ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রুইফ সত্যিই ব্যতিক্রম!

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ক্রুইফ সত্যিই ব্যতিক্রম!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই বলছেন, লোডভিক ডি ক্রুইফ হচ্ছেন সবদিক থেকেই ব্যতিক্রম এক কোচ। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বিদেশী কোচ, যিনি দ্বিতীয় দফায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এ তার অধীনে খেলে রানার্সআপ হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ (অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২৩ জাতীয় দল)। যেখানে বাংলাদেশের সম্ভাবনা-সামর্থ্য ছিল বড়জোড় সেমিফাইনাল খেলা, সেখানে ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়াটা অনেক বড় সাফল্যই মানছেন ফুটবলবোদ্ধারা। আর এমন সাফল্যের নেপথ্য রূপকার যে ক্রুইফইÑ এ নিয়েও দ্বিমত পোষণ করার কেউ নেই। ক্রুইফের এ্যাসাইনমেন্ট ছিল শুধু বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শেষ হওয়া পর্যন্তই। ইতোমধ্যেই নিজ দেশ হল্যান্ডেও চলে গেছেন তিনি। তবে যাওয়ার আগে শুনে গেছেন কাক্সিক্ষত সুখবরটিও। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ রানার্সআপ হওয়ার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন আগামী মার্চের তৃতীয় সপ্তাতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়শিপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ যুব দলকে কোচিং করানোর দায়িত্ব। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। এ জন্য তিনি সময় পাবেন তিন সপ্তাহ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ সামনে রেখে বাফুফে ফিরিয়ে আনে গত বছরের আগস্টে অব্যাহতি দেয়া ক্রুইফকে (ক্রুইফই আবেদন করেন বাফুফের কাছে তাকে এই আসরের জন্য দায়িত্ব দিতে)। আসর শুরুর ৫ দিন আগে ঢাকায় এসে দায়িত্ব নিয়েছিলেন মামুনুলদের। বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের মতো ক্রুইফেরও লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল। প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে সেই লক্ষ্য। এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ জিততে পারলে অনেক অর্জনের মালিক হতে পারতেন ডাচ্ কোচ ক্রুইফ। যেতে পারতেন আবদুস সাদেক, জর্জ কোটান কিংবা জোরান জর্জেভিচের কাতারে। অল্পের জন্য তা পারলেন না। ফাইনালে মালয়েশিয়া যুবদলকে হারাতে পারলেই ২৬ বছর পর বাংলাদেশ ফিফা স্বীকৃত কোন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ আবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারত। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রেসিডেন্টস্ গোল্ডকাপ’-এর ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিভার্সিটি দলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। দলের কোচ ছিলেন আবদুস সাদেক। এরপর ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চারজাতি আমন্ত্রণমূলক ট্রফি (কোচÑ জার্মানির অটো ফিস্টার), ১৯৯৯ (কোচÑ ইরাকের সামির শাকির) ও ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস, ২০০৩ সালে সাফ গেমস শিরোপা জিতলেও এগুলো ফিফা স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসরটি ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হওয়াতে দীর্ঘদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। সর্বশেষ ২০০৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়শিপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্বিয়ান কোচ জোরান জর্জেভিচের অধীনে এসএ গেমসের ফাইনালে আফগানিস্তানকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতলেও সেটা ছিল বাংলাদেশের অনুর্ধ-২৩ দল। যে কোন পর্যায়ে বাংলাদেশের সর্বশেষ শিরোপা অর্জন ২০০৩ সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন গোল্ডকাপে। সেবার অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের অধীনে বাংলাদেশ ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আফসোস, সাদেক-কোটান-জর্জেভিচ হতে পারলেন না ক্রুইফ! নানা সমস্যা নিয়ে এর আগে জাতীয় দলের কোচিং পদ থেকে বিদায় নিলেও আবারও বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে কেন এলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রুইফ কদিন আগে বলেছিলেন, ‘সমস্যা যাই থাক, আবারও বাংলাদেশে আসার কারণ সালাউদ্দিন এবং তাবিথের সঙ্গে দারুণ সুসম্পর্ক।’ অথচ আসর শুরুর আগে ফুটবলপ্রেমীরা অনেকেই বলছিলেন, ক্রুইফ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসবেন না। তিনি আসলে তার বকেয়া পাওনা টাকা আদায় করার জন্যই বাফুফেকে প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় দলের কোচ হবেন শুধু বঙ্গবন্ধু কাপের জন্য। বাফুফে যেহেতু তাকে তার পাওনা টাকার বেশিরভাগই পাঠিয়ে দিয়েছে, কাজেই বাবার মৃত্যুকে কাজে লাগিয়ে ক্রুইফ শেষ পর্যন্ত আর আসবেন না! জাতীয় ফুটবল দলের ১৭তম বিদেশী কোচ ক্রুইফ। তার অধীনে জাতীয় ফুটবল দল ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়। কোনটিতেই তার দল আশাতীত রেজাল্ট করতে পারেনি। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৫ থেকে ১০০-১২০-এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ক্রুইফ। ক্রুইফ অক্টোবরে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৮১ (অবশ্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ভাল রেজাল্ট করায় এখন বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৭)! সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল ক্রুইফদের মূল এ্যাসাইনমেন্ট, সেখানে সপ্তম হয় বাংলাদেশ। ব্যর্থ হন ক্রুইফ। এখন দেখার বিষয়, ঘরের মাঠে আসন্ন এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়শিপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ যুব দলকে নিয়ে যেতে পারেন কি না অভীষ্ট লক্ষ্যে। তাহলে আবারও তিনি বিবেচিত হবেন একজন ‘ব্যতিক্রম ও সফল বিদেশী কোচ’ হিসেবে। পারবেন কী তিনি? বাংলাদেশের বিদেশী কোচরা ॥ বেকেল হফট (জার্মানি, ১৯৭৮-৮১), গেরহার্ড স্মিথ (জার্মানি, ১৯৮২) নাসের হেজাজী (ইরান, ১৯৮৯), ওল্ডরিখ সোয়াব (সুইজারল্যান্ড, ১৯৯৩), ম্যান ইয়াং ক্যাং (দক্ষিণ কোরিয়া, ১৯৯৪), অটো ফিস্টার (জার্মানি, ১৯৯৪-৯৭), সামির শাকির (ইরাক, ১৯৯৮-১৯৯৯), মার্ক হ্যারিসন (ইংল্যান্ড, ২০০০), জর্জ কোটান (অস্ট্রিয়া, ২০০০-০৩), আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি (আর্জেন্টিনা, ২০০৫-০৭), সৈয়দ নঈমউদ্দিন (ভারত, ২০০৭), এডসন সিলভা ডিডো (ব্রাজিল, ২০০৯), জোরান জর্জেভিচ (সার্বিয়া, ২০১০) রবার্ট রুবচিচ (ক্রোয়েশিয়া, ২০১০-১১), জর্জি ইয়োভানোভস্কি (মেসিডোনিয়া, ২০১১), নিকোলা ইলিয়েভস্কি (মেসিডোনিয়া, ২০১১), লোডভিক ডি ক্রুইফ (হল্যান্ড, জানুয়ারি ২০১৩-অক্টোবর ২০১৪ এবং জানুয়ারি ২০১৫ থেকে)।
×