ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য ধরাপড়াদের

মোটরসাইকেলের মাধ্যমে পেট্রোল সংগ্রহ করছে নাশকতাকারীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

মোটরসাইকেলের মাধ্যমে পেট্রোল সংগ্রহ করছে নাশকতাকারীরা

শংকর কুমার দে ॥ পেট্রোল পাম্প থেকে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে পেট্রোল সংগ্রহ করছে অবরোধের নামে নাশকতাকারী সহিংস সন্ত্রাসীরা। যারা ধরা পড়ছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যুবদল-ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার নামধারী দুর্বৃত্ত। দীর্ঘদিনের টানা অবরোধে অতিষ্ঠ জনতার রুদ্ররোষ কবলিত হয়ে দুর্বৃত্তরা গণধোলাইয়ের প্রবণতার শিকারে পরিণত হচ্ছে এ সব দুর্বৃত্ত। যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, আগুন দেয়া, বোমাবাজির সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়া- সহিংস সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্র জানায়, অবরোধের নামে যানবাহনে যেসব পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হচ্ছে সে সব দাহ্য পদার্থ পেট্রোলের উৎসস্থল হচ্ছে পেট্রোল পাম্প। পেট্রোল পাম্পে মোটরসাইকেল নিয়ে এসে সংগ্রহ করা হচ্ছে পেট্রোল। এ সব পেট্রোল গোপন স্থানে মজুদ করে তা দিয়ে পেট্রোলবোমা তৈরি করা হচ্ছে। পেট্রোলবোমা তৈরির পর তা যানবাহনে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আবার পেট্রোলবোমা তৈরি যারা করতে পারদর্শী না তারা যানবাহনে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাইয়ের আগুন জ্বেলে আগুন ধরিয়ে নিরীহ নিরপরাধ শিশু-কিশোর, মহিলা-বয়োবৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষকে জীবন্ত দ্বগ্ধ করে পুড়িয়ে হত্যা করছে। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশে যেসব দুর্বৃত্ত হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বিএনপির যুবদল-ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার রাজনীতির নামের দুর্বৃত্ত। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে। সূত্র জানায়, গত দুই দিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন ডেমরা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ও ঢাকা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন কাশিপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানী ঢাকার লালবাগে বোমা তৈরির সময়ে বিস্ফোরণে আহত হয়ে নিউমার্কেট থানার ছাত্রদল সভাপতি বাপ্পি নিহত হওয়ার ঘটনাও তদন্ত করে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এ সব ঘটনায় যারা জড়িত তারা প্রত্যেকেই বিএনপির যুবদল-ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার নামের দুর্বৃত্ত বলে পরিচয় পেয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। তারা কিভাবে কার নির্দেশে যানবাহনে নাশকতা চালাচ্ছে- সে সব নির্দেশদাতাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। যানবাহনে নাশকতা চালানোর নির্দেশদাতাদের মধ্যে অনেকেই জেলা ও থানা পর্যায়ের বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক নেতা নামধারী মদদদাতা। সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার সময়ে ধরা পড়েছে মাহমুদ, আবু সাঈদ ও শিহাব। তিনজনই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার। তাদের সঙ্গে আরও দশ-বারো জন ছিল। তারাও জামায়াত-শিবিরে ক্যাডার। এই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররাই পেট্রোলবোমা ছুড়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ঢাকাগামী এক যাত্রীবাহী বাসে। যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা নেমে গিয়ে এলাকার মানুষজনের সহায়তায় তিনজনকে ধরে ফেলে এবং তাদের সহযোগী দশ-বারোজন পালিয়ে যায়। জনতার রুদ্ররোষে পড়ে গণধোলাইয়ের শিকারে পরিণত হয়ে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে দুর্বৃত্তরা। তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তির পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, স্থানীয় পেট্রোল পাম্প থেকে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে পেট্রোল সংগ্রহ করে পেট্রোলবোমা তৈরি করে যাত্রীবাহী বাসে নিক্ষেপ করেছে। তাদের সঙ্গে যেসব সহযোগী ছাত্রশিবিরের নাশকতাকারী ছিল তাদের নাম-পরিচয় উল্লেখ করেছে। এ সব জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরাই এক সপ্তাহের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের সমবায় মার্কেটের সামনে বন্ধন গাড়িতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে ডাক্তার দম্পতি ও শিশুসহ ২০ জন জীবন্ত দগ্ধ করেছে। এ সব সহিংস সন্ত্রাসীদের নাম-পরিচয় পাওয়ার পর গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে ঢাকা-ডেমরা সড়কের যাত্রাবাড়ী থানাধীন ডেমরা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে প্রায় ৩০ জনকে জীবন্ত দগ্ধ করেছে। তারা রাতের আঁধারে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও বোমাবাজি করে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হলেও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সংগ্রহ করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। তারা কিছু দুর্বৃত্তের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই সহিংস হামলা যারা করেছে তারাও জামায়াত-শিবির ও বিএনপির যুবদল ও ছাত্রদলের ক্যাডার নামের দুর্বৃত্তরা। সহিংস হামলায় জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, লালবাগে বোমা তৈরির সময়ে বিস্ফোরিত হয়ে আহত হয়ে নিহত হওয়া ব্যক্তিটিও বিএনপির ছাত্রদলের থানা পর্যায়ের নেতা। একই সময়ে বনানীর মেস থেকে ৫ শিবির ক্যাডারকে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে কিভাবে পেট্রোলবোমা তৈরির পেট্রোল, বোমাবাজির রাসায়নিক দ্রব্য, যানবাহনে আগুন দিচ্ছে- তার বিবরণ দিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার উপকমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, যানবাহনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে যানবাহনে আগুন দেয়া, বোমাবাজি ও নাশকতা চালানোকারীরা চিহ্নিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। বেশি দিন তারা পরিচয় গোপন করে নাশকতা চালাতে পারবে না। আর মানুষজনও তাদের নাশকতার শিকার হয়ে বেশিদিন চুপচাপ থাকবে না। সাধারণ মানুষ, যানবাহন আরোহী, পথচারীদের মধ্যে প্রতিরোধ করে দাঁড়ানোর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। জনতার রুদ্ররোষে কবলিত হয়ে গণধোলাই বা গণপিটুনির শিকারে পরিণত হওয়ার প্রবণতা অশুভ আলামতের ইঙ্গিত বহন করছে।
×