ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

ওরা পাকিস্তানের এজেন্ট

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

ওরা পাকিস্তানের এজেন্ট

রামদা দিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা; গানপাউডার ছিটিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করে মানুষ মারা; যাত্রীবাহী চলন্ত ট্রেনে পেট্রোলবোমা মেরে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মানুষ হত্যা; রেলের ফিশপ্লেট তুলে লাইন কেটে রেল দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করা; শরীর ক্ষতবিক্ষত করা; গ্যারেজে রাখা বাসের পেট্রোলবোমা মেরে ঘুমন্ত হেলপারকে পুড়িয়ে ছাই করা; চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষের নাক-মুখ, হাত-পা ঝলসে দিয়ে হত্যা করা; অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশকে পিটিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করা; যন্ত্রণাকাতর মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভাতে না দেয়া; যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইকে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা; প্যাডেল রিকশায় পেট্রোলবোমা মেরে যাত্রীসহ রিকশাচালককে ঝলসে দেয়া; বিভিন্ন স্থাপনায় পেট্রোলবোমা মারা; কি ভয়ঙ্কর। শিক্ষিকা শামসুন্নাহার মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন; কিন্তু এক চোখ হারিয়ে কিশোর অনিক কী করবে। পুরো জীবনটাই তার পড়ে আছে। প্রধান টার্গেট বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভোটার সমর্থকরা। টার্গেট অফিসগামী কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, খেটে খাওয়া মানুষ অর্থাৎ সাধারণ জনগণ। তারা ঘরে বসে থাকলে খাবার জোটে না, বাচ্চার পেন্সিল-খাতা কেনার টাকা আসে না। অভুক্ত স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য কাজে বেরিয়েছে, বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে মানুষটা চাল-ডাল নিয়ে ঘরে ফিরবে কিন্তু সে ফিরল ঠিকই, তবে লাশ হয়ে। অনাহারী মানুষ তখন কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে। এ যেন সেই পাকিস্তানী বর্বরতা, এখন করছে রাজাকারের বংশধররা। কী চায় তারা? তারা চায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং উদীয়মান অর্থনীতির বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে আইএসআই, তালেবান, আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুড, বোকো হারাম প্রভৃতি আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদী সংগঠনের এজেন্সি এখানে স্থাপন করা আর তার কেয়ারটেকার হবেন মিলিটারি জিয়ার স্ত্রী খালেদা এবং তাঁর পরম মিত্র জামায়াত-শিবির। আর থাকবে আন্তর্জাতিক স্মাগলার চক্রের এজেন্সি, আর চালাবে খালেদার সুযোগ্য (!) তনয় তারেক। কি ভয়ঙ্কর ছিল সেসব চিত্রকল্প। না, কোন চিত্রকল্প নয়, এসব বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা, যা বাংলাদেশের ফ্যাসিজমের প্রধান এজেন্ট মিলিটারিপতœী খালেদা জিয়া ঘটিয়ে চলছেন। তিনি আজ মানুষের রক্তচোষা