ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যারিস্টার শেখ নাইম

পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এই অমানবিক আচরণ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এই অমানবিক আচরণ

বিএনপির অবরোধের মধ্যে হরতালের কারণে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময়সূচী কিছুটা হোঁচট খাওয়ার পর পরীক্ষা কেন্দ্র্রে যাওয়া নিয়ে নিরাপত্তা আতঙ্কের মধ্যেই গত শুক্রবার প্রথম পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দেশের প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে শুরু হওয়া নিয়ে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকরা এক হতাশাজনক অবস্থার সম্মুখীন ছিল। এভাবে অবরোধের সঙ্গে অতীতে কোন দল হরতাল বা হরতালের সঙ্গে অবরোধ কর্মসূচী আহ্বান করেনি। এবারই প্রথম বিএনপি এ অভিনব কাজটি করল। অবরোধের পাশাপাশি হরতালের ডাক দিল এ দলটি। অবরোধের সঙ্গে হরতাল ডেকে বেগম জিয়া প্রমাণ করলেন, তাঁর আহূত অবরোধ কর্মসসূচী ব্যর্থ হয়েছে। অবরোধ যদি সফল হতো, জনগণ যদি বিএনপির অবরোধে সাড়া দিত, তাহলে হরতাল ডাকার কোন প্রয়োজন পড়ত না। একইভাবে হরতালের সঙ্গে টানা অবরোধ অব্যাহত রেখে ম্যাডাম প্রমাণ করলেন তাঁর ডাকা হরতালও ব্যর্থ হয়েছে। তবে বিএনপির আহূত অবরোধ ও হরতালে পুড়ে ছাই হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহীদের তাজা রক্ত, ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম, অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বেগম জিয়া অবরোধ ও হরতালের নামে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছেন। ৬ জানুয়ারি থেকে প্রায় এক মাস ধরে বাংলার ১৬ কোটি মানুষকে জিম্মি করার হীন চেষ্টা তিনি করে যাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। তাছাড়া কয়েক শ’ যানবাহন পোড়ানো হয়েছে। পেট্রোলবোমা হামলা এবং সন্ত্রাসী হামলায় আহত মানুষের সংখ্যা সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলছে। দেশের শিক্ষার্থীরা আজ রাস্তায় নেমে বলছে- পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হতে চাই না। রাস্তায় নেমে এসেছেন অভিভাবকরা, পেশাজীবীরা। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টনক নড়ছে না। অবরোধ-হরতাল কর্মসূচী তারা বজায় রেখেছে। এটা কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের মনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব যে ফেলবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের প্রতি কেন এ ধরনের অমানবিক আচরণ করছেন, তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত করে কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছেন, সেই প্রশ্ন আজ শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে। দেশবাসীর একই প্রশ্ন। বিএনপির কর্মসূচীর আওতায় পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতামূলক তৎপরতা দেখে ব্রিটিশ কাউন্সিল আন্তর্জাতিকমানের এ লেভেল, ও লেভেল পরীক্ষার কেন্দ্র বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে অন্যদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এসব পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যদেশে সরিয়ে নেয়া হলে বিপাকে পড়বেন এ দেশেরই মেধাবী শিক্ষার্থীরা, তাদের অভিভাবকরা ও শিক্ষকরা। আর তাহলে এর জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী থাকবেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ক্ষমতার লোভে বেগম জিয়া পেট্রোলবোমা ও আগুনে পোড়ানোর ভয় দেখিয়ে জনসাধারণ এমনকি পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করতে চাইছেন। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধের নামে তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। আজ বিএনপি নেত্রীর এই অমানবিক আচরণের জন্য ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। তাদের মনে পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হওয়ার ভয়। বিএনপি আজ জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এক অমানবিক ও ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ রকম পরিবেশের একটি চিত্র আমরা দেখতে পাই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সে সময় তাদের দোসর জামায়াত নেতাদের সহযোগিতায় নির্বিচারে শিক্ষার্থী, শিক্ষাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। আজ জামায়াতকে পাশে নিয়ে বিএনপি নেত্রী অবরোধ-হরতাল ডেকে দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছেন। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়টিকেও কোন ধরনের বিবেচনায় না নিয়ে তিনি হরতাল দিয়েছেন। তার মানে বিএনপি চাইছে পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করতে। বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিবিসি সংলাপে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন- কিসের পরীক্ষা, কিসের কী? তার মানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা-পড়াশোনা দরকার নেই। বিএনপি সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য হরতাল-অবরোধ করছেন। সংলাপে বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক মৃত্যুর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে বেগম জিয়ার অফিস-কাম-বাসভবনে গিয়েছিলেন। কী ব্যবহার করেছেন তিনি। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কি আচরণটা করেছেন বেগম জিয়া। সম্প্রতি বিশ্ব এজতেমার সময় মুসলমানদের সঙ্গে এই একই রকম অমানবিক আচরণ করেছে বিএনপি। টঙ্গীতে মুসলিমদের বিশ্ব এজতেমা চলাকালীন অবরোধ দিয়ে তারা প্রমাণ করল যে, মুখে তাদের ইসলাম, বাস্তবে নয়। এজতেমার সময় মুসলমানরা বেগম জিয়ার কাছে অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি করেছিলেন। কিন্তু তিনি এ দাবি না মেনে অবরোধের সময় আরও বাড়িয়ে দেন। মারাত্মক কষ্ট ভোগের মধ্যে মুসলমানরা টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমায় জড়ো হয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। এ দেশের জনতা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপির ডাকা অবরোধ। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে আজ তারা যে পথ অবলম্বন করছে তা গণতন্ত্রের সঙ্গে কোনভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যে কোন সচেতন নাগরিকই বলবেন যে, তারা যা করছে তা সন্ত্রাস। এর কোন স্থান গণতন্ত্রে নেই, সভ্য সমাজে নেই। তবে সংলাপে বসতে চাইলে বিএনপিকে সবার আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে জামায়াত-জঙ্গীবাদ সঙ্গত্যাগ, হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার, গুপ্ত হামলা বন্ধ করতে হবে। অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও সহিংসতার পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসলেই আমার মনে হয় সরকারের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া এ দেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করেছিলেন। সহসাই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। গ্রামপর্যায়ে পৌঁছে গেছে ডিজিটাল সেবা। সৌদি আরবের শ্রমবাজার খুলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ। টানা সাত বছর এ বাজার বন্ধ ছিল। এখন সৌদি আরবে কাজ নিয়ে যেতে জনপ্রতি মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। বেসরকারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও সেখানে কর্মী পাঠাতে পারবে। তবে তারা কাজ করবে সরকারের এজেন্ট হিসেবে। ভিসা, মেডিক্যাল ফি, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো কর্মীদের বিমানভাড়া সবই দেবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। আগের আকামা পদ্ধতির পরির্বতন হওয়ায় ভিসা ঠিক রেখে কর্মস্থল পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন বাংলাদেশীরা। এ বাজার ফিরে পাওয়া বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সুখবর। লেখক : আইনজীবী
×