ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাকে গ্রেফতারের দাবিতে সংসদ ফের উত্তপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদাকে গ্রেফতারের দাবিতে সংসদ ফের উত্তপ্ত

সংসদ রিপোর্টার ॥ অবরোধ-হরতালের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যার দায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করায় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। বৃহস্পতিবারও খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন সরকার ও বিরোধী দলের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা। ক্ষোভে ফেটে পড়া সরকার ও বিরোধী দলের প্রবীণ নেতারা বলেন, জনগণের জীবন রক্ষায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতেই হবে, এক্ষেত্রে কোন দয়া-মায়ার সুযোগ নেই। একজন অপরাধীর (খালেদা জিয়া) স্থান কোন কার্যালয় বা অন্য কোথাও নয়, একমাত্র স্থান হচ্ছে জেলখানা। আর খালেদা জিয়া যে সহিংস ও নিষ্ঠুর পথে হাঁটছেন, সেই পথেই একদিন তিনি নিঃশেষ হয়ে যাবেন। জনবিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া আজ দেশের ১৬ কোটি জনগণকে অবরোধ করেছেন, জনগণকে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। জনসমর্থনহীন সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের দিয়ে খালেদা কোনদিন কোনকিছু আদায় করতে পারবে না। আগেও খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন, এবারও হবেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাঁরা। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অনির্ধারিত এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। অনির্ধারিত বিতর্কে অংশ নেন সরকারী দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল মতিন খসরু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশিদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ। প্রশ্নোত্তর পর্বেও বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন সংসদ সদস্যরা। হাজী মোহাম্মদ সেলিম অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার সহযোগিতায় এক মাসের বেতন দেয়ার প্রস্তাব করলে আমির হোসেন আমুসহ অন্যরা সমর্থন জানান। বিতর্কে অংশ নিয়ে সরকারী দলের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, খালেদা জিয়া জঘন্য জিঘাংসামূলক রাজনীতি শুরু করেছেন। সরকারকে পতনের জন্য নয়, যেহেতু আন্দোলনে সমর্থন পাননি সেই কারণে জনগণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন খালেদা জিয়া। তাই প্রতিহিংসামূলকভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছেন। এত মানুষ মারলেন, কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এতটুকুও দুঃখবোধ বা সমবেদনা প্রকাশ করলেন না, একটি কথাও বলেননি। কারণ তিনিই নির্দেশ দিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বোমা হামলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া অভির ঘটনা তুলে ধরে আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, কি নিষ্ঠুর খালেদা জিয়া? এটা কী রাজনীতি? খালেদা জিয়াও তো মা। তিনি এমন নিষ্ঠুরভাবে অন্য মায়ের কোল খালি করছেন? তিনি বলেন, এ পর্যন্ত হাতে-নাতে যারা ধরা পড়েছে তারা সবাই বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার। ছাত্রদলের এক সভাপতি বাসায় বোমা মারতে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা গেছে। খালেদা জিয়া আজ যে পথে হাঁটছেন, সেই পথেই তিনি শেষ হয়ে যাবেন। আগেও খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন, আগামীতেও হবেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী করে কেউ কোন দাবি আদায় করা যেত, তবে পৃথিবীতে রাজনীতি থাকত না। খালেদা জিয়া আরও মায়ের কোল খালি করতে পারেন, কিন্তু কিছু পাবেন না। একদিন জনগণের কাছে অবশ্যই কৈফিয়ত দিতে হবে। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, গোটা বিশ্ব আজ দু’ভাবে বিভক্ত। একপক্ষ শান্তির পক্ষে, অন্যপক্ষ সন্ত্রাসনির্ভর। কিন্তু সন্ত্রাস ও গণতন্ত্রে একসঙ্গে বাস করতে পারে না। খালেদা জিয়া এখন জঙ্গী নেতা মোল্লা ওমরের মতো বাংলাদেশের নেতা হয়েছেন। নাশকতা-সহিংসতা-সন্ত্রাসের কাছে দেশের গণতন্ত্র বন্দী হয়ে যাবে? সন্ত্রাসীর নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে বন্দী হয়ে থাকবে? এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে জনগণের নিরাপত্তা দিতে হবে। এ জন্য যারা অপরাধী তাদের দৃঢ়হস্তে দমন করতে হবে। কোন দয়া-মায়া দেখালে চলবে না। