ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যাত্রাবাড়ী পেট্রোলবোমা পৃথক তিন মামলা ॥ দুটিতে খালেদা জিয়া হুকুমের আসামি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

যাত্রাবাড়ী পেট্রোলবোমা পৃথক তিন মামলা ॥  দুটিতে খালেদা জিয়া হুকুমের আসামি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী টানা অবরোধে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোলবোমা ছুড়ে ৩১ বাসযাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানায় তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। দায়েরকৃত তিন মামলার মধ্যে বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলায় ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলায় দেশব্যাপী টানা অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। শনিবার যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক কে এম নুরুজ্জামান মামলা তিনটি দায়ের করেন। খালেদা জিয়া ছাড়াও ওই দুই মামলায় বিএনপির কেন্দ্র্রীয় নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, এমকে আনোয়ার, শওকত মাহমুদসহ ১৮ জনকে নাশকতার নির্দেশদাতা এবং ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত অনেক নেতাকর্মীকে মামলায় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার ২১ নম্বর আসামি বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক নেতা বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান সেলিম ভূইয়াকে গ্রেফতার করে দায়েরকৃত তিন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। গত ২৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন মাতুয়াইল কাঠেরপুল এলাকায় অবরোধকারীরা ঢাকা-ভূলতা রুটে যাতায়াতকারী ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪৮৮৬ নম্বরের গ্লোরী পবিহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে পর পর কয়েকটি পেট্রোলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। এতে ৩১ যাত্রী দগ্ধ হন। দগ্ধদের মধ্যে ৩ জনকে ওই রাতেই স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। বাকি ২৮ জনকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাঃ পার্থ শংকর পাল জনকণ্ঠকে জানান, দগ্ধদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ২৮ জনের মধ্যে একজনকে সুচিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ২৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক কে এম নুরুজ্জামান বাদী হয়ে শনিবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে একটি, একই দিন দুপুর সোয়া ১২টায় আরেকটি এবং একই দিন আরেকটি মোট তিনটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলায় ঘটনায় দায়েরকৃত ৫৮ ও ৫৯ নম্বর মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি দেখানো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তিন নম্বর মামলাটি করা হয়। মামলা বলা হয়, খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট মাহাবুব হোসেন, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ ওরফে নিজাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মহিলা বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রিজভী আহম্মেদ, বরকত উল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুন নবী খান সোহেল ও আজিজুল বারী হেলালসহ বিএনপির ১৮ নেতার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় মামলার এজাহারনামীয় ৫০ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা বাসটিকে পেট্রোলবোমা মেরে ৩১ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। মামলাটি তিনটির তদন্তকারী কর্মকর্তা করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক পরিমল চন্দ্র দাসকে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, মামলার এজাহারনামীয় ২১ নম্বর আসামি রাজধানীর কদমতলী থানাধীন ধনিয়া এলাকার একে স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষক নেতা সেলিম ভূঁইয়াকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে তিন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে প্রত্যেক মামলায় ১০ দিনের করে মোট ৩০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোর্পদ করা হয়। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, বিচারক মিজানুর রহমান তিন মামলার শুনানি শেষে দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিন এবং আরেকটি মামলায় ৪ দিন মোট ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আসামি সেলিম ভূঁইয়াকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলার অন্য আসামি ও নির্দেশদাতাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
×