের দৃষ্টি!

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অভিষেকের অপেক্ষায় ছয় টাইগারের দৃষ্টি!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চেনা প্রতিপক্ষের চেয়ে অচেনা প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করা কঠিন। এ কারণে একটা চমক উপহার দেয়ার গোপন বাসনা তো ছিলই। সে কারণেও প্রায় আনকোরা নবীনদের নিয়ে দল গড়েছে বাংলাদেশ। এবার নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৬ জনের অভিজ্ঞতা আছে বিশ্বকাপ খেলার। বাকি ৯ ক্রিকেটারই এবার প্রথম বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন। যার মধ্যে আবার অনেকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও অনেক কম। এবার প্রথম বিশ্বকাপ এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি ও আল আমিন হোসেনের। বিশ্বকাপ অভিযানে নামার আগে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জানিয়েছেন তরুণদের ওপর বিশেষ আস্থা রাখছেন তিনি। আজ সেই আস্থার প্রমাণ দেয়ার দিন তরুণদের জন্য। বিশ্বকাপ অভিষেক হওয়ার পথে এগিয়ে আছেন ওপেনার এনামুল, মুমিনুল, দুই অলরাউন্ডার সৌম্য ও নাসির এবং পেসার তাসকিন, স্পিনার তাইজুল। এ ছয় ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দলের সাফল্য। এবার আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের অভিষেক হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপে। সে দিক থেকে সব ক্রিকেটারেরই প্রথম বিশ্বকাপ। মর্যাদার এ আসরে অন্যরকম এক উত্তেজনা আর উন্মাদনা কাজ করে সবার মধ্যেই। সেদিক থেকে আফগানদের পরই বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রথম অবতীর্ণ হওয়া ক্রিকেটারের পরিমাণ সর্বাধিক বাংলাদেশ দলে। নতুনরা কেতন উড়াতে পারবেন তো? এবার দলটা তরুণ নির্ভর করে গঠন করা হয়েছে চমক তৈরির একটা সুপ্ত বাসনা থেকে। কারণ তাদের সম্পর্কে প্রতিপক্ষরা খুব বেশি ওয়াকিবহাল নয়। সে কারণে নিজেদের মেলে ধরার একটা সুযোগ থাকে। তবে এক্ষেত্রে এনামুল, মুমিনুল ও নাসির কিছুটা পুরনোই বলা চলে। আগের বিশ্বকাপ না খেললেও গত চার বছরের মধ্যে এ তিন ক্রিকেটার অনেক ওয়ানডে খেলেছেন। তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নাসির। তিনি ৪১ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উত্থান ঘটে নাসিরের। ওই সময় লেট মিডল অর্ডারে নেমে দুর্দান্ত কিছু ইনিংস ধারাবাহিকভাবে উপহার দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১২ এশিয়া কাপেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন নাসির। নিজেকে বাংলাদেশর দলের ‘ফিনিশার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তবে গত বছর দলের টানা পরাজয়ের গ্লানি যখন পিছু ছাড়ছিল না সে সময় নাসিরও নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। দল থেকেও ছিটকে গিয়েছিলেন। এমনকি বছরের শেষ সিরিজে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে নিজেদের ফিরে পাওয়া বাংলাদেশ দলেও ঠাঁই হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ কিছু ইনিংস খেলে আবারও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে জায়গা করে নেন বিশ্বকাপ দলে। এবার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপে নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ। ৪১ ওয়ানডেতে ৩৪.৮০ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৬ হাফ সেঞ্চুরিসহ তিনি করেছেন ১০৪৪ রান। নাসিরের পরই অভিজ্ঞতায় প্রায় সমানে-সমান এনামুল-মুমিনুল। অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবালের জুটি হিসেবে প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন ২২ বছর বয়সী এনামুল। ২০১২ সালে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ানডের অভিষেক সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। এরপর ২৭ ওয়ানডে খেলেছেন, করেছেন ৩৫.৬৮ গড়ে ৩টি শতক ও ৩টি অর্ধশতকসহ ৮৯২ রান। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এ তরুণের। যুব বিশ্বকাপ খেলে করেছিলেন সর্বাধিক রান। সে দিক থেকে এ ওপেনারের ওপর বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে দলের। অপরদিকে, ২৩ বছর বয়সী মুমিনুল টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিভাধর হিসেবে প্রমাণ করলেও ওয়ানডেতে এখনও সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তবে ২৪ ওয়ানডে খেলে ২৫.৬৬ গড়ে তিনটি অর্ধশতকসহ করেছেন ৫৩৯ রান। ওয়ানডাউনের অন্যতম ভরসা তিনি। এ তিনজনের সঙ্গে আজ আফগানদের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ অভিষেক হতে পারে তরুণ অলরাউন্ডার সৌম্যের। ঘরোয়া ক্রিকেটে টপঅর্ডারে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোর পাশাপাশি বোলিংয়েও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন তিনি। গত ডিসেম্বরেই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছে সৌম্যের। ওই ম্যাচে তিনি অবশ্য মাত্র ২০ রান করেছেন। পেস বোলিংয়ে মাশরাফির যোগ্য সঙ্গী হিসেবে তরুণ তাসকিনকে বিবেচনা করছেন অনেকে। স্কোয়াডের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার তাসকিনের বয়স ১৯। গত জুনে ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক হওয়ার পর তিন ওয়ানডে খেলেছেন, তবে ইনজুরির কারণে ছিলেনা জিম্বাবুইয়ে সিরিজে। চোট কাটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল নৈপুণ্য দেখানোই শুধু নয় ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেকেই ২৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করার কারণে মাশরাফির যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তাসকিনকে। তিনিও বিশ্বকাপ অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন। স্পিনার তাইজুল এক বিস্ময়ের নাম। তিনি ওয়ানডে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে ওয়ানডের নতুন ইতিহাস রচনা করেন। একাধারে টেস্ট ও ওয়ানডেতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে তিনি এখন বিশ্বকাপ মঞ্চে ঘূর্ণিজাল বিস্তারের অপেক্ষায়। এ তরুণদের ওপর অনেক আস্থা অধিনায়ক মাশরাফির। দলের সাফল্যের চাবিকাঠি তরুণ ক্রিকেটাররাই। ইনজুরির কারণে গত বিশ্বকাপ খেলতে না পারা মাশরাফি এবার দলনেতা হিসেবে তরুণদের জ্বলে ওঠার প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন। তিনি আগেই বলেছিলেন, ‘আমি তরুণদের ওপর আস্থা রাখছি। ওরাই ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দিতে পারে।’
×