হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ এসএসসি বা দাখিল পর্যন্ত অবিবাহিত থাকার শর্তেই মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি পাবে শিক্ষার্থীরা। সেকেন্ডারি এডুকেশন স্টাইপেন্ড প্রজেক্ট দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশের ৫৪ জেলার ২১৭ উপজেলায় চালু হচ্ছে এ পর্বের উপবৃত্তি কার্যক্রম। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী মাসিক ১০০ টাকা ও টিউশন ফি ১৫ টাকা। অষ্টম শ্রেণী মাসিক ১২০ টাকা ও টিউশন ফি ১৫ টাকা। নবম ও দশম শ্রেণী মাসিক ১৫০ টাকা ও টিউশন ফি ২০ টাকা এবং এসএসসি পরীক্ষার ফি বাবদ পাবে ৭৫০ টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য হুমায়ুন খালিদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুযোগ পাবে। নারী শিক্ষা অর্জন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়বে। এটি জাতীয় শিক্ষানীতি ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এ প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
উপবৃত্তি পাওয়ার যেসব শর্ত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এসএসসি বা দাখিল পর্যন্ত অবিবাহিত থাকা। অন্যান্য শর্ত হচ্ছে, শিক্ষাবর্ষে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকা, বার্ষিক পরীক্ষায় ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ এবং অষ্টম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৪০ শতাংশ নম্বর পাওয়া।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রত্যেক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ৩০ শতাংশ ছাত্রী এবং প্রথম বারের মতো ১০ শতাংশ ছাত্র আসছে এই উপবৃত্তির আওতায়। ফলে গরিব পরিবার হতে আগত শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এবারই প্রথম প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে (মোবাইল, বিকাশ বা অন্য কোন সহজ পদ্ধতি) সরাসরি শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থ পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করা, ছেলেমেয়ের মধ্যে শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণ, মেয়েদের শিক্ষার হার বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশব্যাপী ষষ্ঠ থেকে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে ৫ প্রকল্পের মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক (পাশ) পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান (চতুর্থ পর্যায়) প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এবং স্নাতক পাশ ও সমমানের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান শীর্ষক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু রয়েছে। উপবৃত্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে সেকেন্ডারি এডুকেশন স্টাইপেন্ড (এসইএসপি) প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়েছে। ওই প্রকল্পের সফলতার ধারাবাহিকতায় উপবৃত্তির জন্য ১০ শতাংশ ছাত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রদান দ্বিতীয় পর্যায়ের নতুন এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটির প্রস্তাব পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পুনরায় পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবারের সভায় অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। অনুমোদন পেলে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর।