ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অংশ নিলেন শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ

রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভ মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভ মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। নাশকতা বন্ধ করে এসএসসি পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘœ করার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মানববন্ধন করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। ‘আগুনে পুড়ে মরতে চাই না’, ‘অবরোধ-হরতাল বন্ধ করুন, ‘স্কুলে যেতে চাই,’Ñ সেøাগান নিয়ে রাজপথে নেমেছে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক-অভিভাবক ও গবর্নিং বডির সদস্যরাও। কলেজের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তারা নাশকতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। নাশকতার বন্ধের দাবি জানিয়েছে বুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থীও। সকালে ‘ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সমন্বয় কমিটি’র ব্যানাড়ে প্রতিবাদ সমবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে। ১০টায় কর্মসূচী শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৯টা থেকেই কলেজের সামনের রাস্তায় অবস্থায় নেন এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-অভিভাবক ও স্থানীয় জনসাধারণ। আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং অভিভাবক বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে রাস্তার দুই পাশে মানববন্ধনে অংশ নেন। তাদের ব্যানাড়ে লেখা ছিল, ‘রাজনীতির নামে জ্বালাও পোড়াও বন্ধ কর,’ ‘স্কুল বাঁচাও দেশ বাঁচাও’। এই কর্মসূচী সঞ্চালনা করেন আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও গবর্নিং বডির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজসহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের প্রধানরা। রাশেদ খান মেনন বলেন, ছেলেমেয়েরা জিপিএ পায়, ভাল ফল অর্জন করেÑ তা খালেদা জিয়ার ভাল লাগে না। তার হিংসা হয়। তাই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েই আমাদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পেট্রোলবোমায় মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এর দায় খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, নিজামী, কামারুজ্জামান, সাঈদীদের মতো খালেদা জিয়াকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শাস্তি পেতে হবে। অবিলম্বে আন্দোলনের নামে নাশকতা বন্ধ করা না হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী। মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, বোমাবাজির প্রতিটি মামলায় খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে বিচার করা হবে। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, আপনার সঙ্গে কোনো আপোস নেই। বোমাবাজের সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না। ২০১৯ সালের ১ ঘণ্টা আগেও বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হবে না। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য খালেদা জিয়া উঠেপড়ে লেগেছেন। যেদিন পরীক্ষা সেদিন খালেদা হরতাল অবরোধ দেন। আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, পেট্রোলবোমার আঘাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে বিএনপি-জামায়াত জোট। আমাদের দাবি একটাই- শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই, লেখাপড়ার অধিকার চাই। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। মানববন্ধনে অংশ নেয়া মতিঝিল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নীলুফার মোর্শেদ বলে, আমি নবেম্বর মাসে জেএসসি পরীক্ষা দেব, কিন্তু অবরোধ ও হরতালের কারণে এখনও স্কুলে যেতে পারছি না। আমরা আর হরতাল-অবরোধ চাই না। আবুজর গিফারী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল নবী সিদ্দিকী বলেন, গত ৫ জানুয়ারি থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাচ্ছি না। অবরোধ-হরতালের নামে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর প্রতবাদে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আরামবাগ হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে থাকা ফেস্টুনে লেখা ছিল, আমরা বোমা কিংবা সন্ত্রাস বুঝি না, শান্তি বুঝি’, ‘বিদ্যালয়ে যেতে চাই পড়ালেখা করতে চাই,’ ‘আমাদের শিক্ষার কথা ভাবুন, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করুন,’। মানববন্ধনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মতিঝিল টিএন্ডটি উচ্চ বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস হাইস্কুল, মতিঝিল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারী কলোনি হাই স্কুল, রয়েল একাডেমি, বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়, কমলাপুর শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক, পরিচালনা পরিষদ ও স্থানীয় জনসাধারণ অংশ নেয়। একই দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, দীল আফরোজ, ড. মিজানুর রহমান, শামীম আরা, ড. কয়েজ বিন জামান, মমিনুর রহমান, ড. বায়জীদ কবীর, শাহীনুর রহমান, কাজী খায়রুল বাশার, বুয়েট এলামনাই মনিরুজ্জামান, মঞ্জুরুল ইসলাম, আতাউল মাহমুদ প্রমুখ। তারা বলেন, নাশকতার কারণে শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে এ ধরনের কর্মসূচী তুলে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। হরতাল-অবরোধে পেট্রোলবোমা হামলায় সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জনিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। বলেন, হরতাল অবরোধ ডেকে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। কারও বাবা কারও মা ও কারও ভাই বোন আগুনে পুড়ে মরছে। এরা কেউ কোন রাজনৈতিক দলের নয়। তাদের সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাজমিস্ত্রি মোঃ মোস্তফা। সঙ্গে রয়েছে ছোট একটা ব্যানার। নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধের দাবি লেখা তাতে। তার পাশেই বড় বড় কয়েকটি ব্যানার নিয়ে একাধিক সংগঠনের উদ্যোগে দাঁড়িয়েছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সবার দাবি, সব নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধ করে দেশকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিন। এছাড়া একই দাবিতে চলছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ সব মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা বললেন, হরতাল আর অবরোধের ফাঁদে পড়ে দেশ আজ পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে। পুড়ে মরছে সাধারণ মানুষ। আয়বঞ্চিত হচ্ছেন দিনমজুরসহ সবাই। এক সময় রাজমিস্ত্রি মোস্তফার বলার পালা। তিনি বললেন, আজ এই সময় আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু, হরতাল আর অবরোধের কারণে কাজ পাচ্ছি না। অসহায়ের মতো দাবি জানাতে এসেছি, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। কাজ না করলে এদের সবাইকে কী খাওয়াব, এই উত্তরটা আমাকে কে দেবে? বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, আমার খুবই লজ্জা হয়, মানুষ মারার এ রকম কর্মসূচী কীভাবে দেয় রাজনৈতিক দল! মন্ত্রী আরও বলেন, নাগরিক সমাজ মানুষ হত্যায় খালেদা জিয়াকে উৎসাহ জোগাচ্ছে। সন্ত্রাসে ইন্ধন জোগাচ্ছে। এরা সমাজের ক্যানসার। এদের জন্য লজ্জা হয়। এরা নাকি জাতির বিবেক? ছিঃ, ধিক! কিসের মধ্যে আছি আমরা?’ ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নারা ষড়যন্ত্রকারী। এক-এগারোর কুশীলব। মন্ত্রী আরও বলেন, সবকিছুর শেষ আছে। ভারতের নকশাল আন্দোলন ছিল। সেটাও এক সময় শেষ হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া দেশে যে আগুন জ্বেলেছেন, সেই আগুনে বিএনপি ও খালেদা জিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, হাবিবুর রহমান খান, শাহে আলম মুরাদ, হেদায়েতুল ইসলাম, এম এ করিম, জাকির আহমাদ, হাসিবুর রহমান প্রমুখ। লাগাতার অবরোধ ও হরতালে নিরীহ মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলছে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। বাংলাদেশ আওয়ামী তৃণমূল লীগ এ কর্মসূচীর আয়োজন করে। এদিকে গুলশানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, জঙ্গীবাদ; ও সন্ত্রাসের নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংলাপের কোন প্রশ্ন আসে না। খালেদা জিয়া দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসার, সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি, মোবাশ্বের চৌধুরী, মঈন উদ্দিন মঈন, মিজারুর রহমান প্রমুখ।
×