ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপুষ্ট নারী ও শিশু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অপুষ্ট নারী ও শিশু

পুষ্টিহীনতার প্রকোপ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে দেশের নারী সমাজের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমছে। তাতে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। একই সঙ্গে খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যাও কমছে। অপুষ্টির করাল গ্রাসে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুমুখী হওয়া নারী ও শিশুর সংখ্যা কমে আসছে। অনাহার আর অর্ধাহারে দিনাতিপাত করার যুগ ফুরিয়ে গেছে প্রায়। মঙ্গা থেকে মুক্ত আজ দেশ। মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বাড়ায় মানুষ আর এখন খাদ্যহীনতায় কাটায় না। ফলে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। পুষ্টিক্ষেত্রেও হয়েছে যথেষ্ট উন্নতি। আর এ ব্যাপারে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশ থেকেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে দেশ যথেষ্ট নিরাপত্তায় রয়েছে। কোন বেলা ‘উপোস’ থাকার দিন আর নেই। পছন্দের খাবার খেতে পারার মতো অবস্থাও তৈরি হয়েছে। শুধু এক-দুই বেলা ভাত খেয়ে থাকার পরিস্থিতিও অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি : ২০১৩ নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে উঠে আসা তথ্যে দেখা গেছে, ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩তে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০১২তে এই হার ছিল শতকরা ৪ জন। ২০১৩তে এ হার কমে দাঁড়ায় শতকরা ২ জনে। মূলত দেশে গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের ফলে নারীর পুষ্টির অবস্থার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছে। এর কারণ আয় বৃদ্ধি। কৃষি ও অকৃষি উভয় পেশায় শ্রমিকের মজুরির হার বাড়ার ফলে অনাহার-অর্ধাহারের জীবন লুপ্ত হয়ে গেছে। ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতায় চিকিৎসাসুবিধা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি জিঙ্ক গ্রহণের আনুপাতিক হার বাড়ায় অসুস্থতামুক্ত জীবন গড়ে উঠছে। দারিদ্র্য, খাদ্যাভাব, আয়ের সংস্থান না থাকা ইত্যাকার কারণে দেশের নারীসমাজ বিশেষত দরিদ্র নারীরা অনাহারে, অর্ধাহারে বা মঙ্গাক্রান্ত হওয়ার কারণে করুণ জীবনযাপনসহ আগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। এই পরিস্থিতি বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দেশের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩৫ শতাংশের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। ফলে এরা খর্বকায় হয়ে পড়ছে। এই ধরনের শিশুর সংখ্যা কমেছে ১০ শতাংশ। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই চার বছরে দেশে খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যা হ্রাসের পেছনে রয়েছে পুষ্টিকর খাদ্যের অবদান। ২০১৩ সালে খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ লাখ। তবে দেশের হাওড় এলাকায় সবচেয়ে বেশী খর্বাকৃতি শিশু। এই হার ৪৫ শতাংশ এবং এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিশু অপুষ্ট। আবার উত্তরাঞ্চলে দেশের সবচেয়ে বেশি শিশু কৃশকায়। দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাওয়ার জন্য প্রাণান্তকর শ্রম দিলেও তা যোগাড় করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। তদুপরি পুষ্টিকর খাদ্য সংগ্রহও দুরূহ। কিন্তু অবস্থার গুণগত পরিবর্তন ঘটছে। মানুষের আয়ের ক্ষেত্র বেড়েছে, সে সঙ্গে চিকিৎসা সুবিধা। শেখ হাসিনার সরকার অপুষ্টি আক্রান্ত নারীদের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু গ্রাম-বাংলার অপুষ্টি আক্রান্ত নারীরা এ সম্পর্কে অবহিত নয়। স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে বাংলার নারী যে খুব সচেতন, তা নয়। অসচেতনতার ফলে নারীরা রোগেশোকে আক্রান্ত হয়। বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে সচেতনতার হার বাড়ছে। এতে অপুষ্টি ও খর্বাকৃতি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। দেশের নারী ও শিশুমৃত্যুর হ্রাস আরও কমিয়ে আনতে হলে অপুষ্টির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরী।
×