ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার নাশকতার নির্দেশের অডিও শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদার নাশকতার নির্দেশের অডিও শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘নাশকতার নির্দেশ’ দিয়ে টেলিফোনে দলের নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথোপকথন নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ওই ফোনালাপগুলো শোনানো হয়। এছাড়া সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা হালনাগাদ করে নতুন একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৫’ এর খসড়ায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত এক মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, ওই ফোনালাপ শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যি সত্যিই তো উনি (খালেদা জিয়া) নাশকতার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বেগম জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আর কোন মন্তব্য করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রী বলেন, বৈঠকের আলোচ্যসূচী শেষ হওয়ার পর অনির্ধারিত আলোচনার সময় সভাকক্ষে বসেই ফোনালাপের অডিওগুলো শোনেন শেখ হাসিনা। চার বছর আগে ঢাকায় বিএনপির একটি সমাবেশের সময় দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কয়েকটি টেলিফোন সংলাপের অডিও টেপ ঘুরছে ইউটিউবে। এতে বেগম জিয়াকে নেতাদের নানা নির্দেশ দিতে শোনা গেছে। বাংলা লিকস নামের একটি এ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা এসব কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খালেদার এসব নির্দেশ নাশকতা ঘটনোর উদ্দেশ্যেইÑ এমন কথা রয়েছে অডিও ফাইলগুলোর শিরোনামে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিনিয়র মন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রীরাও খালেদা জিয়ার নির্দেশে ওই সময় যারা নাশকতায় অংশ নিয়েছিল, তাদের গ্রেফতারের দাবি জানান। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আর কিছু বলেননি। ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সারাদেশ থেকে জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। অনুষ্ঠানস্থল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সকালে আগতদের পুলিশ লাঠিপেটা করে বের করে দিলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ বাধে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য জেলাগুলোতেও। ঢাকায় বোমা বিস্ফোরণে একজন মারা যায়, পোড়ানো হয় কয়েকটি গাড়ি। সিলেটে বাসে আগুন দেয়া হলে পুড়ে মারা যান এক যাত্রী। বাংলা লিকস খালেদার যে পাঁচটি অডিও টেপ প্রকাশ করেছে, তার চারটিই ওই সমাবেশ শুরুর আগে কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার কথোপকথন। এদিকে সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা হালনাগাদ করে নতুন একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, নীতিমালা যথেষ্ট পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রণয়ন করা হয়েছে, এখানে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা যুক্ত করা হয়েছে এবং কোন কাজের দায়িত্ব কোন মন্ত্রণালয়ের কোন দফতরের- তার টাইম ফ্রেম করা হয়েছে। সচিব বলেন, এ নীতিমালায় কাজগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে স্বল্পমেয়াদী, ২০১৮ সালের মধ্যে মধ্যমেয়াদী এবং ২০২১ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি অংশের মেয়াদ এবং কার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে তাও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ নীতিমালায় একটি ‘রূপকল্প’ রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এতে ১০টি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, ৫৬টি কৌশলগত বিষয়বস্তু ও ৩০৬টি করণীয় বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাতে অংশীদারিত্বে সুলভে জনসেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং ২০২১ সালের মধ্য দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীত করার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করার কথা রূপকল্পে রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের কর্মকর্তাদের জন্য এই নীতিমালা হবে একটি নির্দেশিকা। পাশাপাশি আইসিটি খাতের বিকাশে বেসরকারী খাত, এনজিও এবং সিভিল সোসাইটির ভূমিকাকেও এ নীতিমালায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পার্টনারশিপের মাধ্যমে কীভাবে আইসিটি খাতের উন্নয়ন করা যায় তার একটি নির্দেশিকা এখানে আছে। এ সমস্ত কাজের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিক সেবার মানোন্নয়ন। সচিব বলেন, ২০০৯ সালে সরকার প্রথম আইসিটি নীতিমালা করার পর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে যাওয়ায় এর হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এ প্রস্তাব নিয়ে আসে। আইসিটির মাধ্যমে আমরা উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। আইসিটিকে কি অবয়বে ব্যবহার করব তার দিকনির্দেশনা আছে এ নীতিমালায়। তিনি বলেন, এটি মূলত আইসিটি খাতের উন্নয়নের একটি রূপরেখা। নীতিমালা পরিবর্তনের সময় এটি সরকারী গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে এবং তা পরে ওয়েসসাইটে দেয়া হবে।
×