ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালিঙ্গার কাছে চাপ বলে কিছু নেই

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মালিঙ্গার কাছে চাপ বলে কিছু নেই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আধুনিক স্বল্পদৈর্ঘীয় ক্রিকেটের অন্যতম ভয়ঙ্কর পেসার। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন নেই এতটুকু। বিশ্বকাপে দেখা যাবে বিজাতীয় এ্যাকশনের অধিকারী এই লঙ্কান সেনসেশনাল বোলারকে? লাসিথ মালিঙ্গাকে ঘিরে গত কয়েক মাস ভক্তদের আকুল প্রশ্ন এটি। বিশ্বকাপের চার দিন আগে অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিলেন, শনিবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচেই দেখা যাবে ভয়ঙ্কর মালিঙ্গাকে। তবু প্রশ্নÑ দীর্ঘ ইনজুর কাটিয়ে এমন বড় আসরে স্বরূপে দেখা যাবে তাকে, একটুও কী চাপ থাকবে না? অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীকে আশ্বস্ত করে মালিঙ্গা নিজেই বলেছেন, চাপ বলে কিছু নেই। বোলিংটা তার কাছে কেবলই আনন্দের অনুষঙ্গ। ভাল লাগে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের প্রাণ সংহার করতে! ‘আমি জানি না চাপ বলতে কি বোঝায়। বল হাতে লক্ষ্য একটাই সময়কে জয় করা। মুক্তমনে নিজের সেরাটা দিতে পছন্দ করি। ভাল লাগে শক্তিধর প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের প্রাণ সংহার করতে। অনেকে ইনজুরি নিয়ে কথা বলছেন। এ নিয়েও বাড়তি চাপ নেই। হয় খেলতে পারব, নয় তো নয়! খেললে লক্ষ্য সেরাটা দিয়ে দেশের জয়ে সাহায্য করা।’ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপ জয় করে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় ১৯৯৬-এর চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। তাতে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান মালিঙ্গার। টি২০ বিশ্বকাপে তো অধিনায়কই ছিলেন। এরপরও মালিঙ্গাকে নিয়ে চাপের প্রসঙ্গটি আসে ইনজুরির জন্য। সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ৩০ আগস্ট, ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর পেছনে ইনজুরির জন্য সেপ্টেম্বরের শেষে অস্ত্রোপচার। ধারণা করা হয়েছিল আড়াই মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজে অন্তত দু-একটি ম্যাচে হলেও হয়ে যাবে ফিটনেস টেস্ট। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন রকম ম্যাচ খেলতে পারেননি ৩১ বছর বয়সী গলে হিরো। সে অর্থে টানা ছয় মাস ক্রিকেটের বাইরে থেকে হুট করেই বিশ্বকাপের বিশ্বযজ্ঞে কেমন করবেন, সেই প্রশ্নটা থাকছেই। আর সেটিকেই আত্মবিশ্বাসের তোপে উড়িয়ে দেন ভয়ঙ্কর এই পেসার। ইনজুরি থেকে সেরে ওঠা প্রসঙ্গে মালিঙ্গা আরও যোগ করেন, ‘অনুশীলনে গত কয়েকদিন পুরো রানআপ নিয়ে বল করছি। সত্যি বলতে খুব ভাল অনুভব করছি। মনে হচ্ছে মাঠে নেমেই আগের ছন্দটা ফিরে পাব। বিশ্বকাপে মূল লড়াইয়ের আগে অনন্ত দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। ঠিক মতো সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য চিকিৎসক, সাপোটিং স্টাফসহ সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ।’ অধিনায়ক ম্যাথুসও মালিঙ্গার ফেরা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারে মালিঙ্গা একাধিকবার ইনজুরি মোকাবেলা করে ঠিকই স্বরূপে ফিরেছে। ওর মনের জোর অনেক। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতে দলের সব খেলোয়াড়কের পরখ করে নেয়ার সুযোগটা কাজে লাগবে। মাঠে নামতে মুখিয়ে আছে সে।’ আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ও বুধবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে শিরোপা প্রত্যাশী লঙ্কানরা। মালিঙ্গাকে নিয়ে এত আলোচনা কেন? ক্রিকেট দুনিয়া জানে, গতির ঝড়ের সঙ্গে দুর্দান্ত সব ইয়র্কার নিয়ে ব্যাটসম্যানদের জন্য মূর্তিমান এক আতঙ্ক তিনি। বিশ্বকাপেও ডেথ ওভারের সেরা বোলার হতে পারেন তিনি। ইংলিশ টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান জোস বাটলার যেমন বলেন, ‘বল ভেতরে ঢুকাতে ও ইয়র্কার দিতে মালিঙ্গার জুড়ি নেই। ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ওর ডেলিভারিগুলো মোকাবেলা করা সত্যি কঠিন। আমি কি তাকে স্কুপ মারতে পারব? হতে পারে এটাই শেষ অস্ত্র!’ উল্লেখ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একই গ্রুপে আছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। সøগ ওভারে মালিঙ্গাকে খেলা সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করেন বাটলার-সতীর্থ গ্যারি ব্যালান্স। তিনি যোগ করেন, ‘মালিঙ্গার বল আমি খুব বেশি মোকাবেলার করিনি। সে বল রিভার্স করতে পারে, আছে আচমকা সব ইয়র্কার, সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে সেরাদের সেরা হয়ে উঠতে পারে সে।’ আরেক ইংলিশ তারকা মঈন আলীও শেষ দিকের বোলার হিসেবে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখেন মালিঙ্গাকে। ‘আমি তো বলব সøগ ওভারে অন্যদের চেয়ে ও এক মাইল এগিয়ে। কাউন্টি ক্রিকেটে একবার আমি তার বিপক্ষে খেলেছি। ওফ, আসলেই ভয়ঙ্কর।’ ২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানো মালিঙ্গা শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছেন ১৭৭ ওয়ানডে (২৭১ উইকেট) ও ৫৭ টি২০ (৬৮ উইকেট)।
×