ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাতের অন্ধকারে হামলা নাশকতাকারীদের এখন মূল কৌশল

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রাতের অন্ধকারে হামলা নাশকতাকারীদের এখন মূল কৌশল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মহাসড়ককেই এখন নাশকতার পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত শিবির ক্যাডাররা। সড়ক ও মহাসড়কসমূহে পর্যাপ্ত র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিযুক্ত থাকলেও থামছে না তাদের নির্মম নাশকতা। সুযোগ পেলেই সড়কের পাশে ওঁৎ পেতে থাকা অবরোধকারীরা বিভিন্ন যানবাহনে চালাচ্ছে হামলা। বিশেষ করে পেট্রোলবোমা হামলা চালানো হচ্ছে এসব সড়কে চলন্ত যানবাহনে। এতে তেমন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও নিমিষেই দগ্ধ হচ্ছে মানুষ। রাতের বেলা এসব হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন ট্রাক-বাস কিংবা অন্য যানবাহনের চালকরা। গত একমাসে রাজশাহীর বিভিন্ন মহাসড়কে অন্তত ৩২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে নারী ও শিশু ছাড়াও বেশিরভাগ চালক ও হেলপাররা রয়েছেন। জীবিকার সন্ধানে পথে গাড়ি নামালেই ঘটছে অঘটন। তাদের টার্গেটই এখন যানবাহনের চালক ও হেলপার। সন্ধ্যা নামনেই আতঙ্ক নেমে আসছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট ছাড়াও এখন যেখানে সেখানে হামলা চালাচ্ছে অবরোধকারীরা। নাশকতা প্রতিরোধে প্রতিনিয়ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিচ্ছেন মহাসড়কে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাশকতা প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন স্থানে চলছে সভা সমাবেশ। তা সত্ত্বেও রাত নামলেই শুরু হচ্ছে দুর্বৃত্তদের হামলা ও নাশকতা। এ পরিস্থিতিতে মহাসড়কই এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে যানবাহন চালকদের কাছে। চলমান নাশকতা রোধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা পর্যায়ের মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতা প্রতিরোধমূলক সভা-সমাবেশ ও মতবিনিময় করা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। এদিকে চলমান নাশকতা ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে রাজশাহীতে মাঠে নেমেছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। বুধবার তিনি রাজশাহী নাশকতাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত নগরীর বাইপাশ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি নাশকতাকারীদের সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সংসদ বাদশা বলেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, নাশকতা রুখতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য মহাড়ক ঘেঁষা জনপদের মানুষকে সচেতনতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানেই নাশকতা সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মতবিনিময় শুরু করেছেন। নাশকতা রুখতে জনসমর্থন পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। বাদশা বলেন, নাশকতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে আজ বৃহস্পতিবার নগরের আদিবাসী কালচারাল একাডেমিতে সন্ত্রাস প্রতিরোধে সভা আহ্বান করা হয়েছে। এই সভা থেকে রাজশাহী থেকে সন্ত্রাস ও নাশকতাকারীদের প্রতিহতের ডাক দেয়া হবে। নাশকতার ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় সাংসদ বাদশার সঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সিনিয়ন নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা ছাড়াও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে দিনের বেলা তেমন সুবিধা করতে না পেরে রাতের আঁধারে নাশকতার ছক কষে রাজশাহীতে সস্ত্রাসী কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে বিএনপি ও জামায়াত শিবির ক্যাডাররা। দিনের আলো ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামলেই এখন ককটেল আতঙ্ক বিরাজ করছে নগরীজুড়ে। সন্ধ্যার পর নগরীর পাড়া, মহল্লা ও অলিগলিতে বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে নাশকতাকারী জামায়াত শিবির কর্মীরা। গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত নাশকতার মুখে ‘ডেঞ্জার পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত রাজশাহী নগরী ও জেলার অন্তত ২০টি পয়েন্ট। এসব এলাকায় একের পর এক চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতার কারণে ভিতিকর এলাকা হিসেবে পরিণত হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) ইফতে খায়ের আলম জানান, হামলাকারীরা সুযোগ বুঝেইন পেট্রোলবোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক তৎপর হলেও জামায়াত-শিবির ও বিএনপি ছাত্রদল একাট্টা হয়ে সুযোগ বুঝেই নানামুখী নাশকতা চালাচ্ছে। তাদের নাশকতা রুখতে পুলিশের পাশাপাশি দমকল বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
×