ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল-অবরোধ ভোঁতা হয়ে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল-অবরোধ ভোঁতা হয়ে গেছে

এম শাহজাহান ॥ গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার সংলগ্ন ফুটপাথে জুতার দোকান করেন কামাল হোসেন। হরতাল-অবরোধের মধ্যেও দোকান খোলা রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ক্রেতা সমাগমে বেচাবিক্রিও ভাল। কামালের মতো গুলিস্তান-মতিঝিলের অসংখ্য হকার এখন বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধকে মোটেও তোয়াক্কা করছেন না। হকারদের অনুসরণ করে মার্কেটের ছোট-বড় সব শ্রেণীর ব্যবসায়ী দোকান খোলা রাখছেন। ক্রেতাদেরও যেন হরতালের খবর রাখার সময় নেই। আর দেশের গার্মেন্টস খাত বরাবরই হরতালের আওতামুক্ত রয়েছে। ফলে এই সেক্টরে কর্মরত নারী শ্রমিকরা হরতাল-অবরোধের খোঁজ নিতে আগ্রহী নন। তাই হরতাল হলেও কাকডাকা ভোরেই গার্মেন্টস কারখানা শ্রমিকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে। রাজধানীর কাওরানবাজারে আবার কর্মতৎপরতা বেড়েছে। গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজিবাহী ট্রাক ছুটে আসছে ঢাকায়। হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে চলছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে বাণিজ্যিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ ভোঁতা হয়ে গেছে, এখন যা চলছে তা নাশকতা। এই নাশকতার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, আর কত মানুষ দগ্ধ হবে? পণ্যবাহী কত ট্রাক আগুনে পুড়লে তাদের এই নাশকতা বন্ধ হবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপি নেত্রীর কার্যালয়ে ঢুকতে না দিয়ে অপমান করা হয়েছে। বাড়ির গেট খোলা হলো না। তারা (বিএনপি) যে সংলাপের কথা বলছে তা ওইদিন শুরু হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি নেত্রী সেই সুযোগ নিলেন না। তাই তাদের হরতাল-অবরোধে দেশের সাধারণ মানুষের আর কোন সম্পৃক্ততা নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, কোন ব্যবসায়ী এখন আর হরতাল-অবরোধ মানছে না। ফুটপাথের হকার থেকে শুরু করে মার্কেটের বড় বড় ব্যবসায়ী দোকানপাট খোলা রেখে বাণিজ্যিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতাও আসছে। সাধারণ নাগরিক এখন অনেক বেশি সচেতন। তাই এই হরতালে জনসম্পৃক্ততা নেই। কিছু নাশকতা হচ্ছে। সরকারকে এই নাশকতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, হরতাল-অবরোধ পালিত হলে রাজধানীতে যানজট হয় কিভাবে? পরিবহন সেক্টরের মালিকরা গাড়ি বের করে দিয়েছেন। চলছে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়িও। এছাড়া পিকেটারদের গণধোলাই শুরু হয়েছে। হরতালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। যে কারণে হরতাল-অবরোধ পালিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে আমার শোকাহত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শোকাহত খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না জানাতে গেলেও গেট খোলা হলো না। সারাদেশের মানুষের সঙ্গে আমরাও আশা করেছিলাম দু’নেত্রীর দেখা হলে ওইদিন ভাল কিছু ঘটনা ঘটবে। কিন্তু হয়নি। ফলে দু’নেত্রীর মধ্যে বরফ গলার যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল তাও নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা জিম্মি হয়ে পড়ছেন, তাই এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে হরতাল-অবরোধ বন্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
×