ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হত্যার রাজনীতি রাজনীতিকে হত্যা করছে ॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হত্যার রাজনীতি রাজনীতিকে হত্যা করছে ॥ এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হত্যার রাজনীতি, রাজনীতিকে হত্যা করছে এমন মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, যাদের কাছে রাজনৈতিক নেতারা ভোট ভিক্ষা করি তারা আজ প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। বলছে, আমাদের বাঁচাও, পেট্রোলবোমা মেরো না। হত্যা কর না। কিন্তু তাদের এ আকুতি অবরোধকারীদের হৃদয় স্পর্শ করে না। শিশুদের কান্না তাদের মন গলাতে পারে না। উদ্দেশ্য কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া। মানুষ প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও পাচ্ছে না! আমরা প্রজাতন্ত্রের মালিকদের হত্যা করে ক্ষমতায় যেতে চাই। এটা কেমন ক্ষমতায় যাওয়া। ধিক্কার দেই এমন ইচ্ছার। ক্ষমতার মুখে থুঁতু দেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এটা কি গণতন্ত্রের চিত্র। জাতীয় যুব সংহতি ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ)- দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর যুব সংহতির আহ্বায়ক মোঃ আবুল বাশারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সাঈদুর রহমান টেপা, মীর আবদুর সবুর আসুদ প্রমুখ। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে মানুষ দিশেহারা। দেশবাসী যন্ত্রণা আর আশঙ্কার মধ্যে বেঁচে আছে। আগামীতে কি হবে কেউ যানে না। এ কেমন স্বাধীন দেশ। শিশুদের স্কুলে যাওয়া, ঘর থেকে বের হওয়ার স্বাধীনতা নেই। জীবনের নিরাপত্তা নেই। আমরা স্বাধীনতাকে রক্ষা না করে ধ্বংস করছি, উপহাস করছি। ঘরে থাকলে ক্ষুধার আগুন, বাইরে গেলে পেট্রোলের আগুন এমন মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, কেমন দেশে বাস করি, আতঙ্কে রাতে বেরুতে পারি না। এটা কেমন গণতান্ত্রিক দেশ? তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীও শিশুদের হত্যা করেনি। আগুন দিয়ে মানুষ মারেনি। কিন্তু এখন তা হচ্ছে। রাজনীতিবীদরা সমাজের ঘৃণ্য বস্তু। নষ্ট রাজনীতির কারণে ভবিষ্যতে আমাদের কেউ স্মরণ নয়, ঘৃণা করবে। তিনি বলেন, যাঁদের ভোটে আমরা নির্বাচিত হই, ক্ষমতায় যাই-তাদের ওপর এখন অত্যাচার করছি। মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। এমন অপরাজনীতি চাই না, সুস্থ ধারার রাজনীতি চাই। ‘কিসের পরীক্ষা’ বিএনপি নেতা মেজর হাফিজের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, তাদের কাছে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত নয়, ক্ষমতায় যাওয়া সবচেয়ে বড় বিষয়। রাজনীতিকরা এখন মানুষের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মানুষের কল্যাণ ছাড়া রাজনীতি চাই না। পেট্রোলবোমা দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না এমন মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, হত্যার রাজনীতি-রাজনীতিকে হত্যা করে। এমন রাজনীতি আমাদের নিঃশেষ করতে হবে। আমরা শান্তির রাজনীতি চাই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ভুলে গেছি। কারও মধ্যে ভদ্রতা, শিষ্টাচার নেই। ক্ষমতায় থাকব, ক্ষমতায় যাব, এমন মানসিকতা সবার মধ্যেই। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক আশা নিয়ে চেয়ে আছে। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হবে কিনা জানি না। এরশাদ বলেন, মানুষ এখন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তাই এখন মুখ খুলছে। ভয় উপেক্ষা করে সবাই বলছে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। এটা অসম্ভব কিছু নয়। আমরা প্রমাণ করব ও ক্ষমতায় আসব। আগামী মার্চ মাস থেকে জেলায় জেলায় সম্মেলন করে দলকে সংগঠিত করব। এক বছরের মধ্যে সম্মেলন শেষে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুব হব। প্রমাণ করব আমরা শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, বিদ্যুত, গ্যাস কিংবা সারের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে যদি হরতাল- অবরোধ হতো তাহলে মানতাম মানুষের কল্যাণে রাজনৈতিক কর্মসূচী হচ্ছে। এখন মানুষ হত্যার জন্য হরতাল-অবরোধ হচ্ছে। তা মানতে পারি না। এরশাদ বলেন, মানুষ হত্যা বিশ্বাস করি না। দেশের সবাই আমার আত্মীয়, কাকে মেরে ক্ষমতায় থাকব? আমরা তা ভুলে গেছি। আমি একটা মানুষ হত্যার জন্য ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। এখন প্রতিদিন অগণিত মানুষ মরছে। কোনদিন মানুষের ক্ষতি করিনি। নিশ্চয়ই ক্ষমতায় আসব। আমরা শান্তি চাই-শান্তি-চাই-শান্তি চাই। পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম বলেন, কিসের সংলাপ। কার সঙ্গে সংলাপ। কেয়ার টেকার সরকার গঠনের সংলাপ? ২০০৮ সালে এমন সরকারের পরিণাম দেখেছি। কে মসনদে বসবে এ নিয়ে কোন সংলাপ নয়, হতে পারে না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সংলাপ হতে পারে। যারা পেট্রোলবোমা দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করতে চান, আপনারা শান্ত হন, মানুষ মাপ করবে না। আপনাদের বিচার করবে এ দেশের মানুষ।
×