ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়াকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রেফতার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়াকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রেফতার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান অবরোধে বোমা হামলা, সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। আর তা না হলে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এছাড়া যারা বোমা মেরে ক্ষমতায় আসতে চান, তাদের সঙ্গে কোন সংলাপ হতে পারে না বলেও মতামত দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। রবিবার রাজধানীতে দেশব্যাপী টানা অবরোধের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠনের পৃথক পৃথক কর্মসূচীতে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ। অবরোধের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোল বোমা মেরে ৩১ জনকে দগ্ধ করার ঘটনায় খালেদাকে হুকুমের আসামি করে পুলিশের মামলার একদিন বাদে রবিবার এই দাবি জানায় আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠনটি। অবরোধে গাড়ি পুড়িয়ে চালক ও যাত্রীদের হত্যার জন্য খালেদাকে দায়ী করে কর্মসূচী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার তার গুলশানের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী দিয়েছিল পরিবহন শ্রমিক লীগ। গুলশান-২ নম্বরে পুলিশ আটকে দেয়ার পর সেখানে সমাবেশ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে খালেদাকে গ্রেফতারের জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে অনশনের কর্মসূচী দেয় তারা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রবিবার দিনব্যাপী অনশন কর্মসূচীর পর পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গ্রেফতারের জন্য সরকারকে সময় দেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, সহিংসতার জন্য হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রেফতার করুন। অন্যথায় ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার খালেদাকে গ্রেফতারের দাবিতে শ্রমিক সমাবেশ হবে। এরপরও গ্রেফতার না হলে ৩ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবে পরিবহন শ্রমিক লীগ। তারপরও গ্রেফতার না হলে ১৮ ফেব্রুয়ারি মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে ইনসুর আলী জানিয়েছেন। ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন ॥ খালেদা জিয়া বোমা ফাটিয়ে, মানুষ মেরে ও গাড়ি পুড়িয়ে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যেতে চান। তিনি বিদেশী প্রভুর ইঙ্গিতে দেশে নৈরাজ্যকর প্ররিস্থিতির সৃষ্টি করছেন। অচিরেই অবরোধকারীদের দেশের জনগণ অবরুদ্ধ করে রাখবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ খালেদার হরতাল অবরোধ মানে না। খালেদা জিয়ার বিচার দেশের মাটিতেই হবে। সম্প্রতি বিএনপি জামায়াত জোট কর্তৃক দেশব্যাপী সংগঠিত সন্ত্রাসী তা-বলীলার বিরুদ্ধে রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এসব বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে এই প্রতিবাদ সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশে হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্য-নাশকতা চলছে। এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে বাংলার জনগণই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ১৯৭১ সালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন। আগামীতেও দেশ ও জনগণের পাশে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পেট্রোল বোমা মেরে যারা ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মা হিসেবে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বেগম জিয়া দরজা না খুলে শিষ্টাচার ও সৌজন্য বোধটুকু হারিয়ে ফেলেছেন। মোজাম্মেল হক বলেন, খালেদা জিয়া আলোচনা চান না। কারণ তিনি একদিকে আলোচনার কথা বলছেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী তাকে শোক জানানোর জন্য গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় তিনি আলোচনা চান না, শান্তি চান না। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মজনুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক বলরাম পোদ্দার, জোট নেতা হাবিবুর রহমান মানিক, কৃষক লীগের সহসভাপতি এমএ করিম প্রমুখ। ক্রীড়া পরিবার ও স্কেটিং ফেডারেশন ॥ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের মধ্যে দেশব্যাপী চলমান বোমা হামলা, সন্ত্রাসী ও সহিংসতা বন্ধ ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার এবং বাংলাদেশ স্কেটিং ফেডারেশন। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে দাবি জানানো হয়, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, আন্দোলনের নামে বোমা মারা, সন্ত্রাসী, সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, নারী, শিশু ও মানুষ হত্যার রাজনীতিকে ঘৃনা জানাতে হবে, অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের আটক করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শিশু মেহরাব ইসলাম তন্ময় বলে, এদেশে আর কোন মানুষকে জ্বালিয়ে হত্যার দৃশ্য দেখতে চাই না। কোন শিশুর সুন্দর মুখখানি যেন আর না জ্বলে-পুড়ে যায়। কোন মাকে যেন দগ্ধ হয়ে শিশুকে নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে না হয়। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিশু সাব্বির, তৌকির ও মাসুমও একই দাবি জানিয়েছে। সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বাবুলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন দেওয়ান শরিফুল আরেফিন টুটুল, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, শেখ মোঃ আসলাম, সত্যজিৎ দাস রপু, ইমজিয়াজ সুলতান জনি প্রমুখ। এদিকে চলমান অবরোধ কর্মসূূচীর বিরুদ্ধে সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ অর্গানাইজেশন্স (এফবিএইচআরও)।
×