ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরাজিত শক্তির শেষ চেষ্টা!

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 পরাজিত শক্তির শেষ চেষ্টা!

দেশ আবার এসে দাঁড়িয়েছে ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট এবং তারপর বার বার জাতির পতাকা খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুনÑ স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। এইবার তারা মরিয়া। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একাট্টা। শকুন-নখরে খামচে ধরা লাল-সবুজ পতাকা এবার যেন তারা ছিন্নভিন্ন করেই ছাড়তে চায়। কিন্তু একাত্তরের আলোয় স্নাত একজন মুক্তিযোদ্ধাও বেঁচে থাকতে সেই দুরাশা কি পূরণ হবে হায়েনাদের? সেজন্যেই ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজেকে নিষ্ক্রিয় রাখা সমীচীন নয়। প্রতিবাদ-প্রতিরোধে জ্বলে উঠতে হবে আবার বীর বাঙালীকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসিক্ত সকল মানুষকে। মাসাধিককাল ধরে নাশকতা চালাচ্ছে যে শক্তিটি সেটি যে বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বিশ্বাসী নয়, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সারাদেশে পেট্রোলবোমার সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে। বিগত ৩৩ দিনের ভেতর দুয়েকটি দিন বাদে প্রতিদিনই তারা পেট্রোলবোমা ছুড়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। পেট্রোলবোমার লাগাতার সন্ত্রাস এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে এমন নির্মম অগণতান্ত্রিক পৈশাচিকতাও প্রত্যক্ষ করেনি মানুষ। সাধারণ মানুষকেই টার্গেট করে পেট্রোলবোমা ছোড়া হচ্ছে। সেই বোমার আগুনে পুড়ে বহু মানুষ কয়লা হয়ে গেছেন। যাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হননি, তাঁদের স্থান হয়ে উঠেছে বার্ন ইউনিট। সেখানে তীব্র অসহ্য যন্ত্রণার ভেতর সময় যাচ্ছে তাঁদের। মানুষকে এমন বীভৎস উপায়ে কষ্ট দেয়ার নাম কি রাজনীতি? এটা রাজনীতি নয়, এটা সন্ত্রাসী কর্মকা-। এ নিশ্চিতভাবেই মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখব প্রায় সব দেশকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। জঙ্গীবাদ তথা সন্ত্রাসবাদের ছায়া হুমকিস্বরূপ বিরাজ করছে প্রায় সর্বত্র। বাংলাদেশকে সেই একই ধারায় নেয়ার নীলনক্সা বাস্তবায়নের চেষ্টায় এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজনীতির পোশাক পরিহিত নব্য ও পুরনো সন্ত্রাসী দুটি দল। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশকে অবশ্যই যে কোন মূল্যে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা আজ শুধু মানুষ পুড়িয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তাদের সহিংসতা ও নাশকতায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন ঘটছে বিপুল পরিমাণে। ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যত বিপন্ন হয়ে উঠেছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই শিক্ষার্থী, অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যত নাগরিক। খালেদা জিয়া কর্তৃক তাদের শিক্ষাজীবন নাশ এবং নির্বিচারে মানুষ মারার সন্ত্রাসী কৌশল অবরোধ-হরতাল অব্যাহত রাখার ঘোষণা স্পষ্ট করে দিয়েছে পরাজিত শক্তির অন্তিম অপচেষ্টার অন্দরবাহির। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবীর সাম্প্রতিক লেখায় যথার্থভাবেই বর্তমান সন্ত্রাস-বিপর্যস্ত সময়ে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির দ্বান্দ্বিক অবস্থানটি উঠে এসেছে। লেখা হয়েছে : ‘প্রতিটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলার জন্য কেন অপেক্ষায় নেই ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক, যাঁরা রাত জেগে সড়ক পাহারা দেবেন? আজকের যে লড়াই, তা বাংলাদেশের আত্মার লড়াই। এর আগে কখনও এমন স্পষ্টভাবে শুভ ও অশুভের লড়াই প্রকাশিত হয়নি।’ বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে একাত্তরের পরাজিত শক্তির শেষ চেষ্টাটি ব্যর্থ করতে দল ও মতের উর্ধে উঠে স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে তথা দেশবাসীকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সময় কিন্তু বয়ে যাচ্ছে।
×