ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিয়ে হলো না তার

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিয়ে হলো না তার

যৌতুক এখনও সমাজের একটি বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে আইন আছে, প্রতিরোধে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মকা-ও সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে, তারপরও যৌতুক এখনও সৃষ্টি করছে সমস্যা। এটি সারাদেশের সমস্যা। দেশে যত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগই এই যৌতুকের কারণে। এই যৌতুকের কারণে এসিড নিক্ষেপ, গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়াসহ নানা অত্যাচার চালানো হয় নারীর ওপর। যৌতুক দেয়া-নেয়া দুটিই আইনত দ-নীয় অপরাধ। তারপরও কমছে না পাত্রপক্ষের অর্থ আদায়ের নামে যৌতুকের ঘটনা। তেমনি এক ঘটনার খবর শুক্রবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, বিয়ের সব আয়োজনই শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু নগদ দেড় লাখ টাকা যৌতুকের জন্য বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না ইসমত আরার। বিয়ের আগের দিন মেয়েটির হাতে মেহেদির রং লাগলেও শেষ পর্যন্ত কেবল যৌতুকের কারণে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল তার। বরকে যৌতুকের আগাম টাকা দিতে না পারায় ইসমত আরার পরিবারের এই দুর্গতি। জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এক গ্রামের মেয়ে ইসমত আরার বিয়ে ঠিক হয় রাজশাহী নগরের এক ছেলের সঙ্গে। উভয় পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ছিল বিয়ের দিন। বুধবার বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে যাওয়া হয় যৌতুকের টাকা নিতে। কিন্তু মেয়ের বাবা যৌতুকের পুরো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বর পক্ষ বিয়ে ভেঙ্গে দেন। শেষ পর্যন্ত বিয়ে হলো না। সামাজিক মূল্যবোধের যে কতটা অবক্ষয় ঘটেছে, পারিবারিক বন্ধন কতটা শিথিল হয়েছে এবং মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলী কতটা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, তা এমন সব ঘটনাই প্রমাণ করে। এই সামাজিক অবক্ষয় দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এই উপসর্গ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যৌতুক প্রথা রোধে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে যে আইন রয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যৌতুক সমাজে যেন নারীর প্রতি একটি অভিশাপ। যৌতুকের জন্য যেমন বহু নারীর বিয়ে হয় না, তেমনি বিয়ে হলেও এই যৌতুকের কারণেই সংসার সুখের হয় না। বহু নারীকে এজন্য স্বামীর ঘরে অপমান ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়। বহু নারীকে জীবনও দিতে হয়। এই প্রথার বিরুদ্ধে আইনের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধও জোরদার করা দরকার। এ অভিশাপ থেকে সমাজকে পুরোপুরি মুক্ত করা প্রয়োজন।
×