ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় মমতার সফরসঙ্গী ইমরান, বিব্রত দিল্লী

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ঢাকায় মমতার সফরসঙ্গী ইমরান, বিব্রত দিল্লী

বিডিনিউজ ॥ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফরসঙ্গীদের তালিকায় জঙ্গী সম্পৃক্ততায় অভিযুক্ত এক বিধায়কের নাম থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সারদা অর্থ কেলেঙ্কারি ও জামায়াতে ইসলামীর জন্য অর্থ পাচারের অভিযোগে এর মধ্যেই রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ আহমদ হাসান ইমরানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)। ক্ষমতা থেকে নেমে যাওয়ার পর আত্মগোপনে থাকা অনেক জামায়াত নেতার জন্য সীমানার ওপারে অর্থ পাচারের সঙ্গে ইমরানের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও ঘনিষ্ঠভাবে তদন্ত করছে সিবিআই। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বলছে, তাদের কাছে ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে’ ইমরানের সম্পৃক্ততা ও দেশের ভেতরে জঙ্গী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে। গত বছরের ২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তি জামায়াতসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে ইমরানের যোগাযোগ থাকার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। এই ধরনের একজন মমতার সফরসঙ্গী হলে তা বাংলাদেশের পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন বলে এর মধ্যেই বাংলাদেশী কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সমস্যা হলো একজন সাংসদ হিসেবে ইমরানের ভিসার দরকার হবে। এখন মমতা যদি তাকে সফরসঙ্গী রাখেন, তাহলে বাংলাদেশের জন্য তার প্রবেশ ঠেকানো কঠিন হবে। বর্তমান সরকার তার বিরুদ্ধে সারদা কেলেঙ্কারি ও জঙ্গী সম্পৃক্ততার তদন্ত শুরু করার পর বিনা বিচারে তার প্রবেশ মেনে নেয়া তাদের জন্য কঠিন।’ তিনি বলেন, স্থল সীমানা চুক্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে সহায়তার জন্য মমতার বাংলাদেশ সফরকে শুভ সূচনা হিসেবে দেখছে পররাষ্ট্র দফতর। ‘কিন্তু ঘনিষ্ট একটি সহযোগী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়- এমন কিছুও আমরা করতে পারি না।’ এখন পররাষ্ট্র দফতর পড়েছে উভয় সঙ্কটে- তারা যদি ইমরানকে সফর থেকে বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয় তাহলে জনসম্মুখে এটা নিয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করে সফর বাতিলের অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাবেন মমতা। আর তারা যদি ইমরানকে না থামান তাহলে ঘনিষ্ট প্রতিবেশী বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে ফেলা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি মমতার শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তিনি সঙ্গে এমন কাউকে নেবেন না যাকে অভ্যর্থনা জানানো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বিব্রত বোধ করবে।’ ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, সন্ত্রাসবাদী জঙ্গীগোষ্ঠী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অঙ্গ-সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার (সিমি) সাবেক নেতা ছিলেন। ভারতের পূর্বাঞ্চলে মুসলিমদের জনপ্রিয় একটি পত্রিকার সম্পাদক হওয়ায় মুসলিমদের ভোট কাড়তে মমতার নজরে পড়েন ইমরান। পরে তিনি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ভোট জোগাড়ে নামেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমের খবর, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশের জামায়াত ও ভারতের সিমি নেতাদের মধ্যে কলকাতায় চারটি বৈঠক হয়। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১২ আগস্ট একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামের আড়ালে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকগুলোতে একাধিক জামায়াত ও সিমি নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ইমরান একাধিকবার বাংলাদেশে গিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকতেন। তাদের থেকে মোটা অর্থ সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। এছাড়া ইমরান সিমির প্রতিনিধি হিসেবে একাধিকবার বাংলাদেশে গিয়ে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল ইমরান দুদিনের জন্য বাংলাদেশে গিয়ে একাধিক জামায়াত নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন, যাদের মধ্যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীও ছিলেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে সিমিকে ফের চাঙ্গা করতে বহু অর্থ দিয়েছেন এই জামায়াত নেতা। ইমরান তার সাপ্তাহিক ‘কলম’ পত্রিকাটি শুরু করেছিলেন সিমির মুখপত্র হিসেবে। এই পত্রিকাকে দৈনিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মীর কাসেমের কাছ থেকে তিনি কয়েক লাখ টাকা নিয়েছিলেন বলেও গোয়েন্দারা দাবি করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সেই সময়ে মীর কাসেমকে কলকাতায় নিয়ে এসে সংবর্ধনাও দিয়েছিলেন ইমরান। ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি মমতার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সফরে তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ এবং ছিটমহল বিনিময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
×