ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২ ফেব্রুয়ারি থেকে গণশুনানি

বিদ্যুতের পর এবার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করছে বিইআরসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

বিদ্যুতের পর এবার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করছে বিইআরসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতের পর এবার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুতের পাইকারি এবং খুচরা দাম বৃদ্ধির ওপর চারদিন গণশুনানি করে কমিশন। যদিও বেশিরভাগ কোম্পানির খুচরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে কমিশন। কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তবে কমিশন বিতরণ কোম্পানিগুলোর এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দাম বৃদ্ধি করে থাকে। কোম্পানিগুলো ব্রেক ইভেনে (লাভ-ক্ষতি সমান) চলতে পারে এজন্য মূল্য সমন্বয় করে। বিতরণ কোম্পানিগুলো যে হারে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে তার বেশিরভাগই বাতিল হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের আগস্টে বিইআরসি সব ধরনের গ্যাসের মূল্য ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বৃদ্ধি করে। এছাড়া ২০১১ সালে দুই দফা সিএনজির দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা করা হয়। প্রথম দফায় ২০০৯ সালে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কোন লোকসান না থাকায় এর পুরোটা দিয়ে গ্যাস বিতরণ তহবিল করা হয়। গ্রাহকের অর্থে গড়ে তোলা এই তহবিল দিয়ে গ্যাস খাতের উন্নয়ন করা হচ্ছে। গ্রাহকের অর্থে গ্যাস খাতের উন্নয়ন করে আবার দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক মনে করা হচ্ছে। এর আগে নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে কোন কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, গ্যাস কোম্পানি বিপুল পরিমাণ অর্থ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লভ্যাংশ থেকে বোনাস হিসেবে দিয়ে থাকে। এসব কাজে অস্বচ্ছতা থাকলেও জ্বালানি বিভাগ বা সরকার বরাবর এসব বিষয়ে চুপ থেকেছে। আয়- ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা না থাকাতে কোম্পানিগুলো নিজের ইচ্ছামাফিক খরচ করে আসছে। কোম্পানি গঠন আইনে এসব বিষয়ে কোম্পানিকে ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির বিশাল পরিমাণ খরচ নিয়েও নানা সময়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও এসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কোন্ কোম্পানি কি পরিমাণ প্রফিট বোনাস দিয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কমিশনের এক সদস্য জানান, গ্যাস কোম্পানিগুলোর খরচের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। আমরা সকল ধরনের অযৌক্তিক ব্যয় বন্ধ করে দেব। বিদ্যুত কোম্পানির খরচকে যেভাবে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে একই ব্যবস্থা করা হবে গ্যাস কোম্পানির ক্ষেত্রে। আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা থাকলে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সুবিধাও বাড়বে বলে মনে করেন এই সদস্য। কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গ্যাস কোম্পানিগুলো লাভ করছে। যদিও তারা লোকসান হচ্ছে বলে দাম বৃদ্ধির আবেদন করেছে। তিনি জানান, এমন অনেক বিষয়ই কমিশনের মূল্যায়নে উঠে এসেছে যা আগে কেউ খোঁজ রাখত না। কমিশন বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে বলে আশা করেন ওই কর্মকর্তা। আবাসিক খাতে দুই চুলার ক্ষেত্রে ৪৫০ থেকে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক চুলার ক্ষেত্রে প্রস্তাব হচ্ছে ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৮৫০ টাকা। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট (হাজার ঘনফুট) গ্যাসের দাম ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করার প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহƒত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এবার সঞ্চালন ব্যয়ও বাড়াতে চায় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল)।
×