ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশিষ্ট নাগরিকদের আহ্বান

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেন, মানুষকে নির্যাতন করে কোন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সহিংসতা ও মানুষ হত্যা বন্ধে অবরোধকারীদের প্রতিও আহ্বান জানান তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। এদিকে চলমান নৃশংসতা মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ বলে মনে করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। ‘নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধ কর, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখ’ সেøাগানে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বিশিষ্ট নাগরিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ও রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশের সভাপতি আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাংবাদিক আবেদ খান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ। জনগণের সব অধিকার আজ পদদলিত উল্লেখ করে আনিসুজ্জামান বলেন, সরকার ও বিরোধীপক্ষ উভয়ের কাছেই আমাদের দাবি, সংবিধানে বর্ণিত সাধারণ জনগণের সব অধিকার ফিরিয়ে দিন। আমাদের নিজস্ব জীবনযাপনের সুযোগ নিশ্চিত করুন। তিনি বলেন, মানুষকে নির্যাতন করে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বর্জন করে দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা সম্ভব নয়। আনিসুজ্জামান আরও বলেন, আজ সারাদেশে যে তা-ব চলছে, তাতে নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধা সবাই আক্রমণের শিকার। অসহায় অন্ধ মায়ের একমাত্র সন্তান পুড়ে মারা যাচ্ছে। আহত অবস্থায় কলেজছাত্রী হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। শ্রমিক রুটি রুজির তাগিদে বের হয়ে দুর্বৃত্তের আঘাতের শিকার হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করা জনসেবার পথ নয়, জনগণকে নির্যাতন করা গণ-আন্দোলনের পথ হতে পারে না বলেও মনে করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে মানবাধিকার নেত্রী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এ অবরোধ কার বিরুদ্ধে? যে কৃষক ফসলের ডালা রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তার বিরুদ্ধে? যে শ্রমিক জীবিকার অন্বেষণে বের হয়ে পেট্রোল বোমার আঘাতে ঝলসে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে, যে শিক্ষার্থী শিক্ষার তাগিদে রাস্তায় বের হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। নাকি আমাদের মতো পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে; যাদের রুটি রুজির তাগিতে প্রতিদিন বের হতে হয়? এর প্রতিটি প্রশ্নের জবাব যিনি অবরোধ ডাকছেন তাকে দিতে হবে। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমরা শুধু উদ্বিগ্নই নই, আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। আমরা এ সন্ত্রাস চাই না। আমরা স্বাভাবিকভাবে বাঁচার ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। তা সব মহল থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করলে, এমন কোন কাজ করা যাবে না যা মানুষের বিরুদ্ধে যায়। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে জনস্বার্থ হবে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত। সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, আপনারা আন্দোলনের নামে এমন ক্ষেত্র প্রস্তুত করবেন না যাতে জঙ্গীরা আবার হামলা চালানোর সুযোগ পায়। এতে জাতীয় সঙ্কট দেখা দেবে। সবাইকে মাসুল গুনতে হবে। সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, রাজনীতির বিকল্প সহিংসতা নয়। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। এ বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করার সময় এসেছে। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, এ্যাডভোকেট রানাদাশগুপ্ত, সঞ্জিব দ্রং প্রমুখ। চলমান এই নৃশংসতা মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ -সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ॥ চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় জননিরাপত্তা আতঙ্কজনকভাবে বিপন্ন হয়ে ওঠেছে বলে মনে করে সেক্টর কমান্ডার ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়। ফোরামের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুন হাবীব স্বাক্ষরিত বার্তায় বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, অব্যাহত অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে দেশের জননিরাপত্তা আতঙ্কজনকভাবে বিপন্ন হয়ে ওঠেছে। শ্রমজীবী মানুষ বিশেষত সাধারণ পথচারী দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন নির্মম পন্থায় হতাহত হচ্ছে। পেট্রোল বোমার আগুনে প্রতিনিয়ত নিরপরাধ নারী-শিশু, ছাত্র-ছাত্রী ও খেটে খাওয়া মানুষ আহত অথবা নিহত হচ্ছে। এমন ঝটিকা আক্রমণ চালানো হচ্ছে পুলিশ বাহিনীর ওপর। এ ধরনের সহিংসতা কখনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও, নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, সম্পদ ধ্বংস করা গণতান্ত্রিক সমাজে কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর রাজনীতি হবে দেশের গণমানুষের সমৃদ্ধি, উন্নত ও মানবিক গুণাবলিসমৃদ্ধ এবং জনকল্যাণের লক্ষ্যে নিবেদিত। কোন আন্দোলন কিংবা নিছক ক্ষমতার পালাবদলের জন্য সংবিধান বহির্ভূত কোন কার্যক্রম, সহিংতা, জনমনে ভীতি সৃষ্টি বা ধ্বংসাত্মক কাজ চালানোর অধিকার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নেই। ফোরাম মনে করে, চলমান এই নৃশংসতা মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুস্থ রাজনীতির ধারা পুনরুদ্ধারের স্বার্থে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ অবিলম্বে সকল সহিংসতার অবসান কামনা করে। আইনানুগ সকল মহলের আইনসিদ্ধ গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে প্রতিটি মহলকে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা প্রদর্শনের অনুরোধ জানায়। নাশকতার দায়ভার খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে- পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ॥ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষধের মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে বিএনপি-জামাত সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য একমাত্র বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াই দায়ী। এর দায়ভার খালেদা জিয়া কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারী, রাষ্ট্রীয় ও জনসাধারণের সম্পদে অগ্নি সংযোগকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় বক্তারা সরকারের উদ্দেশে বলেন, যারা বাসে বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সংগঠনের নেতারা অগ্নি সংযোগ করে মানুষ পুড়িয়ে মারা, দেশের উন্নয়ন-অর্থনীতিকে ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ঘণ্টাব্যাপী চলা এ মানববন্ধনে হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে সংগঠনের নেতারা ছিলেন সোচ্চার। হরতাল অবরোধের নামে দেশের মানুষকে একটি রাজনৈতিক দল জিম্মি করে রেখেছে বলেও তাদের অভিযোগ। ওই মানববন্ধনে বিভিন্ন পেশার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সংগঠনের সভাপতি বিচারপতি মেজবাহ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা কামরুল হাসান খান, কৃষিবিদ মোবারক আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, ডাঃ জালাল উদ্দীন চৌধুরী, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক, সংগঠনের তথ্য গবেষণা সম্পাদক ও সাংবাদিক জয়ন্ত আচার্য, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জু, অধ্যাপক নাজমা শাহিন, অধ্যক্ষ মোঃ আলী মানিক প্রমুখ ।
×