ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তালিকায় এদেশে বসবাসরত ৭২ জাপানী ও ১৫ প্রবাসী নাগরিক

সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তথ্য খুঁজছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তথ্য খুঁজছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশী নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘সন্দেহজনক’ আর্থিক লেনদেনের তথ্য খুঁজছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দারা। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশে বসবাসরত জাপানের ৭২ জন নাগরিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত বছর ভারত, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, বাহরাইন, কাজাকস্তান, উজবেকিস্তান, ইসরাইল, ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিদেশী ১৫০ জন নাগরিকের তথ্য চেয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী নাগরিকও রয়েছেন। অবিলম্বে আরও দুই শতাশিক বিদেশী নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে চিঠি পাঠানো হবে বলে বিএফআইইউ‘র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৭২জন জাপানী নাগরিকের আর্থিক লেনদেনের তথ্য জানতে দেশে কর্মরত সকল তফশিলী ব্যাংকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে জাপানী নাগরিকদের পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম ও স্থান উল্লেখ করা হয়। বিদেশী এসব নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবে নগদ লেনদেনের পরিমাণ, মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন কিংবা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে কি-না তা জানতে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউর উপ-প্রধান ম. মাহফুজুর রহমান জানান, এটি কোন নতুন ঘটনা নয়। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসাবেই এই তথ্য চাওয়া হয়েছে। মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ক এগমন্ড এবং দেশের আইন মেনেই এটা করা হচ্ছে বলেও জানান মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, বিএফআইইউ’র সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। এছাড়া বিএফআইইউ এগমন্ড গ্রুপের সদস্য। ফলে এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ তথ্য আদান-প্রদান করে। এজন্যই বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আরও দুই শতাশিক বিদেশী নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘সন্দেহজনক’ আর্থিক লেনদেনের তথ্য জানতে চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা। এরই অংশ হিসেবে বিদেশী ও প্রবাসী নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবে কঠোর নজরদারিতে আনা হয়েছে বলে আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। সূত্র মতে, গত বছরের ১০ নবেম্বর বাহরাইনের তিন নাগরিকের হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশে কার্যরত সকল ব্যাংককে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরা হলেন, এসাম ইউসুফ জাহানী, ইমাদ ওমর আলনেসনাস ও ওমাইমা ওথমান আল মাহমুদ। তাদের পাসপোর্ট নম্বর ও জন্মস্থানও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৫ নবেম্বর শিনিচি মিতাতে নামের এক জাপানী নাগরিকের তথ্য চাওয়া হয় ব্যাংকগুলোর কাছে, যার পাসপোর্ট নম্বর টিএইচ ৯৪৭০৪৭৬, জন্ম তারিখ ১৯৭৯ সালের ১৬ মার্চ। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী আহমেদ শাহীন, বেলাল হোসেন ও ফেরদৌস আহমেদ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পাসপোর্টধারী আজমল আলী ও হুসাইন আহমেদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে গত ১৮ আগস্ট ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ। বিএফআইইউ সূত্র জানায়, ওই বছরের জুন মাসে কাজাকস্তানের প্রতিষ্ঠান জর্জেন হাউসের হিসাবের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফাস্টিন ট্যুরিজম, অস্ট্রিয়ার মেরিডিয়ান জেট ম্যানেজমেন্ট, রাশিয়ার এমএস গ্রুপ ইনভেস্টমেন্ট নামের তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাব বা লেনদেনের তথ্য আছে কি না জানতে চাওয়া হয় ব্যাংকগুলোর কাছে। এ ছাড়া উজবেকিস্তান, ইসরাইল, থাইল্যান্ড ও রাশিয়ার কয়েকজন নাগরিকের বিষয়েও তথ্য চান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দারা। জুনের ওই চিঠিতে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র ‘ব্রাদার্স সার্কেলে’র সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ সালে এই চক্রকে ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক’ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের সব ধরনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে উৎপত্তি হলেও এই চক্র সারাবিশ্বেই মাদক পাচারসহ আর্থিক খাতের নানা অপরাধের জাল বিস্তার করেছে। এর আগে গত বছরের শেষদিকেও ব্রাদার্স সার্কেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সন্দেহভাজন ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশে চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া গত বছরের ৩ এপ্রিল এক চিঠিতে ইউক্রেনের ৩৩ জনের তালিকা পাঠিয়ে তথ্য চায় বিএফআইইউ। ওই মাসেই আর্জেন্টিনার ২১ নাগরিকের আর্থিক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়। গত বছরের শুরুতেই এক চিঠিতে বিভিন্ন দেশের ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ। এদের মধ্যে ২৬ জন মূল সন্দেহভাজন বলে জানা গেছে। বাকিরা তাদের স্ত্রী বা সন্তান। ভারত, ফিলিপিন্স ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন নাগরিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে চলতি বছর। এ ছাড়া গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী নাগরিক মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী শারমিন মিমি রহমানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়।
×