ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চবি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে ফের সংঘর্ষ ॥ আহত ৪, আটক ৫৫

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

চবি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে ফের সংঘর্ষ ॥ আহত ৪,  আটক ৫৫

চবি সংবাদদাতা ॥ পূর্বশত্রুতার জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় গ্রুপের ৪ জন আহত হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) শাহ্জালাল হলে প্রবেশ করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ঘটনার পর পুলিশ শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু ধারালো অস্ত্র, পাথর ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪৪ জনকে আটক করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ছ’টায় ভিএক্স নেতা ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে শাহ্জালাল হলে প্রবেশ করে ভিএক্স গ্রুপের ২৫Ñ৩০ কর্মী। ভিএক্স কর্মীরা শাহ্জালাল হলের ভেতরে অবস্থানরত চ্যুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপের এক কর্মীকে বের করে দেয়। পরে ভিএক্স কর্মীদের হলে প্রবেশের খবর পেয়ে সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা শাহ আমানত ও শাহ্জালাল হলের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫Ñ৭ রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়ে। পরে সকাল আটটার দিকে সিএফসি কর্মীরা শাহ্জালাল হলের পেছন দিয়ে হলে প্রবেশের চেষ্টা করলে আবারও ভিএক্স কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এ সময় ভিএক্সের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন সিএফসির দুই কর্মী। তাদের চবি মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। সকাল ৯টার দিকে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় সিএফসি কর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘প্রক্টর ও ভিসির প্রত্যক্ষ মদদেই হত্যা মামলার আসামিরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে।’ এ সময় সিএফসি কর্মীরা সহকারী প্রক্টরদের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে উত্তেজিত সিএফসি কর্মীরা শাহজালাল হলে প্রবেশ করতে চাইলে আবারও উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২ রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়ে। এরপর সিএফসি কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল দোকান-পাট বন্ধ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষক ক্লাবের গেটও। এ বিষয়ে সিএফসি নেতা ও সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এসএম আলাউদ্দিন আলম বলেন, ‘একটি খুন শেষে আরেকটি খুনের পরিকল্পনা নিয়ে শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীরা লুকিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে। ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে খুনীদের এ অপচেষ্টাকে কখনই সফল হতে দেবে না চবি ছাত্রলীগ।’ এদিকে এ বিষয়ে জানতে ভিএক্স নেতা এসএম আরিফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। এদিকে গ্রেফতার এড়াতে বেলা দুইটার দিকে তাপস হত্যা মামলার আসামি ও ভিএক্স কর্মী সোহেল খান ও কায়ছার মিয়া শাহ্জালাল হল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিএফসি কর্মীদের হামলার শিকার হন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাটহাজারীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। একই সময়ে ভিএক্স নেতা এসএম আরিফুল ইসলাম পালিয়ে একজন সহকারী প্রক্টরের বাসায় আশ্রয় নেয় বলে দাবি করে সিএফসি কর্মীরা। পরে সিএফসি কর্মীরা ওই সহকারী প্রক্টরের বাসায় গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে পরিবারে আতঙ্ক ছড়ায়। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ শাহ্জালাল হলে অভিযান শুরু করে। অভিযানে শাহ্জালাল হল থেকে ২টি রাম দা, ১টি চাপাতি, ৮-১০টি রড ও একবস্তা পাথর উদ্ধার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪৪ জনকে আটক করে। ব্যবসায়ীদের দাপট ॥ ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালীন দাপট দেখায় চবি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতি। সিএফসি কর্মীরা দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়ার সময় একটি দোকানে ভাংচুর চলে। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেখা করার হুমকি দেন। ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেও তারা তাতে সায় দেয়নি। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেকান্দরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত দু’টি অস্থায়ী পিঠার দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এদিকে, সন্ধ্যার পরে পুলিশ চবির শাহ আমানত হলে অভিযান চালিয়ে আরও ১১ জনকে আটক করেছে। এরা সকলেই ছাত্রলীগের কর্মী। ফলে সব মিলে আটকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ জনে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও শান্তিপূর্ণ রাখতে চবি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
×