রাক্ষসিনীর রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। ছেলেবেলায় গল্প শুনেছি, মানুষের রক্তচোষা রাক্ষসীরা সুন্দরী নারীর চেহারা ধরে (রাক্ষসীরা নাকি মানুষ-পশু-পাখি সব কিছুর চেহারা ধরে মর্তে আবির্ভূত হতো) মর্তে আবির্ভূত হতো। বিশেষ করে অমাবস্যার রাতে। অমাবস্যার রাতে কেউ ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির পাশের বটগাছের তলায় গেলে রাক্ষসী তার ঘাড় মটকে রক্ত চুষে খেয়ে ফেলত। এমনি এক সুন্দরী রাক্ষসী বাংলাদেশের মাটিতে নেমে এসেছে এবং সারাদেশে মানুষের ঘাড় মটকে রক্ত খাচ্ছে। এই রাক্ষসীর সবচেয়ে প্রিয় স্কুল গোয়িং শিশু-কিশোর আর নারী অর্থাৎ একেবারে তাজা রক্ত। এই রাক্ষসীরা (ভাষান্তরে রাক্ষসিনী) মর্তে আবির্ভূত হয়ে পাতা ঘন অন্ধকার বটগাছে অবস্থান করত। তখন এরা অমাবস্যার অন্ধকারে বটগাছ থেকে লোকালয়ে নামত শিকারের খোঁজে। সন্ধ্যায় বাতি দেয়ার আগে গৃহবধূরা যখন গেরস্থালির শেষ কাজটি করার জন্য পুকুরঘাটে যেত তখন একা পেয়ে তাদের ঘাড় মটকাত। আবার প্রকাশ্যে দিনের বেলায় লোকালয়ে প্রবেশ করত ময়লা-ছেঁড়া কাপড় পরে, লাঠি হাতে কুঁজো বুড়ির বেশে। ভিক্ষার ছলে কাউকে ভুলাতে পারলে বনের ভেতর নিয়ে যেত এবং তার সুন্দর চেহারা বীভৎস রাক্ষসিনীর বেশে আবির্ভূত হয়ে ঘাড় মটকাত। এই রাক্ষসীরা ছলাকলা জানত। অন্ধকার রাতে জঙ্গলে গেলে একবার ডান কানের ওপর দিয়ে ছোঁ মেরে চলে যেত, আবার বাম কানের ওপর দিয়ে। কখনও বা পূর্ণ যৌবনা সুন্দরী রমণীর রূপ ধরে কাছে ডাকত, লোভে পড়লেই হলো, কাছে ডেকে নিয়ে ঘাড়টা মটকে রক্ত চুষে নিয়ে চলে যেত। ভয় পেলে কথাই নেই। তবে না, ভয় না পেয়ে বা লোভ আমলে না নিয়ে কষে ধমক মারলে দেখা যেত বিড়ালের (কালো) রূপ ধরে মিউ মিউ করে পাশের পাট খেতে ঢুকে যেত। আমাদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তার পাশে দুটি বিশাল বটগাছ ছিল। কালীবাড়িতে; একটির গোড়ায় কালীপূজা, অপরটির গোড়ায় শিবপূজা হতো। ভূতের গল্প শুনতে শুনতে আমাদের মনেও একটা বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেল এই বটগাছ দুটোতে ভূত থাকে। অনেকে নাকি দেখেছে। ওই গাছের নিচ দিয়ে আমাদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তা। নির্জন ভর দুপুরে বটগাছের নিচ দিয়ে যেতে কখনও কখনও আমাদেরও ভয় হতো। তাছাড়া ওই রক্তচোষা রাক্ষসরাই নাকি রমণীর বেশে ভূত হয়, দুই চোখ বড় বড় পেঁচার মতো আজব ধরনের হিংস্র জন্তু হয়। আবার কখনও পার্লারে গিয়ে মেকাপ করে চেহারা ফর্সা করে চুল ফুলিয়ে ছলনাময়ী রূপে আবির্ভূত হয়। এরা যে কোন জায়গায়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন সমাজে মিশে যেতে পারে। বাংলাদেশেও মানুষের চেহারায় রূপে এমনি ছলনাময়ীর আবির্ভাব ঘটেছে। তার ছলনা জনসমক্ষে ধরা পড়ার পর তার কাছের মানুষরা দূরে সরে গেছে, সহচর-সহচারীরা ছলনা ভালবাসে না তাই ঘরে বসে লুডু খেলছে, টিভিতে হরর ছবি দেখছে। মির্জা ফখরুল যেহেতু ভারপ্রাপ্ত, তাঁর ভারমুক্ত করতে হলে তাঁকে তো বেরুতেই হবে। তিনি কোন চিন্তাভাবনা না করে তাদের বশংবদ প্রেসক্লাব ম্যানেজমেন্টের দ্বারস্থ হলেন-ভাইয়েরা, ধরণীতে ছলনাময়ীর ভয়, বাইরে