ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ শ’ কোটি টাকার বেশি ঋণ ১২ বছর মেয়াদে পুনর্গঠনের সুযোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

পাঁচ শ’ কোটি টাকার বেশি ঋণ ১২ বছর মেয়াদে পুনর্গঠনের সুযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক খাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে এমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপের ঋণ ১২ বছর মেয়াদে পুনর্গঠনের সুযোগ রেখে নীতিমালা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নামমাত্র ডাউন পেমেন্টে (এককালীন পরিশোধ) ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে পুনর্গঠন সুবিধা নেয়ার পর কোন গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক দেউলিয়া আইনে মামলা করে সমুদয় টাকা আদায় করতে পারবে। কিন্তু প্রতারণা এবং জাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোন ঋণগ্রহীতা এ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন না। এসব ঋণের কিস্তি ও সুদের হার নির্ধারণের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নির্ধারণ করবে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়মিত সভায় নীতিমালাটি অনুমোদন করা হয়। দু’-একদিনের মধ্যে নীতিমালাটি পরিপালন করতে ব্যাংকগুলোর জন্য সার্কুলার জারি করা হবে। এ ছাড়া সভায় মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ডরুমে গবর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, চার ডেপুটি গবর্নর ও খেলাপী ঋণ পুনর্গঠন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, পাঁচ শ’ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা এখন ৩০ জনের মতো। তাদের বেশিরভাগই ভোগ্যপণ্য আমদানি, আবাসন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প, তৈরি পোশাক রফতানিমুখী নানা শিল্পে জড়িত। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক মন্দা ও দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুত-গ্যাসের সঙ্কটের কারণে এদের অনেকেই সমস্যায় পড়ে ব্যাংকের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছেন না। অনেক ভাল উদ্যোক্তা এখন খেলাপীতে পরিণত হয়েছেন। এসব কারণে বড় ঋণ গ্রহীতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সে বিষয়টি বিবেচনা রেখে ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। দুপুরের বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংক খাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে এমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপ ১২ বছর মেয়াদে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন। তবে চলমান ঋণের ক্ষেত্রে তা ৬ বছরের বেশি হবে না। বকেয়ার পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকার কম হলে ২ শতাংশ এবং ১ হাজার কোটি টাকার বেশি হলে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ভুক্তভোগীরা এসব ঋণ পুনর্গঠন করতে পারবেন। একজন ঋণগ্রহীতার একটি ব্যাংক কিংবা চারটি ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট থাকা সাপেক্ষে ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত একজন ঋণগ্রহীতা জীবনে একবার এই ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন। এতে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল, ডাউন পেমেন্ট, গ্রেস পিরিয়ড ও ঋণের সর্বনিম্ন আকার নির্ধারণ। এস কে সুর বলেন, ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা নেয়ার পর কোন গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক দেউলিয়া আইনে মামলা করে সমুদয় টাকা আদায় করতে পারবে। প্রতারণা বা জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোন ঋণগ্রহীতা এ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন না। যাদের বিরুদ্ধে দুদক কিংবা কোন আইন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মামলা রয়েছে তাঁরা এ সুযোগ নিতে পারবেন না। গ্রাহকের আর্থিক সক্ষমতা ও প্রাক্কলিত ক্যাশ ফ্লো বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত ১০টি চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেট ফার্ম দ্বারা প্রত্যয়নপূর্বক অন্য প্রয়োজনীয় দালিলাদিসহ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনি বলেন, ঋণ পুনর্গঠন সুবিধাপ্রাপ্ত গ্রাহক প্রথম তিন বছর কোন নগদ লভ্যাংশ প্রদান করতে পারবে না। এ ছাড়া প্রথম তিন বছরে সর্বশেষ মঞ্জুরিসীমার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত তলবী এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত সর্বশেষ মঞ্জুরিকৃত অঙ্কের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মেয়াদী ঋণ সুবিধা পেতে পারে। পুনর্গঠিত ঋণ ‘স্পেশাল মেনশন এ্যাকাউন্ট’ হিসেবে শ্রেণীকৃত হবে এবং প্রযোজ্য হারের অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এস কে সুর বলেন, দু’-একদিনের মধ্যে নীতিমালাটি পরিপালন করতে ব্যাংকগুলোর জন্য সার্কুলার জারি করা হবে। এছাড়া সভায় দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেয়ার বিষযে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিধা দিতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এক নির্দেশনার মাধ্যমে সব পর্যায়ের উদ্যোক্তার ঋণ পুনর্তফসিলে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। ওই সুবিধার আওতায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনর্তফসিল হয়। তার পরও ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ কমেনি। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
×