ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

কবি ফজল শাহাবুদ্দীন স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা শিল্পকলায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কবি ফজল শাহাবুদ্দীন স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা শিল্পকলায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিংশ শতকের ষাটের দশকের কবি ফজল শাহাবুদ্দীন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রচলনের অগ্রপথিক। তাঁর কর্ম জীবনের অন্যতম স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ নানা রকম সম্মাননা। খ্যাতিমান এই আধুনিক কবির ৭৯তম জন্মদিন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও স্মারক গ্রন্থ প্রকাশনা। একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে কবিকণ্ঠ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবিপতনী আজমিরী শাহাবুদ্দীন, মালয়েশিয়ার জাতীয় কবি দাতো ড. আহমদ কামাল আবদুল্লাহ কেমালা ও প্রখ্যাত ডাচ কবি ড. জার্মেন ড্রুগেনব্রুট। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবিকণ্ঠের সম্পাদক আমিনুর রহমান। আলোচনানুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কবি ফজল শাহাবুদ্দীন ছিলেন বাংলা কবিতায় আধুনিক কবিদের মধ্যে একজন। তাঁর শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের উন্মেষ মানেই রাজধানী ঢাকা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন। কাজেই সে সময় বাঙালীর ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা ও আকস্মিকতা তাঁর তারুণ্যকে নাড়া দেয়। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম ও একমাত্র কবিতা পত্রিকা কবিকণ্ঠ প্রকাশ ও সম্পাদনা শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে তাঁর সঙ্গে এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বরেণ্য কবি শামসুর রাহমান। পত্রিকাটি অনিয়মিত হলেও এখনও প্রকাশ হচ্ছে এবং এ পত্রিকাকে ঘিরে দেশে ও দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বসন্তকালীন কবিতা উৎসব। এ উৎসবের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। কবিতা ছাড়া তিনি উপন্যাস, রম্য রচনা, ব্যক্তিগত প্রবন্ধ, সাহিত্যিক প্রবন্ধ, অনুবাদ এবং জাতীয় দৈনিকের কলামও লিখেছেন। চলচ্চিত্রের গান লেখায়ও ছিল তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা। তিনি বেনামে বহু চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। অভিনয়েও ছিল তাঁর দক্ষতা। তিনি জহির রায়হানের একটি রঙিন ছবি সঙ্গমে খ-িত চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক পিইএনের বাংলাদেশ শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। আমাদের অহঙ্কার ও গর্বের এই কবি প্রয়াত হয়েছেন ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। তিনি স্বশরীরে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন কাল-থেকে কালান্তর। আলোচনা শেষে অতিথিরা কবি ফজল শাহাবুদ্দীন স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। দিনভর নাট্য আলোচনা ও মঞ্চায়ন দিয়ে শেষ হলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ॥ নাট্য আলোচনা ও মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে বুধবার শেষ হলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। জাতির মেধা ও মননের প্রতীক বাংলা একাডেমির ৬০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে গ্রন্থমেলার পাশাপাশি এ বছর চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সকাল থেকে শুরু হয় এ আয়োজন। ‘এই সময়ের সাহিত্য (নাটক)’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় প্রথম অধিবেশনে। এতে আলোচনায় অংশ নেন সুইজারল্যান্ডের তোবিয়াস বিয়ানকম, ভারতের অশোক মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক, মামুনুর রশীদ, রামেন্দু মজুমদারসহ আরও অনেকে। তারা বলেন, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নাটক শিল্প মাধ্যম হিসেবে আজ এক নতুন দিগন্তের সামনে এসে উপস্থিত। সারা বিশ্বের শৈল্পিক উত্তরাধিকারকে বহন করে বাংলা নাটকে সাম্প্রতিক সময়ে প্রান্তিক মানুষের জীবনছবি, নারীদের জীবনসংগ্রাম এবং সর্বতমুখী বৃত্ত ভাঙার প্রয়াসে ঋদ্ধ। মৌলিক নাটকের পাশাপাশি অনুদিত ও রূপান্তরিত নাটকের সুবিশাল সম্ভার বাংলা নাট্যভূবনের বৈশ্বিক অভিযাত্রাকে চিহ্নিত করে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী থিয়েটারের সমান্তরালে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতœ থিয়েটার, পরিবেশ-থিয়েটার, মুক্তিযুদ্ধের নানামাত্রিক স্মৃতি অন্বেষামূলক নাট্যচর্চা আমাদের থিয়েটারকে শিল্পসত্য ও মানবমুক্তির সত্যের মুখোমুখি করে। এই অধিবেশন সঞ্চালনা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা নাট্যদলের পরিবেশনায় দশটি নাটকের অংশ বিশেষে মঞ্চস্থ হয়। প্রথমে রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নাটক নিয়ে মঞ্চে আসে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে যে নাটক মঞ্চস্থ হয় হলো-কবর, আরজ চরিতামৃত, ডেড পিকক, কোকিলারা, রাঢ়াঙ, নিমজ্জন, আমিনা সুন্দরী, সুদূরে দিগন্ত, কহে বিরাঙ্গনা ও লাল জমিন। সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, হান্স হার্ডার, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক প্রমুখ। তারা বলেন, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক সাহিত্য সম্মেলন। এতে সাহিত্যবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্য মাধ্যমের উপস্থাপনা ও পরিবেশনায় শ্রোতা-দর্শক সমকালীন সাহিত্য সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা লাভ করেছেন। ভাষার জন্য বাঙালীর অনন্য আত্মত্যাগ যেমন বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তেমনি এ ধরনের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পরিসরে বাংলা সাহিত্যের সংযোগ প্রসারিত হবে। সাহিত্য সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন রামেন্দু মজুমদার। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বারটি দেশের সাহিত্য প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন মানব-ঐক্য, সহিষ্ণুতা ও শান্তির প্রতি লেখক-কবিদের অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করছে। একই সঙ্গে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বহুত্ববাদী অসাম্প্রদায়িক মানব পৃথিবী বিনির্মাণে সাহিত্যের চিরকালীন স্বরকে আরও শানিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই সাহিত্য সম্মেলন আমাদের সাহিত্য জগতে ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে আমরা দ্বিবার্ষিকভাবে এই সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করব।
×