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে অতীতেও সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হতে দেইনি, আগামীতেও দেব না। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট নয়, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ চলছে। খালেদা জিয়া জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন, দেশের ১৬ কোটি জনগণকে অবরুদ্ধ করেছেন, দেশের জনগণকে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মানুষ মারা কী আন্দোলন হতে পারে? রাস্তায় বোমাবাজি করে, সন্ত্রাস করে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা কখনও রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না। সরকারী দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতির নামে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হতে পারে না। বাংলাদেশ ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তালেবানী শাসনে কেউ পরিণত করবে- তা হতে দেয়া হবে না। কোন বিবেকবান মানুষ ছোট শিশু, দিনমজুর, ট্রাকচালককে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে না। খালেদা জিয়ার বক্তব্যেই প্রমাণ হয়েছে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে জঙ্গী-সন্ত্রাস চালাচ্ছে তা তালেবান-আল কায়েদার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। তিনি বলেন, তালেবান-আল কায়েদার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোন তফাত নেই। বিতর্কের সূত্রপাত করে চীফ হুইপ আসম ফিরোজ জনকণ্ঠের একটি রিপোর্ট তুলে ধরে বলেন, বনানীতে বোমার কারখানাসহ শিবির ক্যাডাররা ধরা পড়েছে। লালবাগে বাসায় বোমা বানাতে গিয়ে আহত ছাত্রদলের সভাপতি বাপ্পি মারা গেছে। এখন খালেদা জিয়া কী বলবেন? সরকার নয়, খালেদা জিয়া দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাই খালেদা জিয়াকে কোনভাবেই রেহাই দেয়া যায় না। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, বিচার কে করবে? সাধারণ মানুষরা সরকারে যেতে চায় না, গদির জন্য লড়াই করে না। বার্ন ইউনিটে কিভাবে দু’বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এক নেত্রী বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে চান, আরেক নেত্রী শুধু চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে চান। এটা হতে পারে না। সরকারী দলের আবদুল মতিন খসরু বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে সামরিক শাসন জারির ক্ষেত্র তৈরি হতো। খালেদা জিয়া তা-ই চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার অবরোধ-হরতাল জনগণ মানে না। মিডিয়া দু’দিন প্রচার না করলে খালেদা জিয়ার আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, গুলশানে খালেদা জিয়া আর লন্ডনে তারেক জিয়া মানুষ হত্যার জন্য দুটি কন্ট্রোলরুম খুলেছে। মিথ্যার বেসাতি করা খালেদা জিয়ার চরিত্র। নিক্সন চৌধুরীর ওয়াকআউট ॥ প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার জন্য ফ্লোর পান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, যার হুকুমে বোমাবাজি-সন্ত্রাস চলছে, মানুষ হত্যা চলছে- তাঁকে (খালেদা জিয়া) এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা টিভিতে দেখেছি খালেদা জিয়া অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই খালেদা জিয়াকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না এর প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করলাম। নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে আরও ৬/৭ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সংসদ থেকে প্রতীকী ওয়াকআউট করেন। জবাব দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রশ্নকর্তা ঠিকই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। আমাদের যে ব্যবস্থা আছে সেই অনুযায়ী আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, একটি দল আছে তারা কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে জানি না। তাদের মাঠে দেখা যায় না। কিছু গু-া-পা-া ভাড়া করে বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। ভাড়া করা গু-া-পা-া দিয়ে যদি দাবি আদায় হতো, তাহলে আমরা (রাজনীতিবিদ) কেন রাজনীতি করছি?
×