ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিক দুর্বলতায় ভুগছেন মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মানসিক দুর্বলতায় ভুগছেন মাশরাফিরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসির হুসেইন বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট ইজ আ মাইন গেম।’ অর্থাৎ ‘ক্রিকেট হচ্ছে মানসিকতার খেলা।’ যে এ খেলায় মানসিকভাবে আগে ভেঙ্গে পড়বে, তাদের হারের সম্ভাবনাই বেশি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন সেই মানসিক রোগেই ভুগছে। মানসিক দুর্বলতায় ভুগছেন মাশরাফিরা। বিশ্বকাপের উদ্দেশে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে যে টানা চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ হেরেছেন। এর মধ্যে আবার অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে দুটি ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ হেরেছেন মাশরাফিরা। যা দলের ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলেছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কথার সারমর্মও এ দাঁড়ায়, ‘যদি প্রস্তুতি ম্যাচের ফল নিয়ে কথা বলি, তাহলে সব জিরো। আমাদের মানসিকতায়ও ধাক্কা লেগেছে। প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছি, ফল মিলেনি।’ সবারই জানা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে, খেলাতেও এর প্রভাব পড়ে। এই প্রভাব যেন না পড়ে এ জন্য বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন। দলের মানসিকতা শক্ত করে তুলবেন, সেই আশাও দেখছেন। নিজেই শুক্রবার বলেছেন, ‘আজকে (শুক্রবার) পত্রিকায় মাশরাফির যে কথাগুলো দেখলাম, মনে হচ্ছে ওরা মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছে। এখানে তাদের এখন উজ্জীবিত করা দরকার। এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা যাচ্ছি ওখানে। খেলার আগেই পৌঁছে যাব আশা করি। ওদের সঙ্গে কথাবার্তা হবে। আমি মনে করি খেলাধুলায় হারজিত অবশ্যই আছে। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলাটা দুঃখজনক ছিল। মনে করেছিলাম আমাদের জেতা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা জিততে পারিনি। আমাদের পারফর্মেন্সটাই ভাল হচ্ছে না।’ পাপন আরও জানান, ‘আমরা জানি এমন কন্ডিশনে খেলতে গেলে ২৮০ রানের নিচে স্কোর করে কোন লাভ নেই। কেননা এর নিচে জেতাটা সম্ভব নয়। সব ম্যাচই বড় বড় স্কোর হচ্ছে। আমরা ওই কন্ডিশনে আড়াই শ’ই করতে পারছি না। আয়ারল্যান্ডের মতো দুর্বল দলের বিপক্ষে তো ২০০ রানই করতে পারিনি। আমাদের ব্যাটিংটা ঠিকমত হচ্ছে না। এটা একটি বিষয়। সেই সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান রিয়াদও খেলেনি। হয়ত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। পজিশন পরিবর্তন করে খেলানো হয়েছে হয়ত। এটার একটা ইমপ্যাক্ট থাকতে পারে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশ মূল ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবে। ঘুরে না দাঁড়ানোর কোন কারণ আমি দেখি না। এবং আমাদের সামনের যে ম্যাচগুলো আছে সে সব ম্যাচে আমরা হারজিত নিয়ে চিন্তিত নই। আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশ ভাল খেলুক। আমাদের যে দলটা আছে তাদের অনেক স্বক্ষমতা আছে। এর কিছু যেন তারা এই বিশ্বকাপে প্রদর্শন করতে পারে এই প্রত্যাশাই করছি।’ মোটিভিশনের জন্য যা যা করবেন তাও জানালেন বিসিবি সভাপতি, ‘আমি ফোন করতে চেয়েছিলাম। করিনি এই কারণে যে আমি দেখতে চেয়েছিলাম মাশরাফির রেসপন্সটা কি। পত্রিকায় মাশরাফির রেসপন্স দেখে মনে হচ্ছে ওদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আমি ওদের সবার সঙ্গে কথা বলব। যতটুকু পারি একটু চাঙ্গা করার চেষ্টা করব। হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই এটাই বলব। খেলাধুলায় হারজিত থাকে, এটাকে নিয়ে যেন বসে না থাকে। সামনে ম্যাচগুলো নিয়ে যেন চিন্তা করে।’ এ মুহূর্তে আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ডকেও বাংলাদেশের চেয়ে ভাল দল মনে করছেন পাপন, ‘স্কটল্যান্ড-আফগানিস্তান ওই কন্ডিশনে আমাদের চেয়ে অনেক ভাল দল। এটাতে কোন সন্দেহ নেই। স্কটল্যান্ড আয়ারল্যান্ডেকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৩১৩ চেজ করে ৩১০ করেছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমাদের ব্যাটিংয়ে রান হচ্ছে না। ব্যাটিংয়ে রান না হলে জেতার কোন সুযোগ নেই। ব্যাটিংয়ে ভাল করতে গেলে আমাদের ১-২ জনকে ভাল খেললে হবে না। আমাদের একাধিক খেলোয়াড়কে ভাল খেলতে হবে। আমদের এখানে যেমন তামিম-মুমিনুল-মুশফিক-এনামুল-সাকিব-রিয়াদ আমাদের মূল ব্যাটসম্যানদের রান করতে হবে। আড়াই শ’র ওপরে না গেলে এটা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট হতে পারে না। সে জন্য আমি বলছি ব্যাটিংটা আমরা ভাল করতে পারছি না। তারা শক্তিশালী দল। তাদের দুর্বল ভাবার কোন কারণ নেই। স্কটল্যান্ড খুব শক্তিশালী দল ওই কন্ডিশনে। নিউজিল্যান্ড আমাদের এখানে এসে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। কিন্তু ওখানে ওরা মনে হচ্ছে অপ্রতিরোধ্য। কেউ পারবে না মনে হচ্ছে ওদের বিপক্ষে। এটা একটা পরিবেশের ব্যাপার। এখন এই পরিবেশের সঙ্গে যতটা সম্ভব খাপ খাইয়ে নেয়া যায় এবং এটা যত তাড়াতাড়ি নেয়া যায় তত ভাল। আমি যতটুকু কথা বলেছি অনুশীলন এবং ট্রেনিং কোন ঘাটতি ছিল না। এতে পুরো সন্তুষ্ট টিম। ওরা বলেছে এটাতে কোন ঘাটতি নেই। এখন আমার মনে হয় একটু মনোবলের দরকার। সেই মনোবলের জন্য চেষ্টা করব।’ বাংলাদেশ দল শুক্রবারই সিডনি থেকে চলে গেছে ক্যানবেরায়। আজ থেকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নামার জন্য প্রস্তুত হবে।
×