ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরীক্ষার আগের দিন থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা ;###;জামায়াত-শিবির ও তারেকের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত

বিপাকে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

বিপাকে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ৪৫ লাখ পরীক্ষার্থী ও উদ্বিগ্ন অভিভাবকের আকুল আবেদন, শিক্ষামন্ত্রী এমনকি শিক্ষক সমাজের অনুরোধ কোন কিছুই স্পর্শ করল না নাশকতার পক্ষে থাকা ২০ দলের নেতা- নেত্রীদের। কথিত ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০ জনকে পুুড়িয়ে মারার পর এবার ৭২ ঘণ্টার হরতাল দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষাতেও হরতাল-অবরোধ বন্ধ হবে না-বিএনপির এমন ঘোষণায় পরীক্ষা পিছিয়ে নেয়ার পথও যেন বন্ধ হয়ে গেছে। অনিশ্চিত করে ফেলা হয়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। এদিকে পাবলিক পরীক্ষার মাঝেও হরতাল-অবরোধ নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অনেক নেতা এ কর্মসূচীর সঙ্গে একমত না হলেও জামায়াত-শিবির ও লন্ডনে অবস্থাররত পুত্র তারেক রহমানের পরামর্শেই এসেছে এ ধরনের কর্মসূচী। সাধারণ মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পাবলিক পরীক্ষার মাঝে হরতাল-অবরোধ দেয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষক-অভিভাবকের মাঝে। প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন। মিছিল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কারিগরি শিক্ষকরা। পরীক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত প্রস্তুত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। সে অনুসারে নেয়া হয়েছে পদক্ষেপও। ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের ৩০ লাখ অভিভাবককে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দেয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘এখনও আমাদের প্রত্যাশা, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এসএসসি পরীক্ষার সময় বিএনপি কর্মসূচী তুলে নেবে। তাদের অবরোধের তো কোন সময়সীমা নেই। তাই আমরা যে পরীক্ষা পিছিয়ে দেব তারও তো কোন উপায় নেই। যথাসময়েই পরীক্ষা নিতে হবে। এর আগে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা সম্প্রতি অবরোধের আওতামুক্ত ঘোষণা করে বিএনপি। যদিও নাশকতার ভয়ে আগেই পরীক্ষা স্থগিত করে ব্রিটিশ কাউন্সিল। পরীক্ষা আয়োজনে কঠোর অবস্থান, প্রস্তুতি ॥ পরীক্ষা আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুসারেই কাজ চলছে। কোন কারণে শেষ পর্যন্ত যদি দেখা যায়, অবরোধ থাকলেও নাশকতা নেই, তবে পরীক্ষা নেয়া হবে। আর যদি দেখা যায়, অবরোধে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও হরতালে নাশকতা হয় তবে অবরোধেই কেবল পরীক্ষা হবে, কিন্তু হরতাল দিলে ওই দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হবে। নাশকতা চালাতে থাকলে শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষার্থে যদিও পরীক্ষা স্থগিতের চিন্তাও আছে মন্ত্রণালয়ের। কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষার আগের রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখা হবে। যদি হরতাল-অবরোধে বোমা হামলাসহ নাশকতা চলতেই থাকে তবে ওই রাতেই পরীক্ষা ‘আপাতত স্থগিত’ বলে জানিয়ে দেয়া হবে। পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যেই চলতি সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, রেলপথ এবং বিদ্যুত বিভাগের কাছে চিঠি দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এনামুল কাদের খান স্বাক্ষরিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে দেয়া পত্রে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ এ পাবলিক পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে গ্রহণ সম্ভব হয় সে জন্য পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে যেন কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একই কর্মকর্তার স্বাক্ষরে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে উত্তরপত্র এবং ওএমআরসহ গোপনীয় কাগজপত্র শিক্ষা বোর্ডগুলোয় প্রেরণের লক্ষ্যে ডাকঘরসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং রেলওয়ে পার্সেল বিভাগ খোলা রাখার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। আর পরীক্ষাকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করার