ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হরতাল অবরোধের বিরুদ্ধে সোচ্চার সবাই ॥ কমে আসছে আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হরতাল অবরোধের বিরুদ্ধে  সোচ্চার সবাই ॥ কমে আসছে আতঙ্ক

এম শাহজাহান ॥ হরতাল-অবরোধের তেজ কমে আসছে। বাড়ছে পণ্য সরবরাহ। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল তাও কেটে যাচ্ছে। ভোক্তারা সঠিক দামে কিনছেন সবজিসহ নিত্যপণ্য। তবে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার হলে জিনিসপত্রের দাম আর কমে যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ কিছু ব্যবসায়ী পরিবহন সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে এখনও কারসাজি করছে। এত কিছুর পরও পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ১১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি আরও কমার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এদিকে, দেশের সাড়ে ৩ কোটি ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, দিনমজুর, হকার, পরিবহনকর্মী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এখন হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে কর্মসূচী দিচ্ছে। এতে করে কমে আসছে আতঙ্ক। পণ্য সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক হয়ে আসায় সাপ্লাই ও ডিমান্ডের মধ্যে তেমন কোন ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে ৩৮ দিন হরতাল-অবরোধের মধ্যেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ধ্বংসাত্মক এ কর্মসূচীর শুরুতে আতঙ্কে পরিবহন মালিকরা গাড়ি বের করতেন না। তবে এখন পণ্যবাহী গাড়ি চলছে দেদারছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধ ব্যবসায়ীরা ভালভাবে নেয়নি। দলমত নির্বিশেষে সবাই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে হলেও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের স্বার্থে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রেখেছেন। এজন্য পরিবহন মালিকদেরও ধন্যবাদ দিতে হয়। তারা এখন ঝুঁকি নিয়ে বের হচ্ছেন। এদিকে, সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত প্রায় দেড় মাসে কয়েকটি পণ্যের দাম সামান্য বাড়লেও আবার কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমে এসেছে। এক্ষেত্রে গত এক মাসে মসুর ডালের দাম কমেছে ২ দশমিক ৭৮ টাকা থেকে প্রায় ৩ টাকা পর্যন্ত। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও খোলা ভোজ্যতেলের দাম কমেছে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। গুঁড়ো দুধের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৬৭ এবং ডিমের দাম কমেছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। যদিও এই সময়ে চালের দাম ১ দশমিক ৪, পেঁয়াজ ৬ দশমিক ৬৭ এবং আটার দাম ২ দশমিক ৯৯ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সবজি, মাছ, মাংস, মসলাসহ অন্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা এবং সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থান পত্রে বলা হয়েছে, বিগত ছয় বছরে আর্থ-সামাজিক খাতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, খাদ্যশস্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানিসহ সকল অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া মুদ্রানীতির লক্ষ্য বরাবরাই ছিল সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং লক্ষ্য অর্জনে সরকার সফল হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল এবং খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির পরও ২০১০Ñ১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। কার্যকর সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরবর্তী অর্থবছরসমূহে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৪ সালে মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ১২ মাসের গড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এ কারণে আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, পরিবহন খাতের প্রভাব সেভাবে বাজারে পড়েনি। ট্রাকভাড়া বাড়লেও সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারেনি। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্তক দৃষ্টি এবং ব্যবসায়ীরা এ কর্মসূচীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে। এদিকে, রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্য সরবরাহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। শ্যামবাজার, কাওরান বাজার এবং মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ অন্যান্য বাজারে নিত্যপণ্যের কোন ঘাটতি নেই। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য বণিক সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করেই এখন ট্রাকে করে পণ্য আনা হচ্ছে।
×