ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গেইলের চমক দেখানোর দিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

গেইলের চমক দেখানোর দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘ফর্ম ইজ টেম্পারারি, বাট ট্যালেন্ট ইজ পার্মানেন্ট’ বলে একটি কথা আছে। ক্রিস গেইলের সামর্থ্য ও ট্যালেন্ট নিয়ে প্রশ্ন নেই। ব্যাট হাতে নিজের দিনে বিশ্বের যে কোন বোলিং লাইন ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারেন তিনি। মুশকিলটা হচ্ছে ১১তম বিশ্বকাপের অন্যতম সম্ভাব্য তারকার ফর্মহীনতা। বিশেষ করে ওয়ানডেতে সময়টা একদমই ভাল যাচ্ছে না ক্যারিবিয়ান উইলোবাজের। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর হয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচÑ শেষ সাত ওয়ানডে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪১ রান। বাকি ছয় ইনিংসে স্কোর ১৯, ১, ১০, ০, ০ ও ১! গেইলের নামের পাশে যা বড় বেমানান। দুর্বল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ মিশন। বড় কোন অঘটন না ঘটলে নিশ্চিত ফেবারিট ক্যারিবীয়রা। তার চেয়ে বড় এটি হতে পারে গেইলের ফর্মে ফেরার ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিং-দানবের জন্য এর চেয়ে মোক্ষম সুযোগ আর কী হতে পারে? ১৯৯৯ থেকে ২০১৫-১৬ বছরের ক্যারিয়ার। ২৬৩ ওয়ানডেতে রান ৮৮৮১। সেঞ্চুরি ২১টি। উইন্ডিজ ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি-সংখ্যায় দলটির কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাকেও ছাড়িয়ে তিনি। সাবেক ‘সুপার হিরো’ লারার সেঞ্চুরি ১৯। ১৭ সেঞ্চুরি নিয়ে তৃতীয় স্থানে আরেক সাবেক ডেসমন্ড হেইন্স। বর্তমানে খেলা চালিয়ে যাওয়া সতীর্থদের মধ্যে কাছাকাছি থাকা মারলন স্যামুলেয়সের ট্রিপল ফিগার ইনিংস মোটে ৭! সুতরাং ৩৫ বছর বয়সী বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই, বিশ্বজুড়ে গেইলের রয়েছে অগণিত ভক্ত। তাদের সবারই চাওয়া আজ স্বরূপে দেখা যাবে প্রিয় গেইলকে। আধুনিক স্বল্পদৈর্ঘীয় ক্রিকেটে যে কজন ব্যাটসম্যানের অপর নাম বিনোদন, তাদের মধ্যে ওপরের সারিতে গেইলের নাম। হ্যামস্ট্রিংয়ে পাশাপাশি পিঠের পুরনো ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় গত সেপ্টেম্বরে নিজ মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে সব ম্যাচে খেলতে পারেননি। বহুল আলোচিত ভারত সফরের প্রথম ওয়ানডেতে রান নিতে গিয়ে পায়ের মাংসপেশির চোটে পড়া গেইল ছিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও। ফেরেন টি২০ দিয়ে, প্রত্যাবর্তনটা ছিল রাজকীয়। প্রথম ম্যাচে ৩১ বলে ৭৭ ও দ্বিতীয়টিতে ৪১ বলে ৯০ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে দলকে সিরিজ জেতান। বিশ্বকাপ সামনে রেখে ইনজুরির পর ফিরে অমন ব্যাটিংয়ে ভক্তরা নড়েচড়ে বসেন। কিন্তু ওয়ানডে এখনও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি। গেইলের অফ ফর্ম নিয়ে চিন্তিত দেশটির সাবেক তারকারা। মাইকেল হোল্ডিং যেমন বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওর পুরো ব্যাটিংই আমি দেখেছি। টি২০তে প্রত্যাবর্তনটা ছিল অসাধারণ। কিন্তু ওয়ানডেতে যে কী হলো! গেইলের ফর্মহীনতার অনেক কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি। টি২০ ম্যাচে শর্টপিচ বলও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলছে। আমার বিশ্বাস বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ফর্মে ফিরবে ও।’ গেইল স্বরূপে ফিরবে বলে আশাবাদি আরও দুই সাবেক রিচি রিচার্ডসন (বর্তমান ম্যানেজার) ও ক্লাইভ লয়েড (বর্তমান প্রধান নির্বাচক)। রিচার্ডসন যেমন বলেন, ‘স্বল্পদৈর্ঘের ক্রিকেটে গেইল জাত ব্যাটসম্যান। অচীরেই রানে ফিরবে সে।’ তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পত্রপত্রিকাগুলো অন্য কিছুর গন্ধ খুঁজছে! বিশ্বকাপে দলের পরিকল্পনা নিয়ে নাকি খুবই নাখোশ গেইল, যা তার ব্যাটিংয়ে বাজে প্রভাব ফেলছে। ক্যারিবিয়ান টাইমসে বলা হয়েছে, দল নিয়ে ভেতরের চাপ ক্ষোভ তাকে অনেকটাই বিহ্বল করে তুলেছে! এসব বিতর্কের কারণও আছে। বেতন-ভাতা প্রশ্নে ভারত সফরের মধ্যপথে সিরিজ বাতিল করে দেশে ফেরে উইন্ডিজ। ফলে জাতীয় দল তো বটেই বিশ্বকাপ থেকেও ছেটে ফেলা হয় অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভো ও আরেক তারকা কাইরেন পোলার্ডকে। রাখা হয়নি তারকা অলরাউন্ডার রবি রামপলকে, শেষ মুহূর্তে সরে যান স্পিনার সুনিল নারাইন। ড্যারেন সামির মতো অভিজ্ঞরা থাকার পরও আনকোড়া জেসন হোল্ডারকে অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের দল গঠন করেন নির্বাচকরা। এ নিয়ে প্রকাশ্যেই নির্বাচক ও বোর্ড কর্তাদের ওপর খেদ ঝাড়েন গেইল। তবে সব ঝামেলা পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে স্বরূপে জ্বলে উঠবে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং-ঝড়, গেইল ভক্তদের প্রত্যাশা এমনটাই।
×