জন্য বিদ্যুত বিভাগের সচিবকে অনুরোধ করা হয়। এর বাইরে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) আলাদা চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান। শিক্ষা সচিবের পত্রে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে নিরাপত্তা দেয়া, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, ওএমআর ফর্মসহ পরীক্ষা সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ, প্রশ্ন ফাঁসের গুজব রটানকারীকেও ১৯৮০ সালের পরীক্ষা আইন ও ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ মোট ৮ দফা নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ১০টি শিক্ষা বোর্ডে কন্ট্রোল রুম থাকছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পরীক্ষা সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুমের জন্য লিংক স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের হোমপেজে এক্সাম কন্ট্রোল রুম নামক মেন্যুতে কন্ট্রোল রুমের ই-মেইল আইডি, জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্যদের ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কন্ট্রোল রুমটি সচিবালয়ের ১৯ তলায় ৬ নম্বর ভবনের ১৯২২ নম্বর কক্ষে। এর ফোন নম্বর হচ্ছে ৯৫৪৯৩৯৬। এ ছাড়া দুটি ইউনিক মোবাইল ফোন ০১৭৭৭-৭০৭৭০৫ ও ০১৭৭৭-৭০৭৭০৫। যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে একটি জাতীয় মনিটরিং কমিটিসহ মোট ১২টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি ১১টি কমিটির মধ্যে ১০ শিক্ষা বোর্ডে ১০টি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে একটি । এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) স্বপন কুমার সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি মূলত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। এ কমিটির অপর সদস্যরা হলেনÑশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) রুহী রহমান, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন), সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি), র‌্যাব সদর দফতরের উপ-পরিচালক (অপারেশন্স), ডিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার ডিবি (উত্তর), এএসপি সিটি-এসবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (অধিশাখা-১০), মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন উপ-সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতরের (বিজি প্রেস) একজন সিনিয়র সহকারী পরিচালক, বিটিআরসির একজন সহকারী পরিচালক। এর বাইরে মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটি কাজ করবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বে থাকবে আরেকটি কমিটি। জামায়াত-শিবিরের পথেই চলছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ॥ জানা গেছে, পাবলিক পরীক্ষার মাঝে হরতাল-অবরোধ নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অনেক নেতা এ কর্মসূচীর সঙ্গে একমত না হলেও জামায়াত-শিবির ও লন্ডনে অবস্থাররত পূত্র তারেক রহমানের পরামর্শেই এসেছে এ ধরনের কর্মসূচী। সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে দেশজুড়ে নাশকতার মাধ্যমে বড় ধরনের অরাজকতার পাঁয়তারা করছে জামায়াত-শিবির। বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির কয়েক নেতা পরীক্ষার মাঝে টানা হরতাল-অবরোধের পরিবর্তে বিকল্প কোন কর্মসূচীর পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই পরামর্শ নাকচ করে দেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘ডু অর ডাই’। যা হবার তাই হবে। তিনি আরও বলেছেন, অতীতের ভুল পথে তিনি আর পা দিতে চান না। চেয়ারপার্সনের এহেন কঠোর মনোভাবে নিশ্চুপ হয়ে যান এসব নেতা। চেয়ারপার্সন কঠোর মনোভাব দেখালেও ওই সময় পরীক্ষার মাঝেও হরতাল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কয়েক নেতা। