ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির ‘অশোভনীয়’ আচরণের নিন্দায় ১৪ দল

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

বিএনপির  ‘অশোভনীয়’ আচরণের  নিন্দায় ১৪ দল

সংসদ রিপোর্টার ॥ সমবেদনা জানাতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাক্ষাত না করা এবং ‘অশোভনীয়’ আচরণের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদে মুখর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা। চৌদ্দ দলের নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দরজা থেকে ফিরিয়ে বিএনপি আবারও একটি সংলাপ ও সমঝোতার সুযোগ হারাল। প্রধানমন্ত্রীকে দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া যে আচরণ করেছেন, তাদের সঙ্গে আর কোন সংলাপ হবে না। বিএনপি যা করেছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। রবিবার হরতাল-অবরোধবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলন এবং চৌদ্দ দলের বৈঠকে নেতারা এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করলেও আওয়ামী লীগ সাংবাদিক সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে আনুষ্ঠানিক শোক জানিয়েছে। অপর এক অনুষ্ঠানে নগর চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম জানান, কোকোর জানাজায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। সংলাপে লাথি মারো- চৌদ্দ দল ॥ বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিয়ে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া যে আচরণ করেছেন তাতে তাদের সঙ্গে আর কোন সংলাপ হবে না, ‘লাথি মারো সংলাপে’। চূড়ান্ত রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে বিএনপির। এবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের এই অগ্রযাত্রায় যারা বাধাগ্রস্ত করবে তাদের প্রতিহত করা হবে। রবিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন পিকিং গার্ডেনে ঢাকা মহানগর ১৪ দলের এক সভায় নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এ সভার আয়োজন করা হয়। সাম্যবাদী দলের ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বাবুল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ সেলিম প্রমুখ। সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘লাথি মারো সংলাপকে’। আর সংলাপ হবে না। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বিএনপির চূড়ান্ত রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে। এখন আর দেশে কোন সঙ্কট নেই। ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা করবেন, আর আমরা আপনার সঙ্গে আলোচনা করব। আপনার সঙ্গে আলোচনা হবে না। তিনি বলেন, ঢাকা পাহারা দিতে আমরা কমিটি করছি। কোন এলাকায় যাতে কেউ পেট্রোল বোমা না মারতে পারে, সে প্রতিজ্ঞা করেছি আমরা। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, ‘সংলাপকে লাথি মারি’। এটা শুধু ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের নয়, সব মানুষের কথা। আসুন, আমরা দীপ্ত পদভারে এগিয়ে যাই। তাদের সঙ্গে কোন আপস বা আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না, এদের প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্রমান্বয়ে আরও ঘুরে দাঁড়াবে। সংলাপের সুযোগ হারাল বিএনপিÑ ওবায়দুল কাদের ॥ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দরজা থেকে ফিরিয়ে বিএনপি আবারও একটি সংলাপ ও সমঝোতার সুযোগ হারাল। শনিবার একটি সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল সংলাপ ও সমঝোতার। কিন্তু নিজের কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে রেখে খালেদা জিয়া সমঝোতাকে অবরুদ্ধ করে ফেললেন, সংলাপকেও অসম্ভব করে ফেললেন। রবিবার দুপুরে রাজধানীর সরকারী তিতুমীর কলেজে ছাত্রলীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুর পর কেউ ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে যাবেন, কিন্তু সেখানে তিনি গেলেন কারণ তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ মা। প্রতিহিংসার আগুনে দগ্ধদের অভিশাপ অবশ্যই লাগবে- হানিফ ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বিএনপি-জামায়াত জোটের উদ্দেশে বলেছেন, হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। আল্লাহর একটা বিচার আছে। অনেকেই বলেন প্রতিহিংসার আগুনে দগ্ধদের অভিশাপ তাদের লেগে যাবে। অজান্তে আল্লাহ পৃথিবীতেই মানুষের বিচার করেন। তাই কেউ অন্যকে যেভাবে কষ্ট দেবেন, সেইভাবেই সে নিজে কষ্ট পাবেন। রবিবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত অবরোধ-হরতালবিরোধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। কোকোর মৃত্যুতে আ’লীগের শোক প্রকাশ ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে শোক জানিয়ে আওয়ামী লীগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছে, আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার শান্তি কামনা করে বিএনপি তাদের সব কর্মসূচী প্রত্যাহার করবে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। রবিবার দুপুরে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে হাছান মাহমুদ খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, কোকোর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে, খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবার যেন এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন এই কামনা করি। হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেখানে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন। আর শিমুল বিশ্বাস বলছেন, শোক বই নিয়ে আসার আগেই নাকি প্রধানমন্ত্রী চলে যান। অথচ খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ফটক থেকে প্রধানমন্ত্রীর দাঁড়িয়ে থাকার স্থানের দূরত্ব ছিল এক মিনিটের পথ। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দি, এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কোকোর জানাজায় অংশ নেবে আওয়ামী লীগ- ত্রাণমন্ত্রী মায়া ॥ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের লাশ দেশে ফিরলে তার জানাজায় অংশ নেবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রবিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভেনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী সমর্থক জোট আয়োজিত বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধবিরোধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সম্মিলিত আওয়ামী সমথর্ক জোটের সভাপতি আবদুল হক সবুজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি প্রমুখ।
×