ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বেঙ্গল টাইগার্স বনাম দ্য ওয়ার এলিফ্যান্টস’

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

‘বেঙ্গল টাইগার্স বনাম দ্য ওয়ার এলিফ্যান্টস’

রুমেল খান ॥ হিংস্র বাঘের শক্তি বেশি, নাকি যুদ্ধবাজ হাতির শক্তি বেশি? সেটা জানা যাবে আজ। জানার জন্য ধৈর্যও ধরতে হবে। সেটা সর্বনিম্ন ৯০ মিনিট, আর সর্বোচ্চ ১২০ মিনিট। দ্বৈরথটা শুরু হবে ঘড়ির সময় অনুযায়ী বিকেল ৫টায়। লড়াইয়ের মঞ্চ? ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। উপলক্ষ? ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর ফাইনালে ওঠা। পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন কাদের কথা বলা হচ্ছিল এতক্ষণ ধরে? হ্যাঁ, এ আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে লড়বে সাফ অঞ্চলের দেশ ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং ‘দ্য ওয়ার এলিফ্যান্টস’ খ্যাত আসিয়ান অঞ্চলের দেশ থাইল্যান্ড। টুর্নামেন্টের ‘এ’ গ্রুপের দল বাংলাদেশ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারে নাম লেখায় (২ খেলায় ১ জয় ও ১ হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে)। সিলেটে প্রথম ম্যাচে তারা ০-১ গোলে ‘মালয় টাইগার্স’ খ্যাত মালয়েশিয়ার কাছে হারলেও ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে পরাভূত করে। পক্ষান্তরে থাইরা হচ্ছে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল। তারা প্রথম ম্যাচে ৩-২ গোলে হারায় ‘দ্য লায়ন্স; খ্যাত সিঙ্গাপুরকে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩-০ গোলে হারায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনকে। ২ ম্যাচের প্রতিটিতেই জয় এবং পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা পৌঁছে যায় সেমিতে। ফিফার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছে ১৪ ম্যাচে। জয়ের পাল্লা ভারি থাইদেরই। তারা জিতেছে ৯ ম্যাচে। বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ২ ম্যাচে। বাকি ৩ ম্যাচ ড্র হয়। ১১ গোল করে ২৯ গোল হজম করেছে বাংলাদেশ। এই ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৬ ম্যাচ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। যাতে বাংলাদেশ জিতেছে ২ আর থাইরা জিতেছে ৪ ম্যাচে। দু’দলের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ হয়েছে ৫টি। এখানে বাংলাদেশ এখনও জয়শূন্য। থাইদের জয় ৩টিতে। বাকি ২ ম্যাচ ড্র। যে কোন পর্যায়ে দু’দলের মধ্যে সর্বশেষ সাক্ষাত প্রীতি ম্যাচেই। ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচের ফল মোটেও সুখকর নয় লাল-সবুজ জার্সিধারীদের কাছে। থাইদের কাছে ০-৫ গোলে বিধ্বস্ত হয় তারা। পরিসংখ্যান বলছে, থাইরা বাংলাদেশের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ। অনেকেই বলেছেন, এ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে দ্রুতগতির ফুটবল দল থাইরা। বিশেষ করে ফ্রি কিক ও কর্নার কিকে তারা ভয়ঙ্কর। সেটা আমলে নিয়েই গত দু’দিন সেভাবেই বাংলাদেশ দলকে বিশেষভাবে অনুশীলন করিয়েছেন দলের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। প্রথম ম্যাচে মালয়বাহিনীর কাছে হেরে গেলে চাপে পড়ে যান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সেমিতে যেতে না পারলে অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি। কিন্তু রাবণের দ্বীপদেশ লঙ্কাকে হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ করায় তা আর করতে হয়নি এই মিডফিল্ডারকে। থাইদের সমীহ করলেও তাদের হারাতে আত্মবিশ্বাসী মামুনুল, ‘ওরা হতে পারে অনেক শক্তিশালী দল। তবে আমাদের বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, আমরা খেলব স্বাগতিক হিসেবে, চেনা মাঠে, চেনা পরিবেশে। সর্বশেষ ম্যাচে লঙ্কাকে হারিয়ে আমরা আছি দারুণ ছন্দে। সবকিছু বিবেচনা করলে সেমির ম্যাচে বাংলাদেশই এগিয়ে। তবে মধ্যমাঠে এগিয়ে থাইল্যান্ড।’ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘তাদের মিডফিল্ড খুবই শক্ত। তাদের দুজন মিডফিল্ডার এবং একজন স্ট্রাইকারকে নিয়ে কাজ করেছেন কোচ। এ তিনজনকে কোচ বলেছেন ম্যান টু ম্যান মার্ক করতে।’ থাইল্যান্ডের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে গিয়ে দেশসেরা এ মিডফিল্ডার বলেন, ‘তাদের সঙ্গে তুলনা করলে আমরা অনেক গতিতে খেলি। চেষ্টা করি পুরো ৯০ মিনিট একই ধরনের এ্যাটাকিং ফুটবল খেলতে। যেটা প্রথম ম্যাচে খেলেছি। দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলেছি। প্রথম ১০-১৫ মিনিট আর মাঝের কিছুটা সময় তারা সমস্যা করে। কারণ তারাও এ্যাটাকিং ফুটবল খেলে।’ থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের কৌশলে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দেন মামুনুল, ‘আমরা যে ধরনের খেলা আগের দুই ম্যাচে খেলেছি। যেমন ছোট ছোট পাসে খেলা। তাতে হয় তো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। ওরা যখন উঠবে আমরা তখন সরাসরি কাউন্টার এ্যাটাকে চলে যাব। কারণ আমাদের কাউন্টার প্লেয়ার অনেক ভাল আছে। চেষ্টা করব মাঝমাঠে থাইল্যান্ডকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে। জাহিদ আর সোহেলকে নিউট্রাল প্লেয়ার দিয়েছেন কোচ। তাদের দু’দিক সামলাতে হবে।’ জিততে হলে গোল করতে হবে। স্কোরিংয়ে যে সমস্যা, তা কিভাবে দূর হবে? ‘প্রথম ম্যাচে আমরা গোল করতে পারিনি। প্রচুর সুযোগ পেয়েছিলাম তারপরও। দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা সুযোগ কাজে লাগিয়েছি। সেমিফাইনালে প্রথম যে সুযোগটা পাব, সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে ফল আমাদের দিকেই আসবে।’ মামুনুলের ভাষ্য। এখন দেখার বিষয়, মামুনুলের এই ভাবনা কতটা কার্যকর হয়।
×