ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমন

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমন

বাংলা অভিধানে ‘অবরোধ’ শব্দের অনেক অর্থের একটি আক্রমণ। দেশজুড়ে সেই আক্রমণ চলছে পৈশাচিকভাবে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, সহিংসতার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। ঘোষণা দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অবরোধ তথা চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়ে মানুষ হত্যা চলছে শুধু নয়, মানুষের নিরাপত্তাসহ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। যা কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন রাজনৈতিক দল বা সন্ত্রাসী দল করতে পারে না। সরকার উৎখাতের নামে, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে যেন যুদ্ধ চালাচ্ছে। যা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকা ও লন্ডন থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিকাশে এবং দেশকে ধ্বংস করে, অরাজকতা বাড়িয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, তা জনগণবিরোধী এবং দেশদ্রোহিতার নামান্তর। একটি শান্ত ও স্থিতিশীল দেশে আকস্মিকভাবে জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে পাকিস্তানী ধারায় জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কৌশল নিয়ে এই পৈশাচিকতা চালানো হচ্ছে। যে পৈশাচিকতা ১৯৭১ সালে বাংলার জনগণ রুখে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা ও নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দল যে অশুভ তৎপরতা চালিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত, সন্ত্রাস, প্রাণঘাতী করে তুলেছে তা বরদাশ্ত করা যায় না। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেনও ২০ দলের দংশনে সারাদেশ আজ বিধ্বস্ত। বিষধর সাপের মতো তারা দেশ ও মানুষকে দংশন করছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময়ের মতো একই কায়দায় এবারও মানুষ পুড়িয়ে মারছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক বিষয় সম্পর্কে অভিহিত। কিন্তু জনগণ তো চায় এসবের প্রতিকার। তারা তাঁকে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা প্রদান করেছে ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তিদানের মাধ্যমে আইনের শাসনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত, শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখা, জনজীবনের চাহিদা পূরণ ইত্যাকার কারণে। কিন্তু ২০১৪ সালে জনজীবনে যে শান্তি স্থিতি বিরাজ করছিল ২০১৫ সালে এসে তা বিনষ্ট করে দেশকে ধ্বংস করার চেষ্টাসহ জনজীবন নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে, তাদের অবিলম্বে আইনের হাতে সোপর্দ করাই প্রাথমিক কর্তব্য। পরিস্থিতি যেদিকে নিয়ে যেতে চাওয়া হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মূল অস্তিত্বে টান পড়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি ততই ভাড়াটে জঙ্গীদের দিয়ে সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছিল তাদেরই লোকজন জঙ্গীদের সহায়তা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য স্পষ্ট করে যে, দেশ থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল জরুরী। আর এ কাজটি যেহেতু দু’একদিনের নয়, তাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। সরকারের উচিত ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমন সেল’ গঠন করে তার আওতায় দেশকে জঙ্গীমুক্ত করার কর্মসূচী চালু করা। জনগণ বর্তমান অরাজকতার স্থায়ী বিহিত চায়। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবন আজ বিদ্যুতের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ঘরোয়া বা দাফতরিক যে কোন পর্যায়ে বিবিধ প্রয়োজনে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতা আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিদ্যুতহীনতার কথা কল্পনাও করা যায় না। বিদ্যুতের দাম বাড়লে এর ওপর নির্ভরশীল সকল উৎপাদন ব্যবস্থা, উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক নিয়ম। তবে এই সঙ্গত ও আনুপাতিক মূল্য বৃদ্ধির সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে কোন কোন অসাধু ব্যবসায়ী প্রায় সব পণ্য ও সেবার অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে নাগরিকদের সেই ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে। এটাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনায় প্রধান বিবেচনার দিক। উদর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো বিদ্যুত বিভাগ বহু দায় চাপিয়ে দেয় সিস্টেম লসের ওপর। বিদ্যুত চুরি, অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ প্রদান, মিটারের রিডিং বাড়ানো-কমানো- এসব তুঘলকি কা-ের জন্য বহুল ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয় ‘সিস্টেম লস’ নামক এক বিমূর্ত দানবের ওপর। এ কারণেই বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উপায় থাকে না। বিদ্যুত সংযোগ ও বিতরণ ব্যবস্থার দুর্নীতি কমিয়ে আনতে পারলেও বিদ্যুতের উন্নতি ঘটত। এতে দফায় দফায় দাম বাড়ানোর দরকার হতো না। বিগত ছয় বছরে দেশে বিদ্যুতের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। দেশের বহু জেলায় গ্রাম পর্যায়ে নতুন করে বিদ্যুত বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চোখে পড়ার মতোই বিদ্যুত সেক্টরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ৭৭টি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় রয়েছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গণশুনানির ব্যবস্থা গ্রহণের রীতি চালুর বিষয়টি ইতিবাচক। এ থেকে অনেক সুপারিশ ও পরামর্শ বের হয়ে আসছে। খোলাখুলি অভিমত গ্রহণের এই প্রক্রিয়া থেকে সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই সকল গঠনমূলক সুপারিশ ও সমালোচনাকে বিবেচনায় নিতে হবে। বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান একটি উপাদান জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমশ কমছে। ফলে তেল খাতে দেশের আমদানি ব্যয় অনেকাংশে কমে আসছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পক্ষে খুব সুযুক্তি মেলে না। বিশেষজ্ঞরাও সেরকমই মত দিয়েছেন। ভবিষ্যতের সুফল পাওয়ার আশায় গোটা বিদ্যুত ব্যবস্থাপনাকেই বিশেষ তদারকির আওতায় আনা দরকার। তেলের দাম ওঠা-নামার সঙ্গে বিদ্যুতের দামের সামঞ্জস্য সাধনের জন্য ‘ফুয়েল এ্যাডজাস্টমেন্ট কমপোনেন্ট’ নীতি রয়েছে উন্নত বিশ্বে। আমাদের সে জায়গায় যেতে হয়ত কিছুটা সময় লাগবে। বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে পিডিবির প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো লোকসান হবে বলে তারা জানিয়েছে। পিডিবি ভর্তুকি পায় না, সরকারের বাজেট বরাদ্দ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এভাবেই ফি বছর দেনা বাড়ছে। এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে এখনই বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে ভিন্ন উপায় খুঁজতে হবে।
×