ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত-বিএনপি নাশকতা চালিয়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে ॥ আজ রিপোর্ট প্রকাশ

আর্থিক সব সূচকে ভাল অবস্থানে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আর্থিক সব সূচকে ভাল অবস্থানে বাংলাদেশ

এম শাহজাহান ॥ আর্থিক খাতের সব সূচকে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয়, সরকারী বিনিয়োগ, বাজেটের আকার, প্রবাসী আয়, বিদ্যুত উৎপাদন বেড়েছে। এই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিক রয়েছে, আমদানি-রফতানি বেড়েছে এবং কমেছে দারিদ্র্য। সামাজিক সূচকেও উন্নতি করছে বাংলাদেশ। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছরেও অর্থনীতির এসব সূচকে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু গত এক মাসে সন্ত্রাসীদের নাশকতা ও নৈরাজ্যের কারণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের এসব ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এসবের মধ্যেও কি অবস্থায় রয়েছে দেশের অর্থনীতি সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আজ শনিবার প্রকাশ করা হবে। এতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা এবং সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুপুর বারোটায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। জানা গেছে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে অর্থের যোগান স্বাভাবিক রাখতে রাজস্ব আহরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বিগত বছরের ন্যায় ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর অর্থনীতির অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এজন্য রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- কঠোর হস্তে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি সন্ত্রাসী কর্মকা- নির্মূলে জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। তাঁর এই নির্দেশনার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশি জোর দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নও যাতে শতভাগ করা যায় সে ব্যাপারেও কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তাদের এই সহিংসতা শীঘ্রই বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব কিছু করা হবে। অর্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়েছে। অর্থনীতির সূচকসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কর্মকা- প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি মানব উন্নয়নসূচক এবং সামাজিক উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির পাশাপাশি ব্যাষ্টিক অর্থনীতির সূচকসমূহও দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব নির্দেশ করে থাকে। গত অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ ছিল তা চলতি অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৭৫ পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে তা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। বিদেশ থেকে প্রেরিত প্রবাসীদের রেমিটেন্সের পরিমাণ হচ্ছে ১৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হচ্ছে বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি। এই পররাষ্ট্রনীতিও অর্থনৈতিক অগ্রগতির উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় জাপান, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব দিক দিয়ে অর্থনীতির সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদেই সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ ও ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। আর সরকারের ধারাবাহিকতায় এখন সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণের কাজ চলছে। এছাড়া ভিশন-২১ সামনে রেখে ইতোমধ্যে সরকার আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ওই সময়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করে শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসা, দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯-১০ এর মধ্যে নিয়ে যাওয়াসহ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি অর্জনে সাফল্য পাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে রাজস্ব আয় বাড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে যখন এসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ঠিক সেই সময় বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে তা বাস্তবায়নে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। সূত্র মতে, বর্তমান সরকারের মেয়াদে গত ছয় বছরে দেশী-বিদেশী প্রায় ৬ হাজার বড় শিল্প নিবন্ধিত হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৫ লাখ বেকার মানুষের। এছাড়া ওই সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন কলকারখানা ফের চালু করা হয়েছে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার পাশাপাশি আপৎকালীন সময়ের জন্য খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা ১৪ থেকে ১৯ লাখ টনে উন্নীত করা হয়। এছাড়া শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণে সংশোধিত শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দু’দফায় ১৬০০ টাকা বাড়িয়ে ৫৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সরকারী চাকুরেদের বেতন দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে গৃহীত অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুত চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ২০২১ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। ওই সময়ের মধ্যে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নিয়ে আসা, দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
×