বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, নিজ কার্যালয়ে তালা মেরে রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংলাপের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন। অবরোধ-হরতাল-পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতার পরিবর্তন করা যাবে না। গণতন্ত্রের পথে থাকলে সংলাপ অবশ্যই হবে। কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে মারা খুনীর সঙ্গে আলোচনা বা আপোস হতে পারে না। আর আরাফাত রহমান কোকোর লাশ নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র করা হলে তার দায়-দায়িত্বও খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। আর সন্ত্রাস বন্ধ না করলে তাদের পরিণত হবে আরও ভয়াবহ।
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নগর চৌদ্দ দল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা-সহিংসতা ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন নির্বাচন নিয়ে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে না দিয়ে সংলাপের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আমরা ভেবেছিলাম পুত্র শোকে তিনি নোংরা রাজনীতি থেকে সরে আসবেন। কিন্তু তা না করে তিনি অবরোধ-হরতাল চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, মানুষ পোড়ানো বন্ধ না করলে ভয়াবহ পরিণতি হবে। তার জন্য অপেক্ষা করুন, প্রস্তুত হোন। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সংলাপের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা সংলাপের কথা বলেন তাদেরকে আমি বলবো, আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংলাপ করুন। তাঁকে (খালেদা) মানুষ পোড়ানো বন্ধ করতে বলুন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পথে থাকলে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। কিন্তু মানুষ পোড়ানো খুনীর সঙ্গে আমি আলোচনায় বসতে পারি না। তাদের সঙ্গে কোন
আপোস হবে না। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদার কর্মসূচী নাশকতা-অন্তর্ঘাত-প্রতিহিংসার রাজনীতি। এতে মানুষ আতঙ্কিত। আমিও আতঙ্কিত, বাকরুদ্ধ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, খালেদা জিয়া ২১ দিন যাবত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে গুপ্তঘাতকদের নামিয়ে দিয়ে গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে। নির্দেশ দিয়ে যাত্রাবাড়ি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। সেখানের দগ্ধ মানুষ আজ মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
নগর আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, শুনেছি লাশ নিয়ে নাকি আরও ষড়যন্ত্র-নাটক হবে। লাশ নিয়ে যদি কোন ষড়যন্ত্র হয় এর দায়-দায়িত্ব আপনাকে (খালেদা) নিতে হবে। তিনি বলেন, সব নাটক ভাল হয় না। জাসদের মহানগরের সমন্বয়ক মীর হোসেইন আকতারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেনÑ জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহদাত হোসেন প্রমুখ।
মিথ্যাচার করলে আইনী ব্যবস্থাÑ নানক ও আজম ॥ বিগত ২০০৪ সালে রাজধানীর শাহবাগে একটি দ্বিতল বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে কেউ মিথ্যাচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম। সোমবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ হুঁশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, ফরিদুন্নাহার লাইলি, সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, এস এম কামাল হোসেন ও যুবলীগের শহীদ সেরনিয়াবাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপের দরজায় তালা দিয়েছেন খালেদা- সুরঞ্জিত ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত না করে উনি সংলাপের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
সোমবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠীর উদ্যোগে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, প্রতিহিংসার সঙ্গে শান্তির সহাবস্থান হয় না। দেশ বিরোধীদের সঙ্গে দেশ প্রেমীদের সমঝোতা হয় না। অবরোধের নামে মানুষ হত্যা আর মেনে নেয়া যায় না। বিএনপি নেত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যবদ্ধ হতে মানুষের মধ্যে আর কোন সংশয় নেই। তাই আপনি হরতাল অবরোধ তুলে নেন। মানুষ হত্যার রাজনীতি বন্ধ করুন।
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বাধীনতা লীগের মহাসচিব ডাঃ খন্দকার ইমদাদুল হক সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের নগর সম্পাদক হারুন চৌধুরী, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির মিজি, নৌকা সমর্থক গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি রেজাউল কবির রেজা প্রমুখ।
সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ এখন বুঝছেন বিএনপি নেত্রী- ড. হাছান ॥ রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেট, মীরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হরতাল-অবরোধবিরোধী মিছিল সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নিজের সন্তানের মৃত্যুর পরে হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের ছোড়া পেট্রোল বোমায় নিহত সন্তানদের মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ এখন নিশ্চয় এখন বুঝতে পারছেন খালেদা জিয়া।
রাজধানীর মিরপুর এক নম্বর এলাকায় মুক্তবাংলার সামনে হরতাল-অবারোধের প্রতিবাদে ‘হোক প্রতিরোধ; হোক প্রতিবাদ’ নামের এক সমাবেশের আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যুব মহিলা লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাবিনা আক্তার তুহিন এমপির সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দিপু মনি, আসলামুল হক আসলাম এমপি প্রমুখ। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আনন্দ সিনেমা হলের সামনে হরতালবিরোধী সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর। আর সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশে ছিল মুখরিত।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: