ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া শিরোপা ফয়সালা আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া শিরোপা ফয়সালা আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমরা ফাইনাল জেতব। আর ফাইনাল জেতার জন্য আমাদের যা করার দরকার, আমরা তা করব। আমি টুনার্মেন্টের সেরা খেলোয়াড় হতে চাই।’ নিজের ফেসবুকে এমনটাই লিখেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কৃতী উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। মানুষ বাঁচে আশা নিয়ে। স্বপ্নের পরিধি প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হয়। বাংলাদেশ দলেরও তাই হয়েছে। প্রথমে লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল খেলা। তারপর ফাইনাল খেলা। আর এখন চোখ শিরোপায়। আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর যবনিকাপাত হতে আর মাত্র এক ম্যাচের অপেক্ষা। আর তা হবে আজ রবিবার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে, বিকেল ৫টায়। কাক্সিক্ষত শিরোপা হাতের মুঠোয় নিতে চূড়ান্ত মহারণে অবতীর্ণ হবে ১৬৫ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত স্বাগতিক বাংলাদেশ বনাম ১৫৪ র‌্যাঙ্কিংধারী ‘মালয়ান টাইগার’ খ্যাত মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২৩ জাতীয় ফুটবল দল। গ্রুপ পর্বে এই মালয়েশিয়ার কাছেই ০-১ গোলে হেরে অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয়, রবিবারের ফাইনালে মালয়েশিয়াকে হারিয়ে বদলা নেয়া এবং ট্রফি জেতাÑ দুটোই অর্জন করতে পারে কি না ক্রুইফের শিষ্যরা। মজার ব্যাপার, এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচের দু’দলই আবার খেলছে সমাপনী ম্যাচে, তাছাড়া দু’দলই ছিল একই গ্রুপে! বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন ঘোষণা করেছেন, সেমিতে জেতায় বাংলাদেশ দল পুরস্কার পাবে ৫০ লাখ টাকা। ফাইনালে জেতলে পাবে আরও ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া ট্রফি জেতলে বাংলাদেশ দলকে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার বোনাস দেবেন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের। এর আগে অবশ্য গ্রুপ পর্বে মালয়েশিয়াকে হারাতে পারলে দলকে ৩০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। কিন্তু ম্যাচে হেরে সে পুরস্কার জেততে ব্যর্থ হন মামুনুলরা। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচ খেলেছে ৩টি ফিফা স্বীকৃত ম্যাচ। দুটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে, একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে। ১৯৯৭ সালে ১৬ মার্চ শাহ আলমে ০-২ এবং এবং একই বছরের ৩১ মার্চ জেদ্দায় ০-১ গোলে। তবে দু’দল সার্বিকভাবে মুখোমুখি হয়েছে ৮ ম্যাচে। তাতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১টিতে, মালয়বাহিনীর জয় ৬টিতে, বাকি ১ ম্যাচ ড্র হয়। রবিবার ফাইনালে মালয়েশিয়া যুবদলকে হারাতে পারলেই ২৬ বছর পর বাংলাদেশ ফিফা স্বীকৃত কোন টুর্নামেন্টে হবে আবার চ্যাম্পিয়ন। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রেসিডেন্টস গোল্ডকাপ’-এর ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিভার্সিটি দলকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চারজাতি আমন্ত্রণমূলক ট্রফি, ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস, ২০০৩ সালে সাফ গেমস শিরোপা জিতলেও এগুলো ফিফা স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসরটি ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হওয়াতে দীর্ঘদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়শিপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেবার ভারতের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের ফাইনালে আফগানিস্তানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ স্বর্ণপদক জেতলেও সেটা ছিল বাংলাদেশের অনুর্ধ-২৩ দল। যে কোন পর্যায়ে বাংলাশের সর্বশেষ শিরোপা অর্জন ২০০৩ সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন গোল্ডকাপে। সেবার অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের অধীনে বাংলাদেশ ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে ৫-৩ (১-১) গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের এটি তৃতীয় আসর। প্রথম দুটি আসরের ফাইনালে দর্শক ছিল স্বাগতিকরা। ১৯৯৬ সালে প্রথম আসরের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল মোহামেডান ও আবাহনী। সেমিফাইনালে মোহামেডান-আবাহনী উভয় দলই হেরেছিল টাইব্রেকারে। ১৯৯৯ দ্বিতীয় আসরে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। স্বাগতিকদের বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে পরিপূর্ণ দর্শকদের (স্টেডিয়ামের ২৫ হাজার সিটের একটাও খালি ছিল না) এ আসরের সেমির দ্বিতীয় ম্যাচে ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরীর দেয়া একমাত্র গোলে স্বাগতিক বাংলাদেশ ১-০ গোলে ‘দ্য ওয়ার এলিফ্যান্টস’ খ্যাত থাইল্যান্ড অনুর্ধ-২৩ জাতীয় দলকে হারিয়ে পৌঁছে যায় স্বপ্নের ফাইনালে। থাই যুবাদের হারানোর পর জানা যায় দীর্ঘ ২৬ বছর পর তাদের যে কোন দলকে হারাতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ! ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলা ছিল সেটি। ম্যাচ হয়েছিল এই ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই! তারিখ ছিল ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৩-১ গোলে। টুর্নামেন্টের ‘এ’ গ্রুপের দল বাংলাদেশ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারে নাম লেখায় (২ খেলায় ১ জয় ও ১ হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে)। সিলেটে প্রথম ম্যাচে তারা ০-১ গোলে ‘মালয় টাইগার্স’ খ্যাত মালয়েশিয়ার কাছে হারলেও ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে পরাভূত করে। সেমিতে একই ব্যবধানে হারায় থাইল্যান্ডকে। পক্ষান্তরে মালয়েশিয়া ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে ওঠে। ২ খেলায় পূর্ণ ৬ পয়েন্ট অর্জন করে তারা। প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় স্বাগতিক বাংলাদেশকে। তার পরের ম্যাচে ২-০ গোলে পরাভূত করে শ্রীলঙ্কাকে। সেমিতে ১-০ গোলে হারায় সিঙ্গাপুরকে।
×