ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

ডেভিড বার্গম্যান বিষয়ে বিবৃতিদাতা ১৪ জনের ক্ষমা প্রার্থনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

ডেভিড বার্গম্যান বিষয়ে বিবৃতিদাতা ১৪ জনের ক্ষমা প্রার্থনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মোঃ আহসান হাবিব জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামি মাহিদুর ও চুটুসহ অন্য রাজাকাররা মিলে চাঁদশিকারী গ্রামে ১৬-১৭ জনকে ধরে নির্যাতন করে লাইনে দাঁড় করে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন নিহত হন। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। আজ দ্বিতীয় সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আরেক মামলায় বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৬তম সাক্ষী সোলায়মান সরদার জবানবন্দীতে বলেছেন, সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও খান আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে রাজাকাররা শাখারীকাঠি বাজারে আক্রমণ চালিয়ে ৪২ জন হিন্দুকে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে আংশিক জেরা করেন। আজ অসমাপ্ত জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিষয়ে বিবৃতিদাতাদের ৪৯ জনের মধ্যে ড. শাহদীন মালিক, আসিফ নজরুলসহ ১৪ জন তাঁদের বিবৃতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। অপর ১০ জন নিজেরাই ব্যাখ্যা প্রদান করে দুঃখ প্রকাশ এবং পরবর্তী ধার্য দিনেও নিজেরাই শুনানি করবেন বলে জানিয়েছেন। বাকি ২৫ জনের আইনজীবী ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য সময়ের আবেদন জানিয়েছেন। বিদেশে থাকা ১২ জনের মধ্যে ৭ জন ই-মেইলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে আদেশের জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তী মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশ প্রদান করেছে। ডেভিড বার্গম্যান আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া জরিমানা ও এজলাসকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার সাজার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়া ৪৯ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ১৪ জন। পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। অপর ১০ জন নিজেরাই ব্যাখ্যা প্রদান করে দুঃখ প্রকাশ এবং পরবর্তী ধার্য দিনেও নিজেরাই শুনানি করবেন বলে জানিয়েছেন। বাকি ২৫ জনের আইনজীবী ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য সময়ের আবেদন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। শুনানি শেষে সময়ের আবেদন জানানো ২৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল। বিদেশে থাকা বাকি ১১ জনকে উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে) মঙ্গলবার বিকেল তিনটার মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার পর্যন্ত বিদেশে থাকা ৭ জন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আরও আসছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ১২ জন। তারা হলেনÑ বদিউল আলম আজম মজুমদার, রাশেদা কে চৌধুরী, ইমতিয়াজ আহমেদ, আমেনা মহসীন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আসিফ নজরুল, লায়লা খান, শাহনাজ হুদা, জাকির হোসেন, অরুপ রাহী, শাহীন ও ইলিরা দেওয়ান। অন্য দু’জন ড. শাহদীন মালিক ও হাফিজ উদ্দিন খান ব্যাখ্যা প্রদান করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাঁদের আইনজীবী এম শামসুল হকের মাধ্যমে। আর ১০ জন নিজেরাই ব্যাখ্যা প্রদান করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা ব্যাখ্যায় বলেন, আমরা যে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছি তাতে আদালত অবমাননার কোন বিষয় ছিল না। তারপরও ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করে যে, এতে আদালতের সম্মান বা মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে, সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই ১০ জন পরবর্তী ধার্য দিনেও নিজেরাই শুনানি করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও ২৫ জনের পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আনিসুল হাসান ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য প্রাইব্যুনালের কাছে সময়ের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল ২৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের সময় আবেদন মঞ্জুর করে। বাকি ১১ জন বিদেশ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে আইনজীবীর কাছে ব্যাখ্যা দেয়ায় তাদের উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে) ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এজন্য মঙ্গলবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তাদের। ১৪ জানুয়ারি বিবৃতি দেয়া ড. শাহদীন মালিকসহ দেশের ৪৯ বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে বা আইনজীবীদের মাধ্যমে বিবৃতি ও আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। ৪৯ জনের মধ্যে ১১ জন দেশের বাইরে অবস্থান করায় ট্রাইব্যুনাল তার আদেশ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে ওই ১১ জনকে অবহিত করা এবং তাদের ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আদেশ দিয়েছিল। ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগে আপত্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ- দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। তাকে ওইদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত এজলাসকক্ষে বসে থাকতেও হয়। রায়ে ডেভিড বার্গম্যান কিভাবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করছেন তা খতিয়ে দেখতে সরকারকে নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২০ ডিসেম্বও দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয়েছিল, এ রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি বিবৃতি দিয়েছেন।এ প্রতিবেদন নজরে এলে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বও দৈনিক প্রথম আলোকে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ওই বিবৃতির মূল কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলে, গত ২০ ডিসেম্বও দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ এবং গুুঁষরহম ঝঢ়ববপয রহ ইধহমষধফবংয শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয় ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ আদালতের মর্যাদাকে ক্ষুণœ করে। ২৩ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেছে, নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে অবমাননা করেছে। আদালত অবমাননার দায়ে ডেভিড বার্গম্যানের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানিয়ে প্রকাশিত সম্পাদকীয় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আরও বলে, আমরা বুঝতে পারছি না, কিভাবে একটি বিদেশী দৈনিক একটি স্বাধীন দেশের আদালতের আদেশ প্রত্যাহার করতে বলে!
×