ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্থিরতায় হোঁচট খাবে প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অস্থিরতায় হোঁচট খাবে প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপি জোটের নাশকতার জেরে স্থবির হয়ে পড়েছে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। দুর্বল হতে শুরু করেছে অর্থনীতির খুঁটিগুলো। যে কারণে ২০১৪-১৫ সালের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের একটি ধাক্কা আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৩ সালের সহিংসতার পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তা আবার মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। অনিশ্চিত এ রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ একদমই নেই। অচলাবস্থা চলে এসেছে বিনিয়োগে। দেশের স্থিতিশীল একটি জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল তাতে এবার বড় ধাক্কা আসবে বলেই মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অচলাবস্থায় দেশটাই অচল হয়ে গেছে। যানবাহন চলতে পারছে না ঠিকভাবে, মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষক তাদের পণ্য উৎপাদন করে ঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারছে না। এক্সপোর্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটাই একটা অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এই একমাসেই প্রায় ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন খাতে। এভাবে চললে আমাদের দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে যে একটা ইতিবাচক ধার ছিল তা তো ভাঙবেই। উপরন্তু এ ক্ষত সারিয়ে উঠতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়।’ সম্প্রতি চলমান অবরোধসহ সহিংস কর্মসূচীর কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। এ বিষয়ে সচিবালয়ে একটি অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এবার আশা করেছিলাম জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে। তবে এই মুহূর্তে এটা অর্জনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’ অপরদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ড. আতিউর রহমান সে সময় সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ ও উৎপাদনে গতিশীলতা আসায় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অতিক্রম করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাজনৈতিক অস্থিরতায় এই প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনায় অনিশ্চয়তা ছায়া ফেলেছে।’ এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘আমরা যে সময়টা পার করছি তা দেশের অর্থনীতির জন্য একটা কালো ছায়া। আমাদের বিগত দিনের সব অর্জনকে বিনাশ করার জন্য যথেষ্ট। আর জিডিপিতে আমাদের প্রবৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে একেবারে গ্রাস করে ফেলছে। আর এর রেশটা দেশের অর্থনীতিকে অনেকদিন বয়ে বেড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ঠিক এখনই আমাদের এই ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। রাজনীতিবিদদের উচিত মাঠে এভাবে লড়াই না করে আলোচনার টেবিলে বসা। তাহলে হয়ত কিছুটা মুক্তি পাবে দেশের অর্থনীতি।’ অর্থনীতিকে বাঁচাতে একই পরামর্শ দিয়েছেন ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এভাবে রাস্তায় মারামারি করাটা অর্থনীতির জন্য শুধু ক্ষতিই। এ থেকে বের হতে হলে অবশ্যই রাজনীতিবিদদের উচিত আলোচনায় বসা।
×