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে নতুন কর্মসূচী প্রণয়নে নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করায় ক্ষুব্ধ অনেক নেতাই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, স্থায়ী কমিটির অনেক নেতা চেয়ারপার্সন ও জোট সঙ্গী জামায়াত নেতাদের সঙ্গে পরীক্ষার মাঝে হরতাল -অবরোধের বিকল্প কিছু দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন, কিন্তু চেয়ারপার্সন ও জামায়াতের নেতারা রাজি হননি। তারই প্রতিফলন শুক্রবারের ঘোষণায় দেখা গেছে বলে বলছিলেন ওই নেতা। স্থায়ী কমিটির সদস্যের অনেকে নাশকতার কারণে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও জানিয়েছেন চেয়ারপার্সনকে। ওই নেতারা বলেছেন, অবরোধে দেশে যেভাবে নাশকতা ও সহিংস ঘটনা ঘটছে তা দেশের জনগণ ও বিদেশীরা ভালভাবে নিচ্ছে না। দেশী-বিদেশী সবাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও কেউই নাশকতা সমর্থন করছেন না। তাদের মতে, অচিরেই লাগাতার এ অবরোধ কর্মসূচীতে দেশে এবং বিদেশে সবার মধ্যে বিএনপি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হবে। ইতোমধ্যে দেশের সুশীল সমাজ ও কূটনীতিকরা নাশকতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির প্রতি বিদেশীদের মনোভাব নেতিবাচক হতে পারে। জানা গেছে, বর্তমানে চলমান অবরোধ কর্মসূচীর কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও জোট শরিক জামায়াত সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট বিএনপি চেয়ারপার্সনও। সূত্র বলছে, বিশেষত আন্দোলনের মূল শক্তি জামায়াত-শিবির কোনভাবেই কর্মসূচী তুলতে নারাজ। জামায়াত-শিবিরের মনোভাবের কারণে বিশ্ব এজতেমায়ও অবরোধ-হরতাল করেছে বিএনপি। জামায়াত-শিবির ইতোমধ্যেই বিএনপিকে নিশ্চিত করেছে, শীঘ্রই সরকারবিরোধী আন্দোলনের কঠোরতা আরও বাড়াবে তারা। বাড়বে আন্দোলনের গতি। পাল্টাবে ধরন ও কৌশল। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ গড়াতে পারে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনে। রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার পাশাপাশি আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে জামায়াত আরও সক্রিয় হবে বলে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেছে। দেশকে চূড়ান্ত সংঘাতে নিতে পারলে তাদের পক্ষে বিদেশী বন্ধু দেশের অবস্থান নেয়া সহজ হবে বলেও বিএনপিকে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা। এছাড়া নিজেদের দলের নেতাকর্মীরা গা-ঢাকা দেয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন জামায়াত-শিবিরের ওপর। তাদের অবস্থান যেদিকে থাকছে খালেদা জিয়া সেভাবেই কর্মসূচী দিতে চান। তাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি পূরণ অথবা আলোচনার জন্য সরকারকে বাধ্য করার পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান বিএনপি চেয়ারপার্সন। এ লক্ষ্যে মূল শক্তি এখন তার জামায়াত-শিবির। লন্ডন থেকে চলমান আন্দোলনের মনিটর করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নিয়মিত কমপক্ষে ৬ নেতার সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। দিচ্ছেন দিকনির্দেশনা। একই সঙ্গে কোনক্রমেই যেন চলমান কর্মসূচীতে ঢিলেমি ভাব এসে না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতেও কড়া নির্দেশ দিচ্ছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যথারীতি আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে শুক্রবার বলেছেন, সরকার দেশে সঙ্কট ‘জিইয়ে রাখতে চায়’। তবে ‘চলমান সঙ্কটের’ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তার দল অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে যাবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা ও একটি অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতেই বিএনপি লাগাতার আন্দোলন করছে বলে রিজভীর দাবি। তাহলে বিএনপি যে লাগাতার হরতাল-অবরোধ- নাশকতা করছে, এর গন্তব্য কোথায়? এর উত্তর নেই বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতার কাছেই। বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ হবে কিনা তার নিদ্ধান্ত হবে জোটের বৈঠকে। কিন্তু শুক্রবার জোটের বৈঠক লাগেনি। রিজভী আন্ডারগ্রাইন্ড থেকে বিবৃতি দিয়েই জানিয়ে দিয়েছেন, এসএসসি পরীক্ষার কারণে ২০ দলের হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। অবিলম্বে অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার করুন, আন্দোলন ॥ শত আবেদনের পরও পাবলিক পরীক্ষার মাঝে হরতাল-অবরোধ দেয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষক-অভিভাবকদের মাঝে। প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন। অবিলম্বে অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা বলেছেন, দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, পরীক্ষাকে দলীয় বিবেচনা ও কর্মসূচীর উর্ধে রাখতে হবে। স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের ৩০ লাখ অভিভাবক পরীক্ষা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছেন।
×