ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরে মানবপাচার রোধে পুলিশের ৮ দফা সুপারিশ এখনও ফাইলবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

সাগরে মানবপাচার  রোধে পুলিশের  ৮ দফা সুপারিশ  এখনও ফাইলবন্দী

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ভয়ঙ্কর যাত্রা রোধে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সুপারিশ এখনও ফাইলবন্দী হয়ে আছে। পুলিশ সদর দফতরে এ রিপোর্ট পরীক্ষা- নিরীক্ষার নামে পড়ে আছে। রিপোর্টটিতে অবৈধপথে মানব পাচার রোধে আট দফা সুপারিশ করা হয়। সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় মানব পাচারে অর্থায়নকারী, গডফাদার ও দালালদের সুনির্দিষ্ট নাম ও পরিচয়। রিপোর্টটিতে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন উপকূল পর্যন্ত ৬০টি পয়েন্ট থেকে মালয়েশিয়াগামীদের দেশীয় ইঞ্জিনচালিত বোটে গভীর সমুদ্রে নিয়ে অপেক্ষমাণ ট্রলারে তুলে দেয়ার তথ্য প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০০০ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের ঘটনা শুরু এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ এদেশ থেকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচারের তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়। পাশাপাশি দেশের বাইরে ১১টি সিন্ডিকেট যাদের মধ্যে ৮ বাংলাদেশী অবৈধ এই পাচারের কাজে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করা হয়। কমিটি যে আটটি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রেরণ করে তা অবাস্তবায়িত থাকায় সমুদ্রপথে মানব পাচার রোধ কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না বলে কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে শুক্রবার জনকণ্ঠকে আভাস দেয়া হয়। সমুদ্রপথে মানব পাচার ভয়াবহ রূপ নেয়া, সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বন্দীশিবিরে আটকে থাকার বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গেল বছর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) বনজ কুমার মজুমদার। সদস্য ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ, ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুল হাসান ও সিএমপির সহকারী কমিশনার নিয়াজ মোহাম্মদ। কমিটি দীর্ঘ ৪৫ দিন সরেজমিন তদন্ত করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে আট দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে এটি পুলিশ সদর দফতরে পেশ করে। সে থেকে এখনও এটি ফাইলবন্দী হয়ে আছে বলে সূত্রে জানা গেছে। চার সদস্যের ঐ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে টেকনাফে আসা তাজরমুল্লুক নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে মানব পাচার শুরু হয় ২০০০ সালে। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত উপকূলে ৬০ পয়েন্ট থেকে মানব পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে দেশীয় ইঞ্জিনচালিত বোটের মাধ্যমে। দেশের প্রায় ৪১টি জেলা থেকে অসহায়-দরিদ্র শ্রেণীর লোকজন পাচারের মূল টার্গেট। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাচারের ঘটনায় মামলা হয় ২৪২টি। যাতে আসামি করা হয় ১ হাজার ৩৩৫ জনকে। কমিটির আট দফা সুপারিশে রয়েছেÑমানব পাচার সংক্রান্তে দায়েরকৃত মামলার তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন, যেখানে স্বরাষ্ট্র, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি থাকবেন। মানব পাচারের মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য নিশ্চিত করতে জেলা বা মেট্রোপলিটন পর্যায়ে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন এবং সব মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন। উপকূলীয় অঞ্চলে ওয়ার্ডভিত্তিক মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটি গঠন। মানব পাচারে জড়িত প্রবাসী বাঙালীদের আইনের আওতায় আনা। মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফের ৬০ কিলোমিটার এবং উখিয়ার সঙ্গে ২০ কিলোমিটার নৌপথে নৌপুলিশের ইউনিট স্থাপন।
×