ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপই একমাত্র পথ ॥ বি চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সংলাপই একমাত্র পথ ॥ বি চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি ও বিকল্প ধারা প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, চলমান সঙ্কট নিরসনের একমাত্র পথ সংলাপ। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। সহিংসতা পরিহার করে অবিলম্বে সংলাপে বসুন। সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করতে জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জনগণ না জাগলে চলমান সঙ্কটের কোন সমাধান আসবে না। বদরুদ্দোজা চৌধুরী শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব বলেন। গুড গবর্নেন্স ফোরাম ‘বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংলাপের কোন প্রয়োজন নেই। সরকার প্রয়োজন অনুভব না করলে সংলাপ কি করে হবে। কিন্তু আগামীতে নির্বাচন হলেও খালেদা জিয়া অথবা শেখ হাসিনাই ক্ষমতায় আসবেন। ৩০ ভাগের বেশি যারা ভোট পায় তাদেরকে অস্বীকার করবেন কিভাবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকার আজ সেকথা ভুলে গেছে। তাদের পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন হবে না। কিন্তু ভুলে যাওয়া রাজনীতিবিদদের কাজ নয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাস ভবনের বিদ্যুত, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দিনের পর দিন তার বাসার সামনে জলকামান, ট্রাক, ইট, বালু দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার বাড়ি সংস্কারের জন্য এটি করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক কলঙ্ক ছাড়া আর কিছুই না। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনার কোন নজির নেই। তার বাসায় তালা লাগানো হাস্যকর বলে উল্লেখ করেন তিনি। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, কোন দল জনগণের ভোটে জয়লাভ করলে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। কখনও ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় না। ক্ষমতা নিয়ে জনগণের দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু দেশের মানুষের দায়িত্ব না নিয়ে আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশের চলমান সঙ্কটে দেশের জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ অবস্থায় জনগণ যদি জেগে ওঠে তাহলেই এর সমাধান হবে। কিন্তু জনগণ রাজপথে নামছে না বুলেটের ভয়ে। তাই অনশন ও প্রতিবাদের মাধ্যমে সমাধান চাইতে হবে দেশবাসীকে। এভাবে জনগণের মধ্যে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ জনগণ শান্তি চায়, সে তার ভোটের অধিকার চায়। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে চায়। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি যদি পার্বত্য চট্টগ্রামকে শান্ত করতে সন্তু লারমার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন, তবে দেশের চরম সঙ্কটে এখন সংলাপে বসতে পারবেন না কেন? চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি বন্ধ করার জন্য সংলাপসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার ও বিএনপিকে আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংলাপের মাধ্যমেই পার্বত্য সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সংলাপের কোন বিকল্প নেই। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা না হলে সবাইকে চরম পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। রাজনৈতিক সঙ্কটকে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ৪৩ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম সরকার আন্দোলন দমাতে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। তারপরও ৪৪ জনের কাছাকাছি মানুষ মারা গেছে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রথমে বলা হলো, ৭ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু একমাস পেরিয়ে গেলেও আন্দোলন দমাতে পারেনি। পেট্রোলবোমা মারা, বোমাবাজি করা, গাড়িতে আগুন কোন আন্দোলন কর্মসূচী নয়। কিন্তু সরকারও এটা প্রতিরোধ করতে পারছে না। এর কারণ, সমস্যা কোন অরাজনৈতিক নয়। তিনি বলেন, সহিংসতা এমনি এমনি হয় না। আন্দোলনের কোন সুযোগ নেই বিধায় সহিংসতা বাড়ছে। এর কোন সমাধান সরকার করতে পারছে না। সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাসায় বিদ্যুত, কেবল সংযোগ ও নেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেও সরকার আন্দোলন থামাতে পারছে না। তাহলে এর পরে কি হবে? মাহমুদুর রহমান মান্না ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রহসনমূলক উল্লেখ করে বলেন, নিবন্ধিত ৪০ দলের মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সেটাকে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বলা যায় না। এক বছর পরে ঠিক সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। এর কারণে আজ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন আশঙ্কার মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষকে নিজেদের মতো ব্যবহার করে ফায়দা লোটার চেষ্টা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সাবেক মন্ত্রী মিজানুর রহমান শেলী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ সত্যিকারের সমঝোতা চায়। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে ঘরের মধ্যে মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। এ অবস্থায় দুপক্ষ যদি সমাধানের কোন পথ খুঁজে না পায় তাহলে করুণ পরিণিতির সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় সর্বদলীয় জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন। সংলাপ ছাড়া স্থায়ী কোন সমাধান আসবে না। ক্ষমতাসীন দল কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও তার স্থায়ী কোন সমাধান হবে না। জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান আসবে বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারওয়ার মিলন, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ঢাবি অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, এ্যাডভোকেট তাসনিম রানা, সাবেক এমপি হুমায়ুন কবির হিরু। সংগঠনের আহ্বায়ক বিচারপতি সিকদার মকবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইফতেদার আহমেদ।
×