ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবরোধ চলাকালে রাত ৯টার পর বাস চলাচল বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অবরোধ চলাকালে রাত ৯টার পর বাস চলাচল বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অবরোধ চলাকালে রাত ৯টার পর আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে যাত্রীবাহী কোনো বাস চলাচল করবে না। রাত ৯টার মধ্যে যাত্রীবাহী বাস গন্তব্যে পৌঁছবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে পণ্যবাহীসহ সব ধরনের ট্রাক চলাচল করবে দিন-রাত। এই সিদ্ধান্ত সোমবার রাত থেকে কার্যকর হয়েছে। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, অব্যাহত নাশকতার কারণে জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই রাত ৯টার পর বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি খুবই সাময়িক ব্যবস্থা। যে কোন সময় এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। বৈঠকে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের উত্তরবঙ্গসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্পটে সবচেয়ে বেশি নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এসব স্পটে অবরোধকারীদের প্রধান টার্গেট পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনে সহিংসতা। এরই ধারাবাহিকতায় পেট্রোলবোমা, ককটেল নিক্ষেপসহ পরিবহন জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক-মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সড়কে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তিনি মালিক সমিতির কাছে রাত নয়টার পর গাড়ি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান। সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মালিক সমিতি বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, বরিশালের গৌরনদী, গাইবন্ধার পলাশবাড়ি, তুলশীঘাট, নওগাঁ এবং রংপুর রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেসব স্থান পরীক্ষা করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার পর শিগগিরই দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করবে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে আরও বেশি সার্বক্ষণিক আনসার মোতায়েন করা হবে। শনিবার রাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে রাজারবাগে বৈঠক করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হকসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তারা। আলোচনা সভা শেষে আইজিপি শহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দূরপাল্লার মানুষের নিরাপত্তার জন্য আমরা পরিবহন মালিকদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম রাত ৯ টার পর বাস না চালানোর জন্য। কিন্তু মালিক পক্ষ তারা তাদের জীবিকা নির্বাহের স্বার্থে পরিবহন চালনা করবেন বলে দাবি করেন। নাশকতার ব্যাপারে মালিক পক্ষ ও পরিবহন শ্রমিকরা সতর্ক রয়েছেন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে মালিক পক্ষকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। পুলিশ প্রধানের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনার কথা বলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। এর প্রেক্ষিতে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন থেকে যেসব বাস ছাড়বে তাদের রাত ৯টার মধ্যে গন্তব্য পৌঁছতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ যেসব সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে সেখানে রাত-দিন বাস-ট্রাক চলবে। গত ৫ জানুয়ারির পর রাতে মহাসড়কে অবরোধ-হরতালকারীদের পেট্রোলবোমায় রংপুরের মিঠাপুকুর, গাইবান্ধা ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২১ জন দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমা হামলা রাতেই বেশি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মহাসড়কে বাস চলাচলের বিষয়ে রবিবারও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবরোধ শুরুর পর থেকেই সহাসড়কে বিজিবি-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সর্বশেষ মহাসড়কের প্রতি তিন কিলোমিটার অন্তর অন্তর মোতায়েন করা হয় আনসার। এরপরও চোরাগোপ্তা হামলাসহ নাশকতা থেমে নেই। বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিবের কর্মীরা যাত্রীবাহী পরিবহনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
×