ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে হুতিদের উত্থান

খণ্ড বিখণ্ড হচ্ছে ইয়েমেন

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

খণ্ড বিখণ্ড হচ্ছে ইয়েমেন

মাত্র মাস কয়েক আগেও আমেরিকান কর্মকর্তারা বিপ্লবোত্তর আরব রাষ্ট্রগুলোর মডেল হিসেবে ইয়েমেনের নাম উল্লেখ করতেন। তাঁদের মতে সে দেশেই আলোচনার মাধ্যমে এক স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের কাছ থেকে এক নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়েছিল। এখন ইয়েমেনের রাজধানী ঘানায় কয়েকদিনের উপদলীয় লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট তাঁর বাসভবনে অবরুদ্ধ এমন এক পুতুল নেতায় পরিচিত হয়েছে। দেশটি এমনভাবে খণ্ড বিখণ্ড হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে হয়। যাতে ইরান ও আলকায়েদার জন্য আরেক সুবিধা হতে পারে। আলকায়েদার ইয়েমেনি শাখাই চলতি মাসে প্যারিস প্রথম সন্ত্রাসী হামলার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছিল। ইয়েমেনের সর্বশেষ সংকট একে এমন আরেকটি আরব দেশে পরিণত করতে পারে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছে। অথচ সেখানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দৃশ্যপটে যুক্তরাষ্ট্রের কোন শক্তিশালী অংশীদার থাকছে না । হুতি বিদ্রোহীরা এখন রাষ্ট্রটি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আল কায়েদার সঙ্গে যুদ্ধরত রয়েছে। হুতিরা ইরান এবং ইয়েমেনের প্রতিশোধস্পৃহ সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহেরও মিত্র। হুতিদের প্রাধান্য অর্জন এমনভাবে স্থানীয় সংঘাতের সূত্রপাত করতে পারে যাতে আল কায়েদার স্থানীয় শাখা আরও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে। এ শাখাটি বারবার যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানে। ইয়েমেনের নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট আবদুরাব্বু মনজুর হাদি এক দৃঢ় মার্কিন মিত্র কিন্তু তাঁর কোন অভ্যন্তরীণ সমর্থন নেই বললেই চলে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক এপ্রিল এ্যালে বলেন, ইয়েমেনি রাষ্ট্র সব সময়েই দুর্বল কিন্তু এখন অর্থনৈতিক ধসের প্রকৃত বিপদ রয়েছে। রাষ্ট্রটি এমনভাবে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে পড়তে পারে যার ফলে সেটি শাসন করা শেষ পর্যন্ত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। ওই গ্রুপ একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা সংঘাত মীমাংসার লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। হুতিরা দরিদ্র দেশটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করায় সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক বিভাজন গভীরতর হলো। দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই জিহাদীদের এক নিরাপদ আস্তানা। বুধবার হাদি হুতিদের রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া মেনে নিলে সর্বশেষ দফার লড়াইয়ের অবসান হয়েছে বলে মনে হলেও মূল সংকট ঘনীভূত হতেই থাকবে। বিশ্লেষকরা একথাই বলেন। বুধবারের চুক্তিতে হুতিদের কিছু দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হয়। সরকারী সংস্থাগুলোতে প্রতিনিধিত্বের অভাব ও কোন খসড়া সংবিধানের বিধানগুলো নিয়ে হুতিদের অভিযোগ ছিল। এ দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার বিনিময়ে হুতিরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও সানার অন্যান্য অংশ থেকে তাঁদের যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করতে এবং হাদির এক সহকারীকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়। হুতি বন্দুকধারীরা শনিবার ওই সহকারীকে অপহরণ করেছিল। যা হোক হুতিরাই যে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তা নিয়ে সামান্য সন্দেহই রয়েছে। তাঁরা রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে এসেছিল। হুতিরা দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসী হাদিকে প্রকাশ্যে অপমান করায় দক্ষিণাঞ্চলীয় বিদ্রোহীরা চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে দেশের প্রধান বন্দর এসেন এবং উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যবর্তী সীমান্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রকৃত অর্থেই বিচ্ছিন্নতাবাদের আশঙ্কা দেখা দিল সশস্ত্র উপজাতীয়রা তিনটি দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশে তেল রফতানির পথ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আর সৌদি আরব ইয়েমেনি সরকারকে সব সাহায্য দান তারা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে সরকার কার্যত নিঃস্ব এবং বেতন প্রদানে অসমর্থ হয়ে পড়েছে। সৌদি আরব হুতিদেরকে এর আঞ্চলিক বৈরী ইরানের অনুচর বলে দেখে থাকে। আরেকটি অশুভ লক্ষণ দেখা যায় হুতিরা রাজধানীর পূর্বে সারিব প্রদেশে তাদের সুন্নী ইসলামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে এক বড় রকমের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হয়। ইয়েমেনের তেল অবকাঠামোর অনেকাংশেই ওই প্রদেশে অবস্থিত। ওই লড়াই ইয়েমেনের সরকার ও অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। দেশটির অর্থনীতি তেলের ওপর খুবই নির্ভরশীল। ওয়াশিংটনের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সবার সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। এরূপ সহিংসতা বেড়ে গেলে তা ওবামা প্রশাসনের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম বড় অংশীদারের ওপর যে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়েও কর্মকর্তারা খুবই চিন্তিত। পেন্টাগনের গোয়েন্দা নীতি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জিং ভিকার্স বলেন, বিশ্লেষকরা এখনও হুতিদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি তা বোঝার চেষ্টা করেছেন। হুতিরা সাবেক প্রেসিডেন্ট আবু সালেহেরও মিত্র। তিনি এখনও ইয়েমেনের এক শক্তিশালী ব্যক্তি। ২০১১ সালের গোলযোগের সময় যাঁরা তাঁকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর। যদি হুতিরা ক্ষমতা সুসংহত করতে সমর্থ হয়, তবে সামরিক বাহিনী ও উপজাতীয়দের মধ্যে সালেহের যে সব অনুগত ব্যক্তি রয়েছে হুতিদের সঙ্গে তাদের রক্তক্ষয়ী লড়াই বেঁধে যেতে পারে বলে ইয়েমেনের অনেকেই মনে করেন। -নিউইয়র্ক টাইমস
×