ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব হালে পানি পায়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা ও মন্ত্রীরা বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছেন। তারা বলেছেন, নাগরিক সমাজের প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। পেট্রোলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের সঙ্গে কোন সংলাপ হতে পারে না। তবে এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সোমবার সন্ধ্যায় চলমান সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ও গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন। মঙ্গলবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি আরও বলেছেন, পেট্রোলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের সঙ্গে কোন ধরনের সংলাপ হতে পারে না। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহণ নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যারা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস করে, তাদের সঙ্গে সংলাপে বসা মানে সেটাকে প্রশ্রয় দেয়া। এ জন্যই এ প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসা মানে আপোস করা। কোন দেশ যদি সন্ত্রাসের কাছে আপোস করে তাহলে সে দেশ টিকে না। সংলাপ করা হলে ভবিষ্যতে সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গী তৎপরতাকে উৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যদি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ হতো তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইএসের সঙ্গে বৈঠক করত। সংলাপের কথা বলে নাশকতাকারীদের আড়াল করে তাদের সঙ্গে সরকারকে এক কাতারে দাঁড় করানো হচ্ছে। এর আগে সোমবার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত তিনটি চিঠি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বরাবর পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে দেশের দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানের কারণে চলমান সঙ্কট অবসানের লক্ষ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর একদিন পরই নাগরিক সমাজের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এইসব ব্যক্তিবর্গ সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গী তৎপরতাকে আড়াল করার জন্য এবং যে দলটি নাশকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, শামসুল হুদা কেন, আর যে কেউ এ উদ্যোগ গ্রহণ করুক তা বাস্তব সম্মত নয়। আপনারা লক্ষ্য করেন, যিনি খালেদা জিয়াকে যে কথা বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে একই কথা বলেছেন, তার মানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কি আমরা এককাতারে দাঁড়ানো? বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে, নাশকতা চালায়, মায়ের কোল খালি করে, যারা নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা করে, তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নেই আসে না। তোফায়েল বলেন, পৃথিবীতে যদি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ হতো, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইএস-এর সঙ্গে বৈঠক করত। এই সংলাপের কথা যারা বলেছে ইনডাইরেক্টলি তারা সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এ সংলাপ করা হলে ভবিষ্যতে সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গী তৎপরতাকে উৎসাহিত করা হবে। সংলাপ না হলে চলমান সঙ্কটের সমাধান কিভাবে হবে-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনের আওতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনাকে নাকচ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি বলেছেন, রাজনীতির ভিলেনরাই আগুন সন্ত্রাস করছে। তাদের সঙ্গে মিটমাট সম্ভব নয়। আগে আগুন সন্ত্রাস বন্ধ করে তারা আত্মসমর্পণ করুক। তারপর আলোচনা হবে, তাদের বিচার কতটুকু এবং কিভাবে হবে তা নিয়ে। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হরতালবিরোধী এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ১৪ দলের শরিক নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ড. কামালের সংলাপের প্রস্তাব তাঁর ব্যক্তিগত বিলাসিতা। যারা সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা প্রকৃত অর্থে সমস্যার সমাধান চাইলে; আগে খালেদা জিয়াকে সহিংসতা থামাতে বলতেন।
×