ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ-পাকিস্তান মুখোমুখি আজ;###;সিডনিতে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা;###;বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ- পাকিস্তান মুখোমুখি আজ

আত্মবিশ্বাস আছে, ভাল খেলব

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আত্মবিশ্বাস আছে, ভাল খেলব

মিথুন আশরাফ ॥ এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল কেমন করতে পারে, কত দূর যেতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হলেই। তবে কিছুটা আঁচ আজ থেকেই মিলে যাওয়া শুরু করবে। বিশ্বকাপের অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে যে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। আজ সিডনির ব্ল্যাকটাউন অলিম্পিক পার্ক ওভালে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলটি হচ্ছে পাকিস্তান। এ ম্যাচটির পর বৃহস্পতিবার একই ভেন্যুতে একই সময়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ। এ দুটি ম্যাচ শেষেই অনেকটা বোঝা যাবে বাংলাদেশ কত দূর যাবে। তবে বিশ্বকাপে যে বাংলাদেশ দল ভাল করবে সেই আত্মবিশ্বাসের সুর এখনই আছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কণ্ঠে। রবিবার সিডনিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমরা ভাল করব।’ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে জয় ছাড়া আর কোন ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ, জিতেছে মাত্র ১টি ম্যাচ। বাকি সব ম্যাচেই হেরেছে। এবার বাংলাদেশের সামনে একটি সুযোগ দাঁড় হয়েছে। হোক সেটি প্রস্তুতি ম্যাচ। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ইতিহাসের পাতায় আরেকটি জয়ই শুধু যুক্ত হবে না, বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলতে নামার আগে আত্মবিশ্বাসও পুঁজি করে নিতে পারবে। ব্রিসবেনে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে হেরে যে আত্মবিশ্বাসে সামান্য হলেও চিড় ধরেছে। সেই আত্মবিশ্বাস আবারও ফিরে পাবে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের দেখে কোনভাবেই মনে হয়নি ব্রিসবেনে হারা দুই প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে কোন ভাবনা আছে ক্রিকেটারদের। ব্রিসবেন থেকে সিডনিতে আসার পথে ক্রিকেটাররা বিমানে যেভাবে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় সেলফি তুলেছেন, তাতে বোঝাই গেছে ক্রিকেটাররা এখনও ফুরফুরে মেজাজেই আছেন। এ মেজাজ নিয়েই রবিবার সিডনিতে অনুশীলনও করেছেন। সেই সঙ্গে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলতে নামবেন। এ ম্যাচে নামার আগেই বিশ্বকাপ ভাবনা নিয়ে আইসিসির বেঁধে দেয়া অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন মাশরাফি। সেই সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাল সম্ভাবনার কথাই বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে এ জন্য দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের দিকেই দৃষ্টি দিচ্ছেন, ‘দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা যদি জ্বলে উঠতে পারে আর তরুণ ক্রিকেটাররা তাদের কাক্সিক্ষত সাহায্য করতে পারে, এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাহলে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না।’ দলের ক্রিকেটারদের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ দল একটি লক্ষ্যও সেট করেছে। সেটি নির্দিষ্ট কোন দলকে হারানোর লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে না। ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করবে। তাই জানিয়েছেন মাশরাফি, ‘কোন নির্দিষ্ট দলকে হারানোর টার্গেট করে বিশ্বকাপ খেলতে নামবে না বাংলাদেশ। কেননা, এতে করে দল চাপের মুখে পড়তে পারে। আসলে ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ।’ আর পাঁচদিন পরই শনিবার থেকে শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের একাদশ আসর। বাংলাদেশ এই আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে হবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তবে মাশরাফি মনে করছেন এখন থেকেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ লড়াই শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে মাশরাফি বলেছেন, ‘গত দুই মাসে আমরা যথেষ্ট পরিমাণ ক্রিকেট খেলিনি। তবে এর আগে দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছি এবং ঘরোয়া ক্রিকেটেও আমাদের সময়গুলো ভাল কেটেছে। গত দুই সপ্তাহ ব্রিসবেনে আমরা অনুশীলন করেছি এবং দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছি। সামনে আরও প্রস্তুতি ম্যাচ রয়েছে। তাই আমরা আশা করছি যে এখানকার (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে) কন্ডিশনে আমরা মানিয়ে নিতে পারব এবং বিশ্বকাপে আমাদের সেরাটা উপহার দিতে পারব।’ বাংলাদেশের এবারের দলটি তারুণ্য নির্ভর। ১৫ সদস্যের দলে মাশরাফিসহ মাত্র ৪ ক্রিকেটারের (সাকিব, মুশফিক, তামিম) এটি হবে তৃতীয় বিশ্বকাপ। দুই ক্রিকেটারের (মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, রুবেল হোসেন) জন্য এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। বাকি ৯ ক্রিকেটাররেই (এনামুল হক বিজয়, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, মুমিনুল হক, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান রুম্মন, সৌম্য সরকার) এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ অভিষেক। এমন তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে বাংলাদেশ কত দূর যেতে পারবে? এ বিষয়ে মাশরাফি বলেছেন, ‘অবশ্যই বিষয়টি কঠিন হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা যথেষ্ট প্রতিভাবান। এটা ঠিক যে তারা যথেষ্ট পরিমাণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি। তবে তাদের কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। আশা করি বিশ্বকাপে তারা ভাল করবে। সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ ও নাসিরের মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটাররা আমাদের দলে রয়েছে। যদি তারা জ্বলে উঠতে পারে এবং তরুণ ক্রিকেটাররা তাদের সহায়তা করতে পারে, বিশ্বকাপে ভাল করার ব্যাপারে অবশ্যই বড় সুযোগ থাকছে আমাদের।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক এও বুঝিয়ে দিলেন কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন বাস্তব নাও হতে পারে, ‘সত্যি করে বলতে গেলে, সবাই প্রত্যাশা করছে যে আমরা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলব। কিন্তু এটা কঠিন হবে। কেননা, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড ছাড়াও দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে চাইলে অন্তত আরও দুটি বড় দলকে হারাতে হবে আমাদের। এখানকার পরিবেশে আমরা অভ্যস্থ নই, কিন্তু কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কোন নির্দিষ্ট দলকে হারানোর টার্গেট করছি না আমরা। কারণ এতে করে আমরা চাপের মধ্যে পড়ে যাব। ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলব; আশা করি, আমরা ভাল করব।’ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ রয়েছে গ্রুপ-‘এ’তে। এই গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলগুলো হচ্ছে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড, স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে ভাল করার রসদ যোগাতে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচকে গুরুত্ব সহকারেই নিচ্ছে বাংলাদেশ। মাশরাফি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে। আমরা এটাকে অনেক বেশি গুরুত্ব সহকারেই নিচ্ছি। তবে আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলব।’ বাংলাদেশ বিশ্বকাপে কত দূর যাবে তা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ শেষেই বোঝা যাবে।
×