ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার আপীল বিভাগেও বিচারপতি নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এবার আপীল বিভাগেও বিচারপতি নিয়োগ

বিকাশ দত্ত ॥ উচ্চ আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টের পর এবার আপীল বিভাগেও বিচারপতি নিয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতের সময়সূচী পরিবর্তন, সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগে বেঞ্চ পুনর্গঠন, নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগসহ আমূল পরিবর্তন এনেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আইনজীবীগণ আশা করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত ন্যায্য বিচার পাবেন। আপীল বিভাগে প্রায় ১৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। একই সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ের বিরুদ্ধে নিজামী-মুজাহিদ-সাকা-মীর কাশেমসহ সাতটি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আসামি পক্ষ দ-ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আপীল করেছে। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মত্যুদ- বহাল রেখে আপীল বিভাগে যে রায় প্রদান করেছে তার পূর্ণাঙ্গ রায় দুই-এক দিনের মধ্যে প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে আপীল বিভাগ এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ১১টি পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। আইনজীবীগণ মনে করছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ অন্যান্য মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আপীল বিভাগে জরুরী ভিত্তিতে বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন। বর্তমানে সারা দেশে ৩০ লাখ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আর হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ২শ’ ২২টি মামলা। এইগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির সুপারিশক্রমে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ৯ ফেব্রুয়ারি দুই বছরের জন্য ১০ জনকে হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ প্রদান করেন। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ নেয়া নতুন এই অতিরিক্ত বিচারকদের মধ্যে সাবেক জেলা জজ মর্যাদার তিনজন রয়েছেন। এরা হলেন- বিচারপতি এসএম মুজিবুর রহমান, বিচারপতি মোঃ ফরিদ আহমেদ শিবলী এবং বিচারপতি মোঃ আমীর হোসেন। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবীদের মধ্যে থেকে যারা বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন তারা হলেনÑ বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী, বিচারপতি রাজিক আল জলিল, বিচারপতি জ্যোতির্ময় নারায়ণ দেব চৌধুরী, বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবির লিটন, বিচারপতি মোঃ সেলিম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। এই ১০জনকে নিয়ে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭ জনে, যাদের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা ছাড়াও দুইজন অস্থায়ী বিচারক রয়েছেন। প্রধান বিচারপতি শুধু হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের বিষয়েই সুপারিশ করেননি। শপথ নেয়ার পর পরই তিনি ঢাকা জজকোর্ট পরিদর্শনে যান। সেখানে উপস্থিত আইনজীবীগণ দায়রা জজ আদালতে বিচারক সঙ্কটের কথা বলেন। তখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাদের বলেন, ৭ দিনের মধ্যেই বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে। শুধু কথা নয় সুপ্রীমকোর্টের রেজিষ্ট্রার এস এম কুদ্দুস জামানকে ঢাকা জজকোর্টের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ ছাড়া আদালতে জমে থাকা মামলার স্তুপ কমানোর লক্ষ্যে বিচার প্রার্থীদের দ্রুত সেবাদান করতে নতুন করে সময় পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। পুনর্র্নিধারিত সময় অনুযায়ী, আপীল বিভাগের আদালতের কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলবে। এর পর বিরতি দিয়ে আবার সাড়ে ১১টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত চলবে। আগে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা, মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বেলা ১২টা থেকে আবার ১টা পর্যন্ত বিচার কাজ চলত। আপীল বিভাগে বিচারপতি ১১ জন থাকলেও বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ মোট ৭ বিচারপতি রয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছাড়াও আপীল বিভাগে বিচারপতিদের মধ্যে আছেনÑ বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমাম আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক ও বিচারপতি এ এইচ সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। চলতি বছরে আপীল বিভাগ থেকে আরও একজন বিচারপতি অবসরে যাবেন। তখন আপীল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ এ। এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার শেষে যে দ- প্রদান করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আসামি পক্ষ আপীল বিভাগে আপীল করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ মোট ১৮টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় প্রদান করেছে। তার মধ্যে আপীল বিভাগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা আপীল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের মৃত্যুর পর তাদের মামলা আপীল বিভাগে আপীল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে রাজাকার গঠনের উদ্যোক্তা একে এম ইউসুফ বিচার চলাকালীন মৃত্যুবরণ করেন। তার মামলাটি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে আপীল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলার আপীল করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির অন্যতম নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী সদস্য মীর কাশেম আলী, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম।
×