লন্ডনের কর্কশ টেলিফোন। সঙ্গে লইলেন ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মহসিন হলের ৭ খুনের দণ্ডপ্রাপ্ত শফিউল আলম প্রধানকে। প্রধান সহযোগী হলেন। ভাবখানা এমন তিনিও মির্জার মতোই ছলনাময়ীর অতীব পেয়ারের। লন্ডন থেকে আবার চোখ রাঙানি এই অর্বাচীনটাকে কেন, ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সরদার। ভাইয়া কি করব, পা ছাড়ছে না যে, ছাড়িয়ে নাও। প্রেসক্লাবে অবস্থানের সুবিধা হলো শত শত সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান থাকে, থাকে টেলিভিশন ক্যামেরাম্যানও। অতএব চারদিকে নাম ছড়িয়ে দেয়া যাবে সহজেই। আর যদি সেখান থেকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে তো পুরো রাষ্ট্রে, শত শত স্টিল মুভি ক্যামেরা ক্লিক করে চলতে থাকবে, সঙ্গে সঙ্গে অন এয়ার হয়ে যাবে। দেবালয়ে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগবে, একি রাক্ষসিনী ছলনাময়ী হয়ে একি করছে। সুন্দর চেহারা ধারণ করে রাস্তায় নামছেন না কেন? তাঁর তো কথা ছিল নিরপেক্ষ জায়গা প্রেসক্লাবে গিয়ে অবস্থান নেয়ার। নিচ্ছেন না কেন? ওখানে না যেতে পারলে যে তাঁর সব ছলনা মাটি হয়ে যাবে। যাবে কি করে? সেখানে যে আগে থেকেই গণতন্ত্র রক্ষাকারী শান্তিবাহিনী মানবতাবাদীরা দলে দলে হাজারে হাজার ঢুকে পড়েছে। প্রেসক্লাব বা ইউনিয়নের সদস্য নন তাদের সঙ্গে বের করে দিচ্ছে তারাই অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শান্তিবাহিনী। বরং মির্জারই সেখান থেকে অসম্মানিত হয়ে বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ওই সেøাগান শুনছেন না ‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস বলে যারা- ফ্যাসিজমের এজেন্ট তারা। ফ্যাসিস্ট জিয়ার এজেন্ট তারা।’ ওরা সেøাগান দিচ্ছে তোমরা ছলনাময়ীর এজেন্টরা সেøাগান দিচ্ছ না কেন। আমরা দিয়েছি ম্যাডামÑ ‘আমরা প্রেসক্লাবের গেটের পাশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিকদের নামফলকটি ‘আমরা জিয়ার সৈনিক’ সেøাগান দিয়ে ফলকটি ভেঙ্গে দিয়েছি।’ মির্জা- ‘তাহলে প্রেসক্লাব থেকে বেরোতে পারবে না। ক্লাব মেম্বাররা খুব উত্তেজিত নবীন-প্রবীণ সবাই।’ হ্যালো ‘ম্যাডাম, একটু হোল্ড করুন, ভাইয়ার টেলিফোন লন্ডন থেকে ... বলুন ভাইয়া, ‘তুমি এখন কি করছ ওখানে?’ ‘কিছু করতে পারছি না- ভেতরে ক্লাব ভর্তি সাংবাদিক’ তাহলে তো তোমার সুবিধাই হলো। না না সব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপন্থী। আমাদের পন্থীরা কোথায়? ‘আমার সঙ্গে ভয়ে রুমের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। কেন, বাইরে যে স্লোগান হচ্ছে- ‘রাজাকারের চামড়া তুলে নেব আমরা, ৫ জানুয়ারির ইলেকশনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস বলে যারা- ফ্যাসিজমের এজেন্ট তারা’, পাকিস্তানের এজেন্ট তারা; তোমার কাছে কিছুই নেই, ওদের তাড়িয়ে দিতে পার না? ‘না ভাইয়া, ওরা সংখ্যা অনেক বেশি, উত্তেজিত এবং বেশিরভাগই মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম।’ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫ লেখক : ফিল্যান্স সাংবাদিক
×