ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধে দুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না

ব্যাপক লোকসানের মুখে ১২ সহস্রাধিক গো-খামারি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ব্যাপক লোকসানের মুখে ১২  সহস্রাধিক গো-খামারি

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের ১২ সহস্রাধিক গো-খামারি ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। টানা অবরোধের কারণে সরকারী-বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত দুধ ক্রয় করছে না। ফলে খামারিরা উৎপাদিত দুধ পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে খামারিদের প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানা গেছে। হরতাল অবরোধের ৩৩ দিনে লোকসানের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি টাকায়। জানা যায়, পাবনা-সিরাজগঞ্জ জেলায় সরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার আওতায় ৩৫০টি দুগ্ধ সমবায় সমিতি রয়েছে। সমিতিগুলোতে গো-খামার রয়েছে প্রায় ১২ সহস্র্রাধিক। এসব সমিতি প্রতিদিন গড়ে আড়াই লাখ লিটার দুধ সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া দু’টি জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গাভী পালন করা হয়। এসব গাভী থেকে আরও প্রায় এক লাখ থেকে সোয়া লাখ লিটার দুধ পাওয়া যায়। খামারি ও চাষীরা উৎপাদিত দুধ মিল্কভিটাসহ আফতাব, আকিজ, প্রাণ, এ্যামোফ্রেস মিল্ক, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় ঘোষ ও হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু টানা অবরোধের কারণে সরকারী ও বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন দুধ ক্রয় না করায় খামারি ও চাষীরা উৎপাদিত দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক চাষী ফেরি করে দুধ বিক্রি করছেন। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার তাদের জীবিকার পথ হিসেবে গাভী পালন ও দুধের ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। ফলে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার গো-খামার। এ অঞ্চলে প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ লিটার। এরমধ্যে এক লাখ ৩০ হাজার লিটার থেকে দেড় লাখ লিটার বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা, পৌনে দুই লাখ লিটার দুধ বিভিন্ন বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান, ঘোষরা ৫০ থেকে ৫৫ হাজার লিটার, দুই শতাধিক মিষ্টির দোকান ১৫ হাজার লিটার, হাট-বাজারে স্থানীয় ক্রেতারা প্রায় ১০ হাজার লিটার দুধ ক্রয় করে থাকেন। অবরোধের কারণে সরকারী ও বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন দুধ ক্রয় না করায় খামারি ও চাষীরা স্থানীয় হাট-বাজারে প্রতি লিটার দুধ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে খামারি ও চাষীদের প্রতি লিটার দুধে ২০ থেকে ২৫ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। খামারিরা জানিয়েছেন, স্থানীয় হাট-বাজার ও ঘোষদের দুধের চাহিদা রয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার লিটার। সরকারী ও বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয় করে থাকেন প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার লিটার। কিন্তু অবরোধের কারণে সরকারী ও বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একদিন পরপর দুধ ক্রয় করায় বিপুল পরিমাণ দুধ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। খামারিদের দুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এই বিপুল পরিমাণ দুধ স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় হাট-বাজারে সরবরাহ অনেক বেশি থাকায় খামারি ও চাষীদের পানির দাম দুগ্ধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে অব্যাহত লোকসানের মুখে অনেক খামারিই গরু বিক্রি করে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে। বেড়ার প্রাণ ডেয়ারির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক শরিফ উদ্দিন তরফদার জানান, আঞ্চলিক সংগ্রহ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তার অভাবে সড়ক পথে প্রাণ ডেয়ারি ফার্মের প্রধান কারখানায় দুধ সরবরাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
×