ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ॥ দুই চুলা এক হাজার, এক চুলা ৮৫০ টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ॥ দুই চুলা এক হাজার, এক চুলা ৮৫০ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিতরণ কোম্পানি তিতাসের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। ঢাকা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় গ্যাস বিতরণকরী দেশের সবচেয়ে বড় এই বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ছে না। তারা গৃহস্থালির গ্যাসের দাম ১২২ ভাগ বৃদ্ধির আবেদন নিয়ে কমিশনে গিয়েছিল, যা জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে। এক লাফে অতীতে কোন প্রতিষ্ঠান এভাবে তার পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে চায়নি। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে তিতাসের গ্যাসের দাম এক পয়সাও বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। চলতি মূল্যহারে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের দাম শতকরা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কাওরানবাজারের টিসিবি ভবনে তিতাসের প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি আয়োজন করে বিইআরসি। প্রস্তাবের বিপরীতে কারিগরি কমিটি জানায়, কস্ট প্লাস ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য বিতরণ আয় প্রতি ঘনমিটারে ২৯ পয়সা নির্ধারণই যথেষ্ট। যদিও বর্তমানে ঘনমিটার প্রতি বিতরণ আয় ৫৫ পয়সা। এ ছাড়া পরিচালন আয়, অন্যান্য আয়, সুদ আয় ও গ্যাস সঞ্চালন হতে ৪২ পয়সা আয় করে তিতাস। তাতে বর্তমানে প্রতিঘনমিটারে তিতাসের আয় ৯৭ পয়সা। তিতাসের প্রস্তাবে কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরে মূল্যায়ন কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিফেশন ফান্ড (ওব্লিউপিপিএফ) এ অর্থ স্থানান্তর এবং তা বণ্টন প্রক্রিয়াতে অস্পষ্টতা রয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভার খরচের হিসাব পৃথকভাবে অডিট রিপোর্টে দেখা যায়নি। বার্ষিক নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদনে গ্রাহক শ্রেণীভিত্তিক বিতরণ আয় দেখানো হয়নি। গ্রাহক শ্রেণীভিত্তিক গ্যাস ক্রয়-বিক্রির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। ন্যূনতম চার্জ ও গ্যাসের তাপন মূল্য হতে আয় পৃথকভাবে দেখানো হয়নি। কমিশন কর্তৃক গ্যাসের তাপন মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। মিটারবিহীন গৃহস্থালি শ্রেণীতে সিঙ্গেল ও ডাবল বার্নারের সংখ্যা এবং মিটার যুক্ত গৃহস্থালির ক্ষেত্রে গ্যাস ভোগের পরিমাণ উল্লেখ নেই। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গৃহস্থালিতে অবৈধ গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৭ কোটি টাকা আয় করলেও তা গ্যাস বিক্রির আয়ে দেখানো হয়নি। একই দিন বিকেলে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে কারিগরি কমিটি জানায়, গ্যাসের নিজস্ব মূল্যসহ প্রাকৃতিক গ্যাসের সকল মূল্য এবং জিটিসিএলের সঞ্চালন চার্জ ১৩ পয়সা সমন্বয় বিবেচনায় পিজিসিএলের বর্তমান মূল্য হার ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। কেননা বর্তমান বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ঘাটতি হবে ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে গ্যাস ব্যবহারে বিভিন্নভাবে বৈষম্য আছে। বৈষম্যের কারণে পণ্য উৎপাদন খরচে পার্থক্য হচ্ছে। এই পার্থক্য সমন্বয় হওয়া উচিত। বিইআরসি সূত্র জানায়, বিতরণ কোম্পানিগুলো পৃথক প্রস্তাব জমা দিলেও একই হারে দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। প্রস্তাবে আবাসিক খাতে সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। আবাসিক খাতে দুই চুলার ক্ষেত্রে ৪৫০ থেকে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একচুলার ক্ষেত্রে ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৮৫০ টাকা। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট (হাজার ঘনফুট) গ্যাসের দাম ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এরপর সবচেয়ে বেশি বাড়ছে ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহƒত গ্যাসের দাম। প্রতি ইউনিট ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
×