ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ননি ও তাহেরের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ননি ও তাহেরের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নেত্রকোনার মুসলীম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি (৬২) ও নেজামে ইসলামির ওবায়দুল হক তাহেরের (৬৪) বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনে ওপর উভয় পক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কি হবে না, সে বিষয়ে আদেশ প্রদান করা হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশন পক্ষ আসামিদ্বয়ের ছয়টি চার্জের ওপর শুনানি করার পর আসামি পক্ষের আইনজীবী ডিসচার্জের একটি আবেদন করেন। তার ওপরও শুনানি শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও আসামি পক্ষে মিজানুল ইসলাম চার্জের উপর শুনানি করেন। এ সময় প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি উপস্থিত ছিলেন। নেত্রকোনার এ দুই আাসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ গঠন করেছে ট্রাইব্যুনাল। ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এ দুই আসামিকে গ্রেফতারের পরদিন ১৩ আগস্ট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ৫ নবেম্বর একটি মামলার আসামি ওবায়েদুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননির বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মোট চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট। ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা, প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ। তদন্ত সংস্থা চারটি অভিযোগ থেকে প্রসিকিউশন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ছয়টি অভিযোগ দািখল করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে চার্জ-১ : একাত্তরের ১৭ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে রাজাকারেরা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। এরপর নেত্রকোনা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী ব্রিজে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর বাউসী বাজারের ৪০০-৪৫০টি দোকান ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া। চার্জ-২ : ৪ অক্টোবর ১৯৭১, সকাল আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ার সামানের রাস্তা থেকে আসামিরা কৃতি ফুটবলার দাবির হোসেনকে অপরহরণ করে। এরপর নির্যাতন চালিয়ে মোক্তারপাড়া ব্রিজের নিয়ে গুলি করে হত্যা করা। চার্জ-৩ : ২৯ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রামে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে ৭ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা। চার্জ-৪ : রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আতাউর রহমান ননি ও অন্যান্য রাজাকাররা শহরের মোক্তার পাড়ায় মলয় বিশ্বাসের বাড়ি এবং এ্যাডভোকেট শ্রীশ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল, মানষিক নির্যাতন ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। চার্জ-৫ : ১৫ নবেম্বর ১৯৭১ সকাল ১১টার দিকে আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে। এরপর লক্ষীগঞ্জ ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করা। চার্জ-৬ : অক্টোবরের মাঝামাঝি শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে হত্যা। তাদেরকে নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে এনে নেত্রকোনা ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়। উল্লেখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ মোট ১৬টি মামলার বিচার হয়েছে। বর্তমানে দুইটি ট্রাইব্যুনালে মোট আটটি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। আর তদন্ত সংস্থা ২১টি মামলার তদন্ত করছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
×