ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরতালে আজকের পরীক্ষাও পিছিয়ে গেল

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হরতালে আজকের পরীক্ষাও পিছিয়ে  গেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবরোধের মধ্যেই বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে আজকের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পিছিয়ে গেল। তবে পরীক্ষাটির নতুন তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে তারিখ ঘোষণা করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বিএনপির কাছে হরতাল প্রত্যাহারে জনগণের অনুরোধে সাড়া মিলবে বলে এখনও আমরা আশা রাখি। বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত রাখছি, কোন তারিখ দিচ্ছি না। আশায় থাকলাম, বিএনপি নেতাদের দিলে রহম হবে। তারা একটু দয়াবান হবেন, মাতৃভাষার মাসে তারা একটু নমনীয় হবেন। এদিকে হরতাল-অবরোধের কারণে আজকের পরীক্ষাসহ এ পর্যন্ত পাঁচ দিনে মোট ৩৭টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। হরতাল প্রত্যাহারে আগের দিনের অনুরোধে বিএনপি-জামায়াত জোটের সাড়া না পাওয়ায় বুধবার বেলা তিনটায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আজকের পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন প্রমুখ। আজ সাধারণ আট বোর্ডের এসএসসিতে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা/ইসলাম শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/হিন্দু ধর্ম শিক্ষা, বৌদ্ধ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা এবং খ্রিস্ট ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা/খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলে ফিকহ্ ও উসুলুল ফিকহ্ এবং কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনালে পদার্থ বিজ্ঞান-২ (১৯২৫) (সৃজনশীল), পদার্থ বিজ্ঞান-২ (৮১২৪) (সৃজনশীল/সাধারণ) ও দাখিল ভোকেশনালে পদার্থ বিজ্ঞান-২ (১৭২৫) (সৃজনশীল), পদার্থ বিজ্ঞান-২ (৮৫২৫) বিষয়ের পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের মিলিয়ে আছেন আরও এক কোটি। দেশের সবচেয়ে বড় পরিবার শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন আমরা ছেলেমেয়েদের রক্ষা করতে চাই। আশা করি তাদের (বিএনপি জোট) মন নাড়া দেবে। আল্লাহর রহমতে তাদের মনে দ্বীন-রহম-দয়া আসবে। কর্মসূচী ভেঙ্গে আমরা পরীক্ষা নিতে পারতাম। কিন্তু বিএনপি জোটের হিংস্রতার মুখে আমরা ছেলেমেয়েদের ঠেলে দিতে পারি না। আমাদের সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা সব থেকে বড়। তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের হিংস্রতার মুখে ফেলে দিতে পারি না। তাই পরীক্ষা স্থগিত রাখছি। হরতাল-অবরোধে নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার্থীরা সব থেকে বড় ভোগান্তিতে পড়েছে। তাদের পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন, দেশবাসীও উদ্বিগ্ন। কেউ এখন আর নিরাপদ নয়। আশঙ্কা, ভয়ভীতি আর উদ্বেগের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই বিএনপির প্রতি আহ্বান, দয়া করে যেন এ ধরনের কর্মসূচী বন্ধ করেন, সেই আবেদন এখনও রাখছি। শুধু পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ দেন, আমরা বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করছি। বার বার অনুরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশ্ন আসতে পারে যে আপনি এত বেহায়ার মতো বার বার কেন বলতেছেন। এখানে বেহায়া বা হায়ার ব্যাপার নেই। ছেলেমেয়েদের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ, আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বার্থই সব থেকে বড়। অনেক কৌশলে এগিয়ে যেতে হচ্ছে, তাই অনেক কথার উত্তর প্রকাশ্যে দিতে পারছি না। দিতে চাইও না, কারণ আমাদের কৌশলের সঙ্গে এগোতে হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী আবারও বিএনপি নেতাদের কাছে নতুন প্রজন্মের জন্য হলেও অন্তত পরীক্ষার দিনগুলোতে হরতাল বন্ধের দাবি জানান। বলেন, নাশকতা বন্ধ করে দেশবাসীকে আনন্দের সংবাদ দিন। হরতাল প্রত্যাহার করুন। কোন আবেদনেই বিএনপি নেতারা সাড়া না দেয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ মন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কাছে আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে হরতাল-অবরোধ পেছানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম দেশের ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে তারা হরতাল প্রত্যাহার করবে। কিন্তু আমাদের আশার কথা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছায়নি বা আমাদের আহ্বান তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাদের মনে বিবেক জাগ্রত হয়নি। তিনি আরও বলেন, গত ৬ বছর ধরে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সেটি বিএনপি নেত্রী জানেন। বিএনপি নেত্রী বলছেন তাদের আন্দোলন জাতির জন্য। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে তিনি জাতিকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কারণ একজন শিক্ষার্থী সকালে বলতে পারছে না বিকেলে কী হবে, আগামীকাল পরীক্ষা হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও বিএনপি নেত্রী বলছেন তাদের আন্দোলন নাকি জাতির জন্য। চলমান আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই কয়দিন যা চলছে, তা কোন আন্দোলন না। এটা আন্দোলনের দেশ। আমরা আগেও অনেক আন্দোলন দেখেছি। হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেবে। কিছুই চলবে না তবেই অবরোধ হয়। এখন হরতাল-অবরোধ শুধু প্রচারের মাধ্যমে। পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা বড় পৈশাচিক অমানবিক নৃশংস। এটা কিসের আন্দোলন? এর আগে হরতালের কারণে এসএসসির গত ২, ৪, ৮ ও ১০ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষাও পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই পরীক্ষাগুলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে নেয়া হচ্ছে। ২ ও ৪ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা যথাক্রমে ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি হয়েছে। এছাড়া ৮ ও ১০ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা যথাক্রমে আগামীকাল শুক্রবার ও পরিদন শনিবার নেয়া হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের এ পরীক্ষায় এবার ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে গত ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়েছিল। ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়। এবার এ লেভেল এবং ও লেভেলের একটি পরীক্ষাও হরতাল-অবরোধের কারণে পিছিয়েছে।
×