ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জুনের মধ্যেই শেষ হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ ॥ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ

পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয় ॥ দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামোর কাজ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয় ॥ দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামোর কাজ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা সেতুর কাজ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতু, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, তদারকি ও পরিবেশ কার্যক্রমসহ অন্যান্য অংশ মিলে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৪ দশমিক ১২ শতাংশ কাজ। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ, এর পরেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শেষ হবে পুনর্বাসনের কাজও। নতুন করে পদ্মা সেতু এলাকায় একটি জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শীঘ্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পদ্মা সেতুর সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং অর্জিত ফল শীর্ষক এক প্রতিবেদনে অগ্রগতির এ চিত্র উঠে এসেছে। পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির বিষয়টি সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিষয় হিসেবে এর অগ্রগতি খতিয়ে দেখছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ বিষয়ে সংস্থাটির সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি করতে হলে মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর খাতভিত্তিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মূল সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নবেম্বর মাসে। এ পর্যন্ত এক শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৮ সালের নবেম্বরের মধ্যে এ কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারিত। মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩টি ড্রেজার, ৩টি ফ্লোটিং ক্রেন, ২টি টাগবোট এবং একটি এঙ্কর বোট মাওয়া সাইটে এনেছে। সেতুর সেন্টার লাইন বরাবর নেভিগেশন চ্যানেল ড্রেজিং শুরু হয়েছে। মূল সেতুর মাটি পরীক্ষা এবং সার্ভের কাজ গত বছরের ১ নবেম্বর শুরু হয়েছে, সেটি এখনও চলছে। ট্রেইল বা টেস্ট পাইলের স্টিল ফেব্রিকেশনের কাজ চীনের ন্যানটনের ওয়ার্কশপে চলছে। ঠিকাদারের নিজস্ব স্থাপনা যেমন, অফিস ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কসেশড, লেবার শেড এবং হারবারের (জেটি) নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয় জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ অংশ। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অংশের বাস্তবায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশ। এখনও নির্মাণ কাজ অব্যাহত। মাওয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণ অংশের কাজ শুরু হয় গত বছরের জানুয়ারি মাসে। বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত। গত বছরের ডিসেম্বর বাস্তবায়ন হয়েছে ২২ শতাংশ। নির্মাণ কাজ চলছে। সার্ভিস এরিয়া-২ এর গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ১৫ শতাংশ। এখনও কাজ চলছে। নদী শাসন কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের নবেম্বরে। ২০১৮ সালের নবেম্বরে এ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারিত। ইতোমধ্যেই নদী শাসন কাজ করতে তিনটি ড্রেজারের প্রথম চালান গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর চীন থেকে সাইটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুতই। রিসেটেলমেন্ট এ্যাকশন প্লান (র‌্যাপ-১), র‌্যাপ-টু, র‌্যাপ-থ্রি, র‌্যাপ-ফোর এবং র‌্যাপ-ফাইভসহ পুনর্বাসন কাজে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলাদি ইত্যাদি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৮১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পুনর্বাসন সাইটগুলোতে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুই হাজার ৫৯২টি প্লটের মধ্যে ৯৬৭টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি প্লটের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২’র নির্মাণ কাজ তদারকির কাজ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এটি শুরু হয় ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে। মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের তদারকি অংশে বলা হয়েছে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের ডিজাইন রিভিউ শুরু হয়েছে। শুধু অবকাঠমো নির্মাণই নয় পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে সমান তালে। পদ্মা সেতুর উভয়প্রান্তে পুনর্বাসন ও সার্ভিস এরিয়া এলাকায় বনায়নের জন্য গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার ১৫০টি গাছের চারা লাগানো হয়েছে। বায়োডাইভারসিটি বেজলাইন সার্ভে এবং প্রিপারিং মনিটরিং প্ল্যানসহ এ সংক্রান্ত কাজের জন্য দাখিলকৃত আরএফপি মূল্যায়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। পদ্মা সেতু এলাকায় জাদুঘর স্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ একটি ধারণাপত্র দাখিল করেছে। এ প্রেক্ষিতে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অগ্রগতি বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, মূল সেতু নির্মাণসহ প্রধান কার্যক্রমগুলো ধরলে এখন পর্যন্ত সেতুর কাজ ১৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমানে যেভাবে কাজ এগিয়ে চলছে এতে আমরা আশাবাদী, ২০১৮ সালের মধ্যেই এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। বর্তমানে আমাদের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে চলছে। এ অